ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে ৬ই জানুয়ারী কংগ্রেস ভবন আক্রমনের ব্যপকতা। ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে রাগ ও আবেগের বর্শবর্তী হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাগরেদরা সেদিন এ আক্রমণ চালায়নি। বরং তা ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত। পরিকল্পনার উদ্যোক্তা ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার ছেলে ডন জুনিয়র ও ব্যক্তিগত আইনজীবি রুলডফ জুলিয়ানী। এবং তা ছড়ানো হয় সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। টার্গেট ছিল কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের দখল নিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে দিয়ে ভোটের ফলাফল উলটে ফেলা। কংগ্রেস বাধা দিলে খুন করার পরিকল্পনা ছিল স্পীকার ন্যান্সি পালোসিকে। শেষ মুহূর্তে হোয়াইট হাউস হতে সন্ত্রাষীদের কাছে খবর আসে ভাইস প্রেসিডেন্ট সার্টিফাই করতে যাচ্ছেন নভেম্বর নির্বাচলের ফলাফল। মুহূর্তে বদলে যায় সন্ত্রাষীদের মুড। তাদের মূল টার্গেট হয়ে দাড়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যান্স। চারদিকে দাবি উঠে, প্যান্সকে ফাঁসিতে ঝুলাও। ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের বাইরে ক'জন মিলে অস্থায়ী ফাঁসির মঞ্চও তৈরী করে রাখে।
কংগ্রেস সদ্যসরা বিপদ আঁচ করতে পেরে জরুরি সাহায্যের চেয়ে ফোন করতে শুরু করেন ন্যাশনাল গার্ড রিইনফোর্সমেন্টের জন্যে। ন্যাশনাল গার্ডদের হয়ত আগ হতেই ইশারা দেয়া ছিল জরুরি ভিত্তিতে একশ্যানে না যাওয়ার জন্যে। ওরা যায়নি। মবদের সাথে ডিসি পুলিশ বাহিনীর সম্পৃক্ততার খবরও খোলাসা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৭জন পুলিশকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের দুজনকে ইতিমধ্যে চাকরি হতে বহিস্কার করা হয়েছে। একজন পুলিশকে দেখা গেছে মাথায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাগা ক্যাপ লাগিয়ে সন্ত্রাষীদের জন্যে কংগ্রেসের দরজা খুলে দিতে। অন্য একজনকে পাওয়া গেছে উন্মাদ অনুপ্রবেশকারীদের সাথে সেলফি তুলতে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০শে জানুয়ারী স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় বিদায় নিচ্ছেন। হাউস ২য় বারের জন্যে তাকে ইম্পিচ করলে তিনি অটোমেটিক ভবিষতে কোন সরকারী পদে আসীন হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ট্রাম্পের একাউন্ট অকার্যকর করে তাকে বাইরের দুনিয়া হতে আলাদা করা হয়েছে। অনেকেই আশংকা প্রকাশ করছেন, এ হচ্ছে বড় কোন ঝড়ের আগে ক্ষণিকের বিরতি।
৭০ (৭ কোটি) মিলিয়ন আমেরিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিল। আমার বিশ্বাস এই ৭০ মিলিয়নের শতকরা ৯০ ভাগই সাদা এবং হোয়াইট সুপ্রেমেসির ধারক বাহক। অবশ্য খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্ণবাদের এই বিশাল কাফেলা জন্ম দিয়েছেন তা নয়। এই বর্ণবাদ আমেরিকার শরীরে লুকানো ছিল। বিচ্ছিন্নভাবে অনেক গুষ্টি প্রকাশ্যে আসলেও বেশিরভাগ ছিল পর্দার আড়ালে। অপেক্ষায় ছিল একটা বিষ্ফোরণের এবং হিটলারের মত একজন নেতার আবির্ভাবের। ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন সেই নেতা। তিনি দেশটার পরতে পরতে লুকানো বর্ণবাদকে মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন শ্লোগানের ছায়াতলে এক করেছিলেন। বুঝতে অসুবিধা হয়না এমন শ্লোগানের আসল ম্যাসেজ ছিল, মেইক আমেরিকা হোয়াইট এগেইন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প চলে যাচ্ছেন। কিন্তু পিছু রেখে যাচ্ছেন উলঙ্গ এক আমেরিকাকে। এই উলঙ্গতা সহজে এদেশ হতে বিদায়নিতে যাচ্ছেনা। ভবিষতে ট্রাম্পের পথ ধরে আরও অনেকে চেষ্টা করবেন ক্ষমতার শীর্ষে যাওয়ার। এ তালিকায় ইতিমধ্যে নাম লিখিয়েছেন টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সিনেটর টেড ক্রূজ ও মিসৌরির জুনিয়র সিনেটর জশুয়া ডেভিড হওলি।
আগাম নোটিশঃঃ সামনের দিনগুলোতে এখানে আমাকে না দেখলে ধরে নেবেন আমি ফেইসবুকের জেলে আছি :)। রাজনৈতিক লেখালেখির উপর তরবারী চালাচ্ছে সোস্যাল মিডিয়াগুলো। আমি আপনি কেউ এর বাইরে নই।