নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন সত্যটা ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করতে চাইছেন না। ফলাফল পক্ষে নেয়ার জন্যে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন। লোয়ার কোর্টে হেরে গেলে মামলা সুপ্রীমকোর্টে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এবং আশাকরছেন তার টার্মে নিযুক্ত তিন বিচারকের সহায়তায় সেখানে জিতে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী আইন যে কোন প্রার্থীকে ফলাফল আদলতে কনটেষ্ট করার অধিকার দেয়। এটা ভোটে দাঁড়ানো অথবা ভোট দেয়ার মতই গণতান্ত্রিক অধিকার। কেবল প্রার্থী হিসাবেই নন, একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এ অধিকার রাখেন। তবে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সমস্যা অন্য জায়গায়।
এ ধরণের মামলা চালাতে গেলে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে চালাতে পারবেন না, বরং চালাতে হবে একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে। হায়ার করতে হবে দেশ সেরা উকিলদের। নিজ পকেট হতে খরচ করতে হবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী ফান্ডের অবস্থা এ মুহূর্তে মুমুর্ষ রুগীর মত। তাই নিজ সমর্থকদের কাছে নতুন করে চাঁদা চাইতে শুরু করেছেন। ট্রাম্পের লয়াল সমর্থকদের কেউ কেউ কনট্রিবিউট করলেও কর্পোরেট আমেরিকার পক্ষ হতে ১ সেন্টসও কন্ট্রিবিউশন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আমেরিকান বেনিয়ারা মরা গরুর পক্ষের বিনিয়োগ করেনা। ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্ষরিক অর্থে এখন মরা গরু। এই গরু আগামী ২০শে জানুয়ারী পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিশ্চয় ভাগাড়ে ফেলে আসবে।
ছাগলের ৩নং বাচ্চা বনে অনেক বাংলাদেশি ট্রাম্পের পক্ষে সোস্যাল মিডিয়াতে সোরগোল করছেন। তা আপনারা করতেই পারেন। তবে এমনটা করার আগে অনুরোধ করবো ইংরেজির জ্ঞান কিছুটা বাড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পরিবারের অতীতের উপর পড়াশুনা করে নিতে।
ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখার প্রথম প্রহর হতে আমি এই পরিবারের কাহিনী অনুসরণ করে আসছি। ট্রাম্পের পিতা ফ্রেড ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক শহরে নিজের রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রসার ঘটান। আবাসিক হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন, গলফকোর্স সহ এ খাতে আরও অনেক জায়গায় বিনিয়োগ করেন। এবং এক সময় এ বিনিয়োগ আমেরিকার সীমানা অতিক্রম করে ছড়িয়ে দেন পৃথিবীর দেশে দেশে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বড় হয়ে যোগ দেন পিতার ব্যবসায়। পিতা-পুত্র মিলে নিজদের তৈরী হোটেলে অলিখিত আইন করেন, কোন আফ্রিকান আমেরিকানকে গ্রাহক হিসাবে জায়গা দেয়া হবেনা। আইনী মোকাবেলায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার জরিমানা গুনতে বাধ্য হন এ ধরণের রেসিয়ালি মটিভেটেড কার্যক্রমের কারণে।
রাজনীতিতে আসার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের এক্সপোজার খুঁজে পান এনবিসি টিভির রিয়ালিটি শো 'এপ্রেনটিস' ও তার নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটির ট্রাম্প হোটেলে বিভিন্ন সুন্দরী প্রতিযোগীতার মাঝে। যার একটা ছিল জুনিয়র বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগীতা। এখানেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে অনেক ১৩/১৪ বছররের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীরা। প্রতিযোগীতা চলাকালীন কিশোরীদের চেঞ্জ রুমে ঢুকে নগ্ন, অর্ধ-নগ্ন কিশোরিদের গায়ে হাত দিতেন।
এই সেই ট্রাম্প যার বিরুদ্ধে নারী ধর্ষণ সহ হরেক রকম যৌণ নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে শতাধিক মহিলা। এ নিয়ে একাধিক মামলা ঝুলছে নিউ ইয়র্ক কোর্টে।
এই সেই ট্রাম্প যে তার সর্বশেষ সন্তানের জন্ম সেলিব্রেট করেছে হোটেলে পতিতা ভাড়া করে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তাদের মুখ বন্ধ রাখার জন্যে নিজের নির্বাচনী তহবিল হতে কয়েক লাখ ডলার খরচ করেছেন। উল্লেখ্য, এ তহবিলের অর্থ জোগানদাতা আমেরিকান জনগন।
এই সেই ট্রাম্প, যিনি বাংলাদেশি ব্যবসার কায়াদায় ভুয়া কলেজ বানিয়ে সেখান হতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিয়ে স্যাটেল করেছেন একাধিক মামলা।
এই সেই ট্রাম্প যিনি ক্ষমতার প্রথম প্রহরে কেবল মুসলমান হওয়ার কারণে দেশটায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেনমুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের।
তাই বাংলাদেশি ছাগলের ৩নং বাচ্চাদের অনুরোধ করবো, ইতিহাসের পাতা ঘাটুন। আর এসব ঘাটার মত যথেষ্ট জ্ঞান ও সময় না থাকলে এ নিয়ে মন্তব্য করা হতে বিরত থাকুন।
এ মুহূর্তের জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে, কি হবে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০শে জানুয়ারীর আগে হোয়াইট হাউস না ছাড়েন। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারও জানা নেই। কারণ অতীতে আমেরিকা এ পথে হাটেনি। এ নিয়ে খোদ আমেরিকায়ও জল্পনা কল্পনা চলছে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়ুক অথবা না ছাড়ুক, ২০শে জানুয়ারী জোসেফ বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিবেনা। এবং শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন সুপ্রীমকোর্টে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। হয়ত হোয়াইট হাউসের বাইরে অন্য কোথাও জো বাইডেন শুরু করেবন নিজের প্রেসিডেন্সি। আজ হোক, কাল হোক ট্রাম্পকে বিদায় নিতেই হবে। কোন আদালতই জনগণের ম্যাণ্ডেটকে ছুড়ে ফেলবেনা, এটাই আমেরিকার গণতন্ত্র।
নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে ট্রাম্পের গো আগের প্রসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্ম নিয়ে তার গো'র কথাই মনে করিয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেয়ার পর পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন ওবামার প্রেসিডেন্সি বৈধ না, কারণ তিনি এ দেশে জন্ম নেননি। এই তর্ক তিনি এতদূর নিয়ে যান যার কারণে প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজের বার্থ সার্টিফিকেট মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করতে বাধ্য হন। ট্রাম্প সে সার্টিফিকেটও জাল বলে বাতিল করে দেন। এ ধরণের ভূয়া ও বানোয়াট অভিযোগের একটাই ছিল কারণ; একজন হাফ আফ্রিকান-আমেরিকানকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে হজম করার মত উদর ছিলনা তার শরীরে।
ট্রাম্পের বন্ধু রাশিয়ার পুতিন, উত্তর কোরিয়ার কিম জুং উন, তুরস্কের এরদোয়ান, সৌদি আরবের মোহম্মদ বিন সালমান। তার এই বন্ধু তালিকাই তার চরিত্রের বাকিটা উন্মোচন করে দেয়। যেখানে গণতন্ত্র নেই সেখানেই ট্রাম্পের বন্ধুত্ব। তিনি নিজকে সেভাবেই তৈরী করা শুরু করেছিলেন। ভাবতে শুরু করেছিলেন, আমেরিকার ক্ষমতা তার পৈত্রিক সম্পত্তি। নিজদের চেলা-চামুন্ডাদের মাঝে এমন একটা ধারণা তৈরী করছিলেন যা তাকে দেশটার সংবিধান সংশোধন করে তৃতীয় টার্মে প্রেসিডেন্ট হওয়ার বৈধতা দিবে। তা আর হয়নি। হবেও না। আমেরিকা আমেরিকা হিসাবেই পৃথিবীতে টিকে থাকবে। ট্রাম্প শাসনের ৪ বছর দেশটার ইতিহাসবিদরা কালো অধ্যায় হিসাবেই আখ্যায়িত করবেন। এবং হাজার বছর ধরে স্মরণ করবে কি করে একজন অযোগ্য, অপদার্থ, চরিত্রহীন, বর্ণবাদী মানুষ পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী চেয়ারটায় বসতে সক্ষম হয়েছিল।