গুজরাটের কসাই নামেই লোকটা পরিচিত। ধর্মীয় দাঙ্গা বাধিয়ে মুসলমানদের নিধন প্রকল্পে অস্ত্র হাতে নিজে মাঠে নেমেছিলেন। তিনি এখন ভারতমাতার প্রধানমন্ত্রী। ভারত বিলিয়ন মানুষের দেশ। ব্যবসা বাণিজ্যের মাঠও এখানে বাকি দুনিয়ার যেকোন দেশের চাইতে বেশী প্রসারিত। তাই বেনিয়া সমাজ ব্যবসায়িক স্বার্থে লোকটার সাথে সম্পর্ক রাখে, কিন্তু ইতিহাস কেউ ভুলে যায়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত নরেন্দ্র মোদিও ভারতীয়দের চামড়ার নীচে লুকানো কট্টর ধর্মীয় উন্মাদনাকে বাইরে আনতে সক্ষম হয়েছেন। গোটা ভারত এখন একদল উগ্র সাম্প্রদায়িক বণ্য মানুষের অভয়ারণ্য। সেই নরেন্দ্রমোদী আমাদের বন্ধু। ক্ষমতার সিংহাসনে আসীন বর্তমান সরকারের সাথে দহরম মহরম। সময়ে অসময়ে দুই বন্ধু উপহার আদান প্রদান করে থাকে । অবশ্য সরকারের একজন মন্ত্রী দুই দেশের ইদানিংকালের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে স্বামী-স্ত্রী্র সম্পর্ক হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে কে স্বামী আর কে স্ত্রী তা বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয়না।
গুজরাটের সে কসাই, ২০ লাখ ৪০ হাজার করোনা ভ্যাক্সিন উপহার হিসাবে পাঠিয়েছেন স্ত্রীর দেশে। অনেকে এ উপহার সম্পর্কের নতুন দিগন্ত আবিস্কার হিসাবে দেখছেন। করোনায় এখন গোটা বিশ্ব লন্ড ভন্ড। এ মুহূর্তে উপহার হিসাবে ভ্যাক্সিনের কোন বিকল্প হতে পারেনা। এ জন্যে গুজরাটের কসাই আমাদের ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
প্রশ্ন উঠছে, পাঠানো ভ্যাক্সিন কি ভারতে উৎপাদিত বৃটিশ কোম্পানী এস্ট্রোজেনিকার ভ্যাক্সিন। যদি তাই হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে, ভারত কি অধিকার রাখে এমন উপহার দেয়ার? বিশ্বটা এখন গ্লোবাল। কর্পোরেট বিশ্বেরও এখন কোন সীমানা নেই। কোম্পানী বৃটিশ, শেয়ার বাজারে কোম্পানীর শেয়ার কিনতে পারে যে কেউ। সস্তা শ্রমের জন্যে পশ্চিমা কর্পোরেট কোম্পানীগুলো ম্যানুফেক্টারিং ফ্যাসিলিটি পৃথিবীর দেশে দেশে স্থাপন করে থাকে। তারই অংশ এস্ট্রোজেনিকার ভারতীয় প্লান্ট। ভারতে উৎপাদিত হলেও ভারতীয় সরকার উৎপাদিত প্রোডাক্টের মালিক নয়। মালিক কোম্পানীর স্টক হোল্ডাররা। অবশ্য মোদি সরকার যদি করোনা ভ্যাক্সিন এস্ট্রোজেনিকা হতে ক্রয় করে উপহার হিসাবে গিন্নীর দেশে পাঠিয়ে থাকে তাহলে কোন মন্তব্য নেই।
খবর পাওয়া যাচ্ছে উপহারের ভ্যাক্সিন এস্ট্রোজেনিকার নয়, বরং ভারতের। এবং ভারতীয়রা নিজেদের ভ্যাক্সিনের কার্যকরীতা পরীক্ষা করার জন্যে ট্রায়াল হিসাবে পাঠিয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশিদের গিনিপিগ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে।
ফাইজার,মর্ডেনা, জনসন এন্ড জনসন সহ যেসব কোম্পানী কোভিড ভ্যাক্সিন আবিস্কারের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যায় করছে তারাও ট্রায়াল পর্ব পার হচ্ছে। এবং তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ফাইজার আমাদের শহরে তাদের ভ্যাক্সিন ট্রায়ালে অংশ নেয়ার জন্যে ভলানটিয়ার চেয়েছিল। যারা নাম লিখিয়েছিল তাদেরকে মাথাপিছু ১৪০০ ডলার পর্যন্ত দিয়েছিল। শর্ত ছিল ভ্যাক্সিন নেয়ার শুরু হতে শেষ পর্যন্ত ভলানটিয়ারদের উপর চোখ রাখতে হবে এবং ক্রিয়া ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সবকিছুর দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। এটাকে বলে ভ্যাক্সিনের ফেইজ-৩ ট্রায়াল। ভারত কি তার নিজস্ব ভ্যাক্সিনের ট্রায়ালের জন্যে উপহার হিসাবে পাঠিয়েছে এই ২০ লাখ ভ্যাক্সিন? যদি তাই হয় তাহলে বিনা ঘোষণায় এমনটা করা হবে আর্ন্তজাতিক আইন কানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো।
ভারতীয় ভ্যাক্সিন ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশিদের প্রয়োজন কেন, এমনটা ভাবতে গেলে সন্দেহটা দানা বাধতে বাধ্য। তাহলে ভ্যাক্সিনের কার্যকরিতা ও নিরাপত্তার উপর কি ভারতীয়দের আস্থা নেই? ভারত বিলিয়ন মানুষের দেশ। ওখানে আমাদের শারীরিক গঠনের মত জনগুষ্টির অভাব নেই। তাহলে আমরা কেন? পাশের পশ্চিম বাংলার মানুষ নয় কেন? ওরা তো আমাদেরই মত।
গোটা মানব সভ্যতা তাকিয়ে আছে ভ্যাক্সিনের দিকে। কিন্তু তার মানে এই নয় আস্থাহীন একটা দেশের গিনিপিগ হওয়ার জন্যে আমাদের ব্যবহার করতে হবে। ট্রায়াল চালাতে চাইলে আর্ন্তজাতিক রীতিনীতি মেনে ভারতকে আমাদের দেশে আসতে হবে। উপহারের নামে মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করার সময় এটা নয়!