জন্মভূমির ভাল কিছু নিয়ে লেখার ইচ্ছাটা অনেকদিনের। তাই পত্রিকার পাতা ঘাঁটি প্রতিদিন। প্রথম পাতা সাধারণত চটকদার খবরের পাতা। ওখানে খারাপ খবরই প্রধান্য পায়। তাই হতাশ হয়ে ভেতরের পাতা উল্টাই। সন্ধান করি গ্রাম-গঞ্জের ভাল কোন খবর। না, কোথাও ভাল কিছু নেই। হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষণ আর লুটপাটের কাহিনীতে সয়লাব। শেখ পরিবারের কারও জন্মদিন, কারও মৃত্যু দিবস, একজন পাঠক হিসাবে এসব আমার কাছে কোন খবর না। সস্তা তেলবাজী মাত্র। তাই এসব পড়ার প্রশ্নই আসেনা। দেশ এখন সিঙ্গাপুর... জাপানকে ধরে ফেলা সময়ের ব্যপার মাত্র... হাসান মাহমুদ আর হানিফ গংদের এজাতীয় উন্নতির খবর এখন গিবত হিসাবে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এসব গীবতে যারা অংশ নেয় তাদের উদ্দেশ্য, বিধেয় দুটোই পরিস্কার। ক্ষমতার হালুয়া রুটির উচ্ছিষ্ট খাওয়া।
একজন অনির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যখন হাজী মোহম্মদ মহসীন সেজে দয়ার ভাণ্ডার খুলে বসেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় চাটুকারদের নিয়ে দয়ার হাট বসান, আমার মাথায় প্রশ্ন জাগে; প্রথমত, এই লোক ভোট ডাকাত। দ্বিতীয়ত; তেনার দয়ার ভাণ্ডারের উৎস কি? ক'বছর আগে একজন সাংসদ অথবা পৌর মেয়র ও তার বংশধরেরা পেটে-ভাতের লড়াই করতে গিয়ে হেন অপকর্ম নেই যার সাথে জড়াতো না, তারাই আজ দয়ার সাগর। পেন্ডেমিক উপেক্ষা করে জনগণের সেবায় এ মাথা ও মাথা ঘুরে বেড়ান। সাহায্যের বিশাল এক বহর নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ান! প্রশ্ন একটাই, মহাশোয়দের বদন্যোতার উৎস কি? আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন কি ক্ষমতার চেয়ারে বসে? এখানেই আসে প্রদীপ কুমার দাসদের প্রসংগ।
নিজের ভিটে-মাটি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পৈত্রিক সম্পত্তি বলি দিয়ে কেন একজন বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধি হতে চায় তার উত্তর এখন আর গবেষণার বিষয় নয়। এসব এখন নেংটা সত্য। বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক ক্ষমতা মানে আকাশ্চুম্বি রিটার্নের নিরাপদ বিনিয়োগ। লটারির মত এ বিনিয়োগ একবার লাগানো গেলে অন্তত দশ প্রজন্মের অর্থিক নিশ্চয়তা দিয়েই কথিত জনপ্রতিনিধি ইহলোক ত্যাগ করতে পারেন। এ নিশ্চয়তা দিতে গিয়ে কথিত জনপ্রতিনিধিরা সরকারী কোষাগার লুণ্ঠনের পাশাপাশি খুন, গুম, ধর্ষণের মত অপকর্মগুলো করতে সামান্যতম দ্বিধা করেন না। এ কাজে তাদের পাশে থাকে বিশাল এক নেটওয়ার্ক। এর সহায়ক শক্তি হিসাবে আবির্ভুত হয় দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা। একজন পুলিশ ও বিচারক এ নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য।
প্রদীপ কুমার দাস একাই ২০০ জনের উপর মানুষ খুন করেছেন। সম্পদের পাহাড় ডিঙ্গিয়েছেন। বিনিময়ে দেশের তথকথিত প্রধানমন্ত্রীর কাছ হতে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পুলিশের পুরস্কার। চেইন অব কমান্ড অপরাধের কান টানলে নিশ্চয় চলে আসবে এসপি, ডিআইজি, আইজি, স্বরাষ্ট্র সহ প্রধানমন্ত্রীর মাথা। এসব আয়-রোজগারের জন্যেই রাজনীতিবদদের ভোটের বাক্স লুট করতে হয়। পুলিশকে ক্রসফায়ারের নাটক সাজাতে হয়। প্রশ্ন আসে, প্রদীপ কুমার দাসদের সংখ্যা কি দেশে হাত গোনা? না, মোটেও না। এদের সংখ্যা এখন হাত দিয়ে গোনা যায়না। গুনতে প্রোগামিং লাগে। দেশের প্রতিটা জন ও প্রশাসন প্রতিনিধি এখন প্রদীপ কুমার দাস। ওরা সবাই সরকারী কোষাগার লুণ্ঠনের ম্যারাথনে আছে। ধরা পরলেই ওদের থলের বেড়াল হতে বেরিয়ে পরছে অজানা সব লৌমহর্ষক কাহিনী। যারা ধরা পরছেন না তাদের কি কোন কাহিনী নেই? প্রতিটা জনপ্রতিনিধির লুঙ্গিধরে টান দিন...আরব্য উপন্যাসের অনেক অজানা কাহিনী শুনতে পাবেন।
আজ পড়লাম আরও ভয়াবহ এক খবর। গাইবান্ধার এক হাসপাতালে বকশিস না দেয়ায় নার্স অক্সিজেনের মাস্ক খুলে হত্যা করেছে এক শিশুকে। এই বকশিস ও খুন কি প্রদীপ কুমার দাসের হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজী ও ক্রসফায়ারের ছোট ভাই নয়?
দেশের ভাল খবর নিয়ে ভালকিছু লেখার ইচ্ছাটা বোধহয় অনেকদিনের জন্যে উঠিয়ে রাখতে হবে।
খারাপের শুরুটা আমার জন্যে সেই ১৯৭৩ সালে। ঢাকার নিউ মার্কেরটের ব্যাংক হতে ষ্টাইপেন্ডের প্রথম কিস্তি উঠিয়ে বের হতেই দুজন দুদিক হতে ছুরি হাতে হাজির! ওরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। চেতনার ঠিকাদার। আমার ষ্টাইপেন্ডের টাকায় ওদেরও নাকি হক আছে!