জেনিফার ছিল আমার সহকর্মী। অফিসের এমন কেউ ছিলনা যার সাথে তার ঝগড়া বাধেনি। একমাত্র আমি ছিলাম এর বাইরে। বাকি সবাই অবাক হতো আমাদের দুজনের ঝামেলাবিহীন সম্পর্ক দেখে। চল্লিশ বছর বয়স্ক সোনালী চুলের এই মহিলা জাতে উগ্র বর্ণবাদী। কথায় কথায় আমেরিকার তাবৎ সমস্যার জন্যে কালো, লাতিনো ও ইমিগ্রেন্টদের দায়ীকরে অশ্লীল সব মন্তব্য করতেন। সংগত কারণে অফিসে তার কোন বন্ধু ছিলনা। বাড়িতেও ছিল অশান্তি। স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে আজ অনেক বছর। চেষ্টাকরেও নতুন কাউকে নিজ বলয়ে এনে সংসার সাজাতে পারেননি। ৫/৬ বছর তার সাথে মিশে এতটুকু ধারণা করতে পেরেছি কোন সূস্থ পুরুষ তার সাথে সংসার করতে পারবেনা।
জেনিফার আক্ষরিক অর্থেই গরীব। দিন আনে দিন খায়! যেদিন বেতন পায় সেদিন সে অন্যরকম মানুষ। সকালে অফিসে এসেই আমাকে ম্যাসেজ পাঠাবে, ব্রেকফাষ্টে তাকে সংগ দিতে হবে। ব্রেকফাষ্ট শেষকরার আগেই ঠিক করে রাখতো লাঞ্চ কোথায় করবে। এবং সেখানেও আমাকে জোর করে নিয়ে যাবে। ১৫ দিনের বেতন দিয়ে খুব বেশী হলে ৫/৬ দিন চলতে পারতো। বাকি দিনগুলোতে সে ছিল গরীব। নিয়মিত খাওয়ারও টাকা থাকতোনা। তার উপর বাড়ির মর্গেজ, গাড়ির পেমেন্ট সহ আরও অনেক বাধ্যবাধকতা। ওয়ালেট খালি করে যেদিন অফিসে আসতো ব্রেকফাষ্ট লাঞ্চের সময় সে কোথাও লুকিয়ে থাকতো। আমি জানতাম তার পকেটে পয়সা নেই এবং ক্ষুধা নিয়েই কাটিয়ে দেবে সারাদিন। এখানেই আসতো আমার মহত্ম। প্রায়ই জোর করে বাইরে নিয়ে যেতাম এবং ব্রেকফাষ্ট করিয়ে হাতে লাঞ্চ ধরিয়ে দিতাম।
দারিদ্র সীমার নীচে বাস করা জেনিফার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিবেদিত মুরীদ। তার কাছে ট্রাম্পের মত যোগ্য নেতা বিশ্বে দ্বিতীয়টা নেই। কথা প্রসঙ্গে একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাকি উন্নত বিশ্বের মত এ দেশেও যদি বিনামূল্যের চিকিৎসা পাওয়া যেত তাহলে তার মত ষ্ট্রাগলিং আমেরিকানদের নিশ্চয় অনেক উপকার হতো? ক্ষুধার্ত বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পরল আমার উপর। উত্তেজিত হয়ে আমাকে মনে করিয়ে দিল; দিস ইজ আমেরিকা, সোস্যালইজম ইজ নট এন অপশন হেয়ার!
যে মহিলা তার ৩বেলা খাবার টেবিলে রাখার মত অর্থ পকেটে রাখতে পারেনা তার জন্যে ফ্রী চিকিৎসা, ফ্রী শিক্ষার মত মৌলিক চাহিদা নাকি সমাজতন্ত্র!
আমি জানি বার্ণি সান্ডার্সকে নিয়ে আমাদের অনেক দুর্বলতা। আছে প্যাসন। তার নির্বাচনী এজেন্ডগুলো খুবই আকর্ষনীয়। যার অন্যতম সবার জন্যে ফ্রী চিকিৎসা ও ফ্রী শিক্ষা। আমেরিকা ও আমেরিকানদের জানতে দেশটায় বাস করা জরুরি। এর ফ্যাব্রিক জানতে মিশতে হবে জেনিফারের মত আমেরিকানদের সাথে। কেবল তখনই বুঝা যাবে কেন বার্ণি সান্ডার্সের মত একজন প্রোগ্রেসিভ আমারিকান প্রেসিডেন্টসিয়াল নির্বাচনে বার বার পরাজিত হন। ২০১৬ ও ২০২০ সালের ডেমোক্রেট দলীয় প্রাইমারিতে এ জন্যেই আমি সান্ডার্সকে ভোট দেইনি। কারণ জানতাম মূল নির্বাচনে তিনি বিশাল ব্যবধানে হেরে যাবেন। আমেরিকানদের মনমানষিকতা এখনো বার্ণি সান্ডার্সদের জন্যে প্রস্তূত নয়। এ নিয়ে রিপাব্লিকান অথবা ডেমোক্রেটদের মাঝে তেমন কোন তফাৎ নেই। আমি নিশ্চিত ছিলাম বার্ণি-ট্রাম্প লড়াই হলে জনাব ট্রাম্প খুব সহজে জিতে যেতেন। আমার জন্যে এবারের নির্বাচন ছিল ট্রাম্পকে বিদায় করার নির্বাচন।
ও হ্যা, জেনিফারকে চাকরি হতে বিদায় করা হয়েছিল বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে। তার ২২ বছরের ছেলে তারই বাসায় আত্মহত্যা করেছিল। এবং সেও ছিল তার মা'র মত জন্মগত বর্ণবাদী।