পথিক, খুব একটা ব্যস্ত না থাকলে আমার সাথে ব্যায় করার জন্যে কিছুটা সময় চাইবো। কিছুক্ষণের জন্যে আপনাকে অন্য এক বাস্তবতায় নিয়ে যাব। নিয়ে যাব এমন এক জায়গায় যেখানে আপনি কোনদিন পা রাখেননি। অথবা পা রাখবেন ভাবতেও পারেননি। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে কিছুক্ষণের জন্যে বাকি সব ভাবনা হতে নিজকে মুক্ত করুন। এবার চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন...
আপনি হাঁটছেন আপনার চীর পরিচিত পথ ধরে। কিছু একটা কিনতে বাজারে যাচ্ছেন। অথবা বন্ধুকে কথা দিয়েছেন দিনটা তার সাথে কাটানোর, সেদিকেই রওয়ানা দিয়েছেন। রাস্তার মোড়েই পুলিশের গাড়ি। এ আর এমনকি সমস্যা! পুলিশের অধিকার আছে যেখানে সেখানে গাড়ি থামানোর। কিন্তু আপনাকে অবাক করে দিয়ে পুলিশ আপনার সামনেই থামলো। টু শব্দ না করে পুলিশের জনৈক এস আই নারায়ণ চন্দ্র শীল আপনাকে হ্যান্ড-কাফ লাগিয়ে এক ধাক্কায় গাড়িতে উঠিয়ে ফেললো। এ নিয়ে কোথাও কোন চাঞ্চল্য দেখা গেলনা। আশপাশের কেউ চোখ তুলেও তাকালোনা। অথচ বাসায় আপনার মা হয়ত অপেক্ষায় আছে। বাজার হতে কিছু একটা কিনে আনলে চুলায় রান্না বসাবেন। বন্ধু অপেক্ষায় আছে দিনটা আপনার সাথে কাটাবে বলে। অথবা সন্তান পথ চেয়ে আছে তার প্রিয় খেলনটার আশায়...
চোখ আটকে পুলিশ আপনাকে কোথায় নিয়ে গেল তার কোন হদিস করতে পারলেননা। আপনি শুধু অবাক হচ্ছেন আর ভাবছেন, ঘটনা কি! আমি কোথায়!! আমাকে কেন!!!
রাত গভীর হওয়ার সাথে থানার ওসি শংকর কুমার দাস আপনাকে নিয়ে রওয়ানা দিল কোথাও। তখনো আপনার চোখা বাঁধা। কেউ কিছু বলছেনা কেন এই গ্রেফতার। আপনাকে নিয়ে নারায়ণ ও শংকর পুলিশ কোন এক বধ্যভূমিতে নিয়ে গেল। এবং মধ্যরাতের স্তব্ধতা কাঁপিয়ে পরপর ছয়টা গুলি আপনার মস্তক, বুক এবং পেটের ভেতর ঢুকিয়ে দিল। আপনি চলে যাচ্ছেন পরপারে। নারায়ণ আর শংকর আপনার রক্তাক্ত শরীরের উপর দুটো লাথি মেরে অট্টহাসি হাসছে। মুখে থুথু মেরে ডাস্টবিনের ময়লার মত আপনাকে রেখে গেল মহাকালের কোন এক বাঁকে। এবার চোখ খুলুন। এবং ফিরে আসুন বাস্তবতায়।
ঠিক এমনই একটা ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। পুলিশ জয়নাল নামের একজনকে ঠিক আপনার মতই উঠিয়ে নিয়েছিল। এবং সকালে পাওয়া গেল তার লাশ। মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে নারায়ণ শংকরদের একজন হত্যা করেছে তাকে।
এখানেই শেষ নয় জয়নালের কাহিনী। মামলায় হাজিরা দেওয়ার তারিখ হয়েছে তার। পুলিশ তার মৃত্যুর রেকর্ড নথি করতে আদালতে হাজির হয়েছে। দৃশ্যপটে হাজির শংকর ও নারায়ণ। তাদের চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া হয়ে গেল। জয়নালও হাজির সেখানে!
ঘটনাচক্রে বেরিয়ে এলো যাকে ধরে নিয়ে তারা খুন করেছে সেও জয়নাল। তবে আসামী জয়নাল না। সে দশম শ্রেণীর ছাত্র। পড়ত বায়েজিদে অবস্থিত ভোকেশনাল অ্যান্ড টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটে। একটা মায়ের সন্তানকে ওরা অট্টহাসিতে বিদায় করেছে। উল্লাস করেছে তার লাশ নিয়ে। হয়ত থানায় ফিরে গল্প করেছে মৃতের শেষ মিনিটগুলো। বিশেষ পুরস্কার পাওয়ার তালিকায় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ জমা করেছে।
আপনি রক্ত-মাংসের মানুষ হলে এসবের প্রতিবাদ করবেন। আর দলকানো প্রভুভক্ত ভৃত্য হয়ে থাকলে বিভিন্ন অজুহাতে শংকর আর নারায়ণদের পশুত্বকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করবেন।
আবার আসুন বিগার পিকচারটা দেখার চেষ্টা করি। প্রশ্ন উঠবে, এ সাহস কোত্থেকে পায় আমাদের পুলিশ? জনগণের পয়সায় পালিত এসব চণ্ডালের দল কোন সাহসে আমাকে আপনাকে বিনা কারণে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আইনের কোন ধারায় রাতের অন্ধকার খুন করে। উত্তর খুঁজতে আপনাকে খুব একটা দূরে যেতে হবেনা। নিজের কাছেই আছে আপনার প্রশ্নের উত্তর। এর জন্যে দায়ী আপনি নিজে। কারণ বিনা ভোটের নির্বাচন, জবাবদিহিতা-হীন সরকার আর রাষ্ট্রীয় লুটপাটের সিন্ডিকেটকে আপনি মেনে নিয়েছেন। এবং নিজেও ধান্ধা করছেন এই সিন্ডিকেটের উচ্ছিষ্ট খাওয়ার জন্যে।
সঙ্গত কারণেই আপনাকে অথবা আপনার বাবা, ভাই, সন্তানকে যখন শংকর নারায়ণরা উঠিয়ে নেয়, কেউ ফিরেও তাকায় না। পুলিশের ইয়াবা কাহিনীর চাপায় আপনি সমাহিত হয়ে যান। একটা কুকুরও ঘেউ ঘেউ করেনা আপনার মৃত্যুতে। কারণ মৃত্যুর স্ক্রিপ্ট আপনি নিজেই লিখে গেছেন। কারণ নিজ দেশে আপনি কুকুর বিড়ালের চাইতেও অধম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অর্গাজম কেড়ে নিয়েছে আপনার মনুষ্যত্ব-বোধ। আওয়ামী লীগ নামের যে দানবকে আপনি দেবতা মানছেন, যে পৈচাশিক শক্তিকে জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন এই দানব এই শক্তি বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। আপনাকে খাবে। আপনার সন্তানকে বর্জ্য পদার্থের মত ছুড়ে ফেলবে আস্তাকুড়ে।