কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা

Submitted by WatchDog on Sunday, April 4, 2021

মৌলানা মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিয়ে ও রিসোর্টে অবকাশ যাপন সংক্রান্ত পোষ্টগুলো পড়ে মনটা উদাস হয়ে গেল...স্মৃতির অলিগলি ধরে মন চলে গেল অস্ট্রেলিয়ায় কাটানো সময় গুলোতে। আমার তখন এক বিয়াও হয়নাই। ফ্রি এজ বার্ড। এদিক ওদিক ঘুরতে কোন অসুবিধা নাই। কারও দিকে চাওয়া-পাওয়ার কামুক দৃষ্টিতে তাকাতেও বাধা নাই।

Fiji

প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ দেশ সলোমন আইল্যান্ড, টোঙ্গা, সামোয়া, বোরা বোরায় যাওয়ার স্বপ্নগুলো ডানা মেলতে শুরু করেছে কেবল। হিসাব মেলাতে মাঝে মধ্যে ব্যাংক ব্যালেন্ড চেক করি। না, ওখানকার স্বাস্থ্য দ্বীপ দেশে যাওয়ার মত অবস্থায় ছিলনা। আয়-রোজগার বলতে যা ছিল তাদিয়ে দিন কোনরকমে কেটে যেত।

সাউথ প্যাসিফিকের দেশগুলোর নাগরিকদের অনেককেই অস্ট্রেলিয়ার পথে-ঘাটে দেখা যায়। থ্যাবড়া চেহারার এসব মানুষদের শারীরিক গঠন তক্তার মত শক্ত। চাইলে আমার মত বাংলাদেশিদের মুঠোতে নিয়ে পাট কাঠির মত ভেঙ্গে ফেলতে পারবে। এসব বিবেচনায়ই হয়ত রাগবী খেলায় আইল্যান্ডারদের জয়জয়কার।

চাকরিতে দুজন ভারতীয় সাথে পরিচয়। দেখতে বলিউড নায়কদের মত। কথা ও কাজে মাগুর মাছের মত পিচ্ছিল। দুদিন না যেতে জানতে পারলাম ওরা আসলে ভারতীয় নয়, ফিজিয়ান। প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ ফিজি হতে এদেশে এসেছে। নাম প্রশান্ত কুমার।

এক অর্থে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী দেশ এই ফিজি। কুমারের মুখে দেশটার বর্ননা শুনে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপে দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছাগুলো আরও প্রবল হয়েছিল।নিশ্চিত ছিলাম খরচ করার মত অর্থ হাতে আসা মাত্র বেড়িয়ে পরবো।

কথা প্রসঙ্গে কুমারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তার পরিবারের অন্যদের কথা। উত্তরে যা শুনেছিলাম তাতে স্তব্দ হয়েছিলাম কিছুক্ষণ। হজম করতে অসূবিধা হয়েছিল। কুমারের মতে সে অবিবাহিত। তবে তার স্ত্রী আছে। রহস্যের গন্ধ পেয়ে চেপে ধরলাম তাকে। আসলেই সে অবিবাহিত। তবে তা কাগজে কলমে। ঘরে তার স্ত্রী আছে। আছে বাচ্চা কাচ্ছা।

কুমারের অতিরিক্ত আয়ের উৎস এই সংসার। ব্যপারটা একটু অভিনব ও খটকার। খুলে না বললে বুঝা মুস্কিল হবে। দিনশেষে সবই লেনাদেনা। পানির মত সহজ ও পরিস্কার। কুমারদের জন্যে স্বামী-স্ত্রীও এর বাইরে নয়। ব্যপারটা এ রকমঃ কুমার বিয়ে করে তার স্ত্রীকে ফিজি হতে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে এসে আর দশটা ইমিগ্রেন্টের মত বসবাস করছে। তবে কিছুদিন পার হওয়ার পর তার স্ত্রীই নাকি ধারণটা মাথায় ঢুকায়।

অফিসিয়ালি তারা ডিভোর্স চাইবে। আইনের চোখে তা বৈধ হওয়ার পর ফিরে যাবে নিজভূমি ফিজিতে। ওখানে দুজনেই নতুন করে পাত্র পাত্রীর সন্ধান করবে। কুমারের মতে এমন সন্ধান লম্বা হয়না। পরিচিত কাউকে স্ত্রী হিসাবে কুমার ও স্বামী হিসাবে তার ডিভোর্সড স্ত্রী বিয়ে করে। এ বিয়ে আইনের চোখে স্বাভাবিক হলেও মনুষ্য চোখে তা লেনাদেনা। দুজনেই বিরাট অংকের অর্থের বিনিময়ে সমাধা করে সমীকরণ। ইমিগ্রেশন প্রসেস শেষ হওয়ার পর নতুন স্ত্রী ও স্বামী চলে আসে অস্ট্রেলিয়ায়। এখানেই থেমে যায়না কুমার ও তার স্ত্রী অথবা নববিবাহিত স্ত্রী ও স্বামী। চেইন রিয়েকশনের মত চলতে থাকে এই বিবাহ বাণিজ্য।

ফিজিতে ভারতীয়দের আগমন ও এর প্রাসারের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। দেশটার রাজনৈতিক ক্ষমতাও এখন তাদের দখলে। ফিজি ও অস্ট্রেলিয়াকে বিভক্ত করে প্রশান্ত মহাসাগর। ছলে বলে কৌশলে দেশটার অনেক ভারতীয় পাড়ি জমায় অস্ট্রেলিয়ায়। ভাগ্য উন্নয়ণ দৌড়ে নিজের বোনকে বানায় স্ত্রী, স্ত্রীকে বানায় ডিভোর্সড মহিলা।

প্রশান্ত মহাসাগরের বুক চিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় প্রতিটা দেশের প্রতিনিধিত্ব আছে অস্ট্রেলিয়ায়। এবং তাদের সংখ্যা চোখে পরার মত। এতক্ষণ বসে সাউথ প্যাসিফিক দেশগুলোর উপর বিবিসির একটা প্রামান্যচিত্র দেখছিলাম। টাইটেল ছিল' The Endless Blue'। দেশগুলোর বাসিন্দাদের জীবন নিয়ে আগ্রহ তৈরী করার জন্যে যথেষ্ট ছিল এই চিত্র। ভাল না লেগে উপায় নেই। কেবল ছবিই নয়, শশরীরে দেশগুলো চষে বেড়ানোর ইচ্ছা জাগতে বাধ্য।

বিশ্বব্রম্মাণ্ডের এসব বিস্ম্যকর অলিগলি একজনমে দেখে শেষকরার উপায় নেই। তার জন্যে বার বার জন্ম নিতে হবে। আরেক জনমে এ পৃথিবীতে আসলে নিশ্চয় সাউথ প্যাসিফিকের এসব দেশগুলোতে ঘুরে বেড়াবো। সলোমন আইল্যান্ডের কোন এক তীরে বসে দেখবো রক্তিম সূর্যাস্ত।' ততদিন বেঁচে থাকুক মানব সভ্যতা এমনটাই কামনা করবো। সভ্যতার জোয়ার ভাটায় মামুনুল হক হুজুর, কুমার ও তার বিবাহ স্কীম কোন কাঁটা হবেনা। কারণ এসব খুবই ক্ষুদ্র। জীবন আসলে ওদের চাইতে অনেক অনেক বড়।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন