ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছে ২০শে জানুয়ারী দুপুর ১২টার পর জোযেফ বাইডেন আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। একই দিন দুপুর ১২টা ১ মিনিটে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বর্তমান চাকরি হারিয়ে হতে যাচ্ছেন আমেরিকার ৩৩ কোটি সাধারণ নাগরিকদের একজন। একই সাথে হারাতে যাচ্ছেন ৪ বছর ধরে ভোগকরা দেশটার চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের সুবিধা। এ সুবিধা হারানোর চিত্রিটা ফুটে উঠবে বিভিন্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে। প্রেসিডেন্ট হিসাবে এসব মামলা হতে অব্যাহতি না পেলেও বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে থাকতে সক্ষম ছিলেন। ট্রাম্প সাম্রাজ্যের একসময়ের কেন্দ্র নিউ ইয়র্ক শহরে চলমান একাধিক মামলা নতুন করে গতি পাবে রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে। একনজরে দেখা যাক মামলাগুলোর সম্ভাব্য মতিগতিঃ
১) নিউ ইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বনাম ডোনাল্ড ট্রাম্প;
এই মামলার সূত্রপাত ট্রাম্প সাম্রাজের একসময়ের উকিল মাইকেল কোয়েনের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে। পর্ণ তারকা ষ্টর্মি ড্যানিয়েলের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শারীরিক সম্পর্ক গোপন রাখার জন্যে মাইকেল কোয়েনের মাধ্যমে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিল ট্রাম্প অর্গেনাইজেশন। এবং পেমেন্ট ছিল চেকের মাধ্যমে। অভিযোগ উঠছে, এ অর্থ খরচ করা হয়েছে পাবলিক তহবিল হতে।
২) ম্যানহাটন ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী সাইরাস রবার্টস ভ্যন্স বনাম ডোনাল্ড ট্রাম্পঃ
এই মামলার গ্রাউন্ড দাঁড়ানো করা হয়েছে ট্রাম্প অর্গেনাইজেশনের অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। যার অন্যতম ইন্সুর্যান্স ও ট্যাক্স জালিয়াতি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংক লোন ও আয় গোপন করার মাধ্যমে ট্যাক্স রেয়াতি নেয়ার মত অপরাধ।
৩) নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের এটর্নী জেনারেল লাটিসিয়া জেমস বনাম ট্রাম্প সাম্রাজ্যঃ
এই মামলা মূলত ট্রাম্প পরিবারের রিয়েল এস্টেইট ব্যবসাকে ঘিরে। সম্পত্তি ক্রয় ও বিক্রয়ে যেসব অনিয়মের অভিযোগ এনেছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন তা তদন্ত পূর্বক অনেক বিস্ময়কর তথ্য পেয়েছে এজি অফিস। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাকে বিচারের আওতায় আনা ছিল অসম্ভব। সন্দেহ নেই ২০শে জানুয়ারীর পর মিস জেমস নতুনকরে গতি দেবেন থেমে যাওয়া এ মামলায়। যার অন্যতম হবে, ফুটবল টীম বাফেলো বিলস কেনার কলংকিত ব্যর্থ চেষ্টা। মিস জেমস ইতিমধ্যে ট্রাম্প বাণিজের গেল ১০ বছরের ট্যাক্স রিটার্ণ তলব করেছেন। এসব রিটার্ন প্রকাশ পেলে ট্রাম্প ও তার পরিবারের বাকি সদস্যদের অনেক কালো কাহিনী বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের উকিল মাইকেল কোয়েন।
৪) একাধিক মহিলা বনাম ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পঃ
ইতিমধ্যে একধিক মহিলা অভিযোগ করেছেন ৭০'এর দশকে ট্রাম্প কর্তৃক যৌণ নির্যাতিত হওয়ার। কলামিষ্ট E. Jean Carroll একধাপ এগিয়ে সরাসরি অভিযোগ করেছেন ২০ বছর আগে নিউ ইয়র্কের এক ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে ধর্ষিত হওয়ার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুরোধে দেশটার বিচার বিভাগ এতদিন আটকে রেখেছিল মিস ক্যারোলের অভিযোগ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কোন এক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলে গেলে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটবে। এবং লম্বা সময়ের জন্যে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের জেলে সময় কাটাতে বাধ্য হবেন। রাজনৈতিক পণ্ডিতদের অনেকে আশংকা প্রকাশ করছেন এসব ঝামেলা হতে দূরে থাকার জন্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নিজের পক্ষে নেয়ার জন্যে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকে ভবিষৎবানী করছেন, হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে জনাব ট্রাম্প নিজকে নিজে ক্ষমা করে যাবেন। তার জন্যে তাকে ২০শে জানুয়ারীর অত্যন্ত একদিন আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
আমেরিকান রাজনৈতিক ক্ষমতার এক কলংকময় অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে আগামী জানুয়ারী মাসে। ২১শে জানুয়ারীতে হতে গোটা মার্কিন জাতি জানতে শুরু করবে হোয়াইট হাউসে বসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সন্তানরা নিজেদের পকেট ভারী কারার লক্ষ্যে কতটা ক্ষমতার অপব্যবহারের করেছিলেন।