খেলারাম খেলে যায়...
করোনা মহামারীর উৎস নিয়ে রহস্য বেড়েই চলছে। এ ব্যাপারে চীনাদের বক্তব্য সময় যত যাচ্ছে ততই অসত্য ও অসাড় প্রমাণিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রভাবিত করে চীন সরকার যে তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছিল দিন দিন তার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। এর মূল কারণ অবশ্যই দেশটার নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থা।
মহামারীর শুরুর দিকে জনৈক চীনা বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করেছিলেন উহান ভাইরোলজি ল্যাবে গবেষণা কালীন এক দুর্ঘটনা হতে ছড়িয়ে পরেছিল এই ভাইরাস। চীনা সরকার সময় ব্যায় না করে উড়িয়ে দিয়েছিল এ তত্ত্ব। কাউন্টার হিসাবে দাঁড় করিয়েছিল বাদুর-মানুষ ইন্টারেকশন তত্ত্ব। এমন দাবির স্বপক্ষে দাঁড়িয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা।
চীনাদের আইডোলজিক্যাল শত্রু ও অর্থনৈতিক প্রতিপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক গবেষকরাও মেনে নিয়েছিলেন চীনাদের ব্যখ্যা। প্রখ্যাত মার্কিন বৈজ্ঞানিক ও ইমিওনোলজিষ্ট ডাঃ এন্টোনি ফাওসিও উড়িয়ে দিয়েছিলেন গবেষণাগার দুর্ঘটনার তত্ত্ব। কিন্তু দু;দিন আগে প্রকাশিত মার্কিন এক গোয়েন্দা রিপোর্ট গবেষকদের নতুন করে উহান ভাইরোলজি ল্যাবের দিকে ইঙ্গিত করছে। ডাঃ ফাউসিও বলছেন করোনা উৎসের পূর্ববর্তী থিওরি হতে তিনি সরে এসেছেন।
গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে উহান ল্যাবের ৩ গবেষক অসুস্থ হয়ে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের অসুস্থতার সিম্পোটম গুলো ছিল ডাক্তার ও বৈজ্ঞানিকদের কাছে অপরিচিত। পরবর্তীতে দেশটায় করোনা ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পরলে গবেষকরা নিশ্চিত করেন ল্যাবের তিন গবেষকদের অসুস্থতার লক্ষণের সাথে কোভিড লক্ষণের শতকরা ১০০ ভাগ মিল আছে। যে তিন গবেষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। এই তিন রুগী ভ্যানিশড ইন থিন এয়ার উইদআউট এনি ট্রেইস।
একই সময় উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির ডিরেক্টর শি জিংগলি জনসম্মুখে এসে ক্যাটাগোরিক্যালি অস্বীকার করেন তিন গবেষকের অসুস্থতার কথা। সন্দেহের সূত্রপাত হয়ে এখানেই। কারণ ইউএস ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি গুলোর বিশ্বাস করার মত যথেষ্ট কারণ ছিল এই তিন গবেষক আসলেই অসুস্থ হয়েছিলেন এবং তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা চীনা সরকার ইচ্ছা করেই লুকিয়েছিল।
আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ও ক্লিনটন প্রশাসনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অফিশিয়াল জেইমি মেটজি দাবি করছেন উহান ল্যাবে সামরিক গবেষণার অংশ হিসাবে ৩ গবেষকদের শরীরে করোনা ভাইরাস পুশ করা হয়েছিল। ল্যাবের গবেষকদের অবাক করে দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং তা দ্রুত গতিতে চারদিকে ছড়িয়ে পরে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন টিভি চ্যানেল এনবিসি খবর দেয়, দেশটার গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এমন সব তথ্য আছে যার কারণে তারা উহান ল্যাবে করোনা উৎসের সন্দেহ এখন আর উড়িয়ে দিচ্ছেনা।
ল্যাব গবেষণা সহ করোনা উৎসের কোন তত্ত্বই এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। যার দরুন সব কারণই এখন সন্দেহের তালিকায় রয়ে গেছে। গোটা বিশ্বের বৈজ্ঞানিকরা চীনাদের কাছে অনুরোধ করছে তথ্য সরবরাহের জন্যে। যেহেতু করোনা ভাইরাস উৎসের নিজেদের দাবির স্বপক্ষে চীনা সরকার কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি তাই বাকি বিশ্বের বৈজ্ঞানিকরা চাইছে এর উৎসের উপর আরও গবেষণা চালাতে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভাইরাস শুরুতেই মোকাবেলা করা যায়।
চীনারা বরাবরের মত এ যাত্রায়ও লুকোচুরি খেলছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থা দিয়ে কণ্ঠরোধ করছে তার নাগরিকদের। ফলে ভেতরের খবর বাইরে আসছেনা। বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করছেন, এ যাত্রায় ভ্যাক্সিন দিয়ে করোনার প্রসার সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও যতদিন আসল কারণ জানা না যাবে, ততদিন করোনার সাথে বুঝাপড়াও চূড়ান্ত করা যাবেনা।