সাল ফাল মনে নেই। হবে হয়ত ষষ্ঠ অথবা সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি। স্কুলে এই প্রথম বার্ষিক পুরস্কার বিরতনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বলতে গেলে ইউনুস স্যারের একক চেষ্টার ফসল। যাদের সামর্থ আছে তাদের ৫/১০ টাকা করে চাঁদা ধরা হয়েছে। তখনকার দিনে এমন অংক একজন ছাত্রের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিলনা। বাড়িতে অনেক বুঝিয়ে আমিও আমার অংশ স্যারের হাতে তুলে দিতে সমর্থ হয়েছিলাম।
অনুষ্ঠানের দিন সকাল হতে চারদিকে সাজ সাজ রব। স্কুলে নতুন কিছু ঘটতে যাচ্ছে এমন চিন্তায় আমার মত অনেকেরই আগের রাতে ভাল ঘুম হয়নি। তাছাড়া আমিও একটা পুরস্কার পেতে যাচ্ছি চিন্তাটা মাথা হতে ফেলতে পারছিলাম না।ঢাকা হতে শিল্পীরা আসার কথা। সবাই আমরা অপেক্ষা করছি। কিন্তু কারও দেখা নেই। বশির আহমেদের মত তারকা শিল্পীর দেখা পাওয়া তখনকার দিনে সহজ ছিলনা। তিনিও ছিলেন শিল্পীদের তালিকায়।
বিকেল তখন ৪টা। ইউনুস স্যার আমাকে সামনে পেয়ে আটকালেন। নির্দেশ দিলেন হেডস্যারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। উনারা সবাই কোথাও যাচ্ছেন কিছুক্ষণের জন্যে। মূল উদ্দেশ্য ঢাকা হতে ইতিমধ্যে কেউ এসে পরলে আমি যেন স্বাগত জানিয়ে স্যারদের ওয়েটিং রুমে বসতে দেই।
তীর্থের কাকের মত আমি দাঁড়িয়ে আছি। কারও দেখা নেই। হতাশ হয়ে ইতিউতি করছি। অপরিচিত একজনকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। ছোট খাট কালো মত একজন মানুষ। হাতে একটা ডায়রি। গলায় সাদা একটা চাদর। বুঝতে অসুবিধা হলোনা নিশ্চয় আমন্ত্রিত গায়কদের কেউ। লম্বা একটা সালাম দিলাম।
কারও পরিচয় জানার কিছু পুথিগত ভাষা আছে, ঐ মুহূর্তে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেল।
যেকোন ভাবেই হোক জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? মৃদু একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমি আবদুল আলিম’ পল্লিগীতির সম্রাট আবদুল আলিম আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
আর কারও না হোক, আমাদের বাড়িতে আব্বা ছিলেন এই গায়কের একান্ত ভক্ত। ভাল সময় মন্দ সময়ে তিনি গুন গুন করে গাইতেন এই শিল্পীর মরমী অনেক গান। আব্বাস উদ্দিনও তালিকার বাইরে ছিলেন না। সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে যাপিত জীবনের অনেক কিছুই ফিঁকে হয়ে যায়। তবে কিছু স্মৃতি আছে আজীবনের জন্যে মনে গেঁথে যায়। শিল্পী আবদুল আলিমের সাথে দেখা হওয়াটা ছিল তেমনি এক স্মৃতি।