একটি বেড়াল কাহিনী

Submitted by WatchDog on Saturday, March 20, 2021

প্রতিদিনের মত সেদিনও সে বাইরে ছিল। গ্রীষ্মের রাত। হঠাৎ করেই আকাশ ভেঙ্গে ঝড়, তুফান, বৃষ্টি, মরু বাতাস একসাথে গ্রাস করে নিল প্রকৃতি। বিদ্যুৎ চমকের সাথে থেমে থেমে বজ্রপাত রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে খান খান করে দিল।

আংখেলা

বাচ্চারা ভয় পেয়ে আশ্রয় নিল মার কোলে। আমার চিন্তাটা ছিল তাকে নিয়ে। সেই যে দুপুরে বাইরে গেছে ফেরার নাম নেই। অবশ্য গ্রীষ্মের এ সময়টায় তার বাইরে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু ছিলনা। তবে যেখানেই থাকুক রাত ১০টা বাজার আগে তার ছায়া দেখা যাবে দরজার বাইরে। খুলতে দেরী হলে নখ দিয়ে আচর কাটা শুরু করে দেয়।

কিন্তু ঝড়ের সে রাতে তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলনা। সবাই ঘুমাতে গেলেও আমার ঘুম আসছিলনা। বার বার ব্যাকইয়ার্ডের দরজা খুলে খুঁজে দেখছিলাম তার অবস্থান। না, কোথাও তার ছায়া দেখা গেলনা।

হারানোর অজানা একটা ভয় চেপে বসলো। অথচ তাকে বাসায় আনার ঘোর বিরোধী ছিলাম আমি। বাচ্চাদের জোর আবদারের কাছে পরাজিত হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘরে আনতে বাধ্য হয়েছিলাম। কথা ছিল বাচ্চাদের খেলার সাথী হবে। অথচ সময় যত যায় ততই সে আমার সাথে ঘনিষ্ট হতে থাকে। রাতে দরজার বাইরে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করে কখন বাকিরা ঘুমাবে। সুযোগ পাওয়া মাত্র এক লাফে আমার বুকের উপর আশ্রয় নেয়। ল্যাপটপের মনিটর ও আমার মাথার মাঝখানটায় নির্ভয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। জোর করেও সরানো যায়না।

ভাল ঘুম হয়নি সে রাতে। ভোর চারটার দিকে আবারও গেলাম দরজা খুলতে। মরু ঝড় ততক্ষণে থেমে গেছে। না, তাকে কোথাও দেখা গেলনা। নাম ধরে জোরে ডাক দিলাম। কেবল তখনই শুনতে পেলাম রেলগাড়ির হুইসেলের মত একটা আওয়াজ। বিদ্যুৎ গতিতে দেয়ালের ওপার হতে লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পরল আমার উপর। ভিজে একাকার হয়ে আছে। সে রাতে দুজনেরই আর ঘুম হয়নি। হরেক রকম চেষ্টার পর তার শরীর স্বাভাবিক হয়েছিল। ভয়টা কেটে যেতে প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম, সে আসলে আমাদেরই একজন। অনেকটা সন্তানের মতই। ও আমাদের আংখেলা।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন