সোভিয়েত সাম্রাজ্যের কর্ণধার লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ যে বছর মারা যান সে বছর ঐ দেশটায় আমি লেখাপড়া করছি। নেতা মারা গেলে সমাজতান্ত্রিক দেশে কি হয় তার সাথে পরিচয় ছিল। কিন্তু সোভিয়েত দেশে যেহেতু লম্বা সময় ধরে তেমন কেউ মারা যায়নি তাই দেশটার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া কেমন হবে আন্দাজ করতে পারিনি।
এ নিয়ে অন্য কোন লেখায় আলাপ করা যাবে। আজকের লেখাটা অন্য এক বিষয়ে।
ব্রেজনেভের মৃত্যুর সাথে মস্কো হতে বেড়াতে আসা জনৈক বড় ভাইয়ের কোন সম্পর্ক ছিলনা। মৃত্যু আগ বারিয়ে ঘণ্টা দিয়ে আসেনা। তাই আগ হতে আন্দাজ করা সম্ভব হয়না। বড় ভাই আসার একদিন পরই ব্রেজনেভ মারা যান।
ডর্মের কোন এক রুমে বড় ভাইয়ের আগমন উপলক্ষে রান্না-বান্না হয়েছে। সবাই মিলে খাওয়ার আয়োজন করছি।
দরজায় নক।
খুলতেই দেখি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সভাপতির নেতৃত্বে ৮-১০ জনের একটা দল।
ওরা রুমে রুমে চেক করছে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে কিনা।
ডিনারের হেতু মস্কো হতে বড় ভাইয়ের আপ্যায়নের কথা জানতে পেরে রেগে উন্মাদ হয়ে গেল সভাপতি।
তার মতে, আমরা নাকি ব্রেজনেভের মৃত্যু সেলিব্রেট করছি।
খাওয়া দূরে থাক, প্রস্তুতির সময় না দিয়ে ওনাকে ডর্ম হতে বের করে দিলেন। লাথি মেরে ফেলে দিলেন সাজানো প্লেট গুলো।
দুদিন রেল লাইন বন্ধ থাকায় স্থানীয় ষ্টেশনে দু'রাত কাটিয়ে ফিরে গেলেন মস্কোতে।
ঘটনা অনেকে ভুলে গেলেও আমি ভুলতে পারিনি।
১৯৮৮ সালের শুরুর দিকে আমি আমার মাষ্টার ডিগ্রীর থিসিস ডিফেন্ড করে লেখাপড়ার পর্ব চুকিয়ে ফেলেছি। এবার ঘরে ফেরার পালা।
এক রাতে শনিবারের আউটিং শেষে ডর্মে ফিরছি। রাত বোধহয় ১২টার মত হবে।
মাতাল হয়ে সিঁড়ির কোথাও কারও শুয়ে থাকা সোভিয়েত দেশে অস্বাভাবিক নয়। হরহামেশাই এসব ঘটে থাকে। আমাদের ডর্মে সিঁড়িতেও এ দৃশ্য অপরিচিত নয়।
সে রাতেও একজনকে পেলাম সিঁড়িতে। মাতাল এবং বেহুশ। পাশ কাটিয়ে উপর উঠার পর মনে হল মুখটা পরিচিত।
ফিরে গেলাম সিঁড়িতে পরে থাকা অর্ধমৃত লাশটার দিকে।
আর কেউ নয়, আমাদের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সেই সভাপতি।
ততদিনে সে হারিয়ে ফেলেছে তার পদ।
আমার চাইতে তিন গুন শরীরের কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। সভাপতিকে আঘাত করার ইচ্ছাটা কোনদিনই তালিকা হতে মুছে যায়নি। কেন জানি মনে হল আজ সেই সুযোগ।
পায়ে শীতের শক্ত ভারী বুট।
চারদিকটা ভালকরে পরখ করে নিলাম। কেউ নেই।
এবার প্রতিশোধের পালা।
কম করে কষে পাঁচটা লাথি মারলাম। কল কল করে রক্ত বেরিয়ে এলো মুখ হতে।
কেবল আমার নয়, আরও অনেকের সমীকরণ সমাধান করলাম মধ্যরাতের একশনে। সে রাতে ভাল ঘুম হল।
এ লেখাটার মূল প্রেক্ষাপট এত বছর আগে নেয়া প্রতিশোধ নয়। বরং আজকের একটা খবর। শেখ রাজতন্ত্রের যুবরাজ শেখ তাপসের সভাসদ নিয়ে ভ্রমণের ঘটে যাওয়া একটা খবর।
যুবরাজ ইয়ার-দোস্তদের নিয়ে মৃগয়া শিকারে বেরিয়েছিলেন। নদী পাড়ি দিতে ফেরীতে উঠেছিলেন।
রাজপরিবারের কারও সাথে সাধারণ প্রজাদের ভ্রমণ কোন রাজতন্ত্রেই বৈধ নয়। বাংলাদেশেই বা হবে কেন।
তাই ইয়ার-দোস্তরা যা করার তাই করেছে। অনুমতি না নিয়ে ফেরীতে উঠে পরা জনৈক দুই নাগরিককে হামন-দিস্তা দিয়ে পিটিয়ে প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিতে রাজমাতাকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সে পথ অনেক দুর্গম, অনেক বন্ধুর।
আল্লাহ না করুন যুবরাজ তাপস যদি ক্ষমতা হতে কোনদিন ছিটকে পরেন, ডর্মের সিঁড়ির মত ক্ষমতার সিঁড়িতে ছিটকে পরেন, আমার মত অনেকেই এগিয়ে আসবে। কষে লাথি মারবে। সময় ও সুযোগ সহায়তা করলে আমিও যে বাদ যাবো তা নয়। অপেক্ষায় থাকবো এমন একটা দিনের।