ইয়াইর লাপিড ও নাফতালি বেনেটের কোয়ালিশন আগামী সপ্তাহে বেঞ্জামিন নেতনিয়াহুর সরকারকে হটিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরায়েলে।
গত দু'বছর ধরে দেশটায় রাজনৈতিক সংকট চলছে। পর পর কয়েকটা নির্বাচন হলেও সরকার গঠনের মত কোন দলই আসন পাচ্ছিলনা। নেতনিয়াহুর দল লিকুদ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও Knesset'এ আস্থা ভোট পাওয়ার মত অবস্থায় ছিলনা। তাই অনেকটা অস্থায়ী সরকার প্রধান হয়ে দেশ চালাচ্ছিলেন নেতনিয়াহু।
দরকষাকষির পর এ যাত্রায় বিরোধী দলগুলো নিজেদের মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে নেতনিয়াহুর বিরুদ্ধে একজোট হতে সক্ষম হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১২০ আসনের ইসরায়েলি সংসদ Knesset'এ ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির আসন ৩০, ইয়াইর লাপিডের ইয়াস আটিডঃ ১৭, আরেহ ডেরির Shas: 9, এক কালের ক্ষমতার অন্যতম প্রতিপক্ষ লেবার পার্টি: ৭, এ ছাড়াও আছে অল্প কিছু আসন নিয়ে ছোট ছোট বেশ কটা দল যার অন্যতম নাফতালি বেনেটের পার্টি Yamina। তুলনামূলক নতুন এই রাজনৈতিক দলের আসন সংখ্যা ৭। কোয়ালিশন চুক্তির শর্ত মোতাবেক ক্ষমতার প্রথম ২ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন নাফতালি ও পরের বছরগুলোতে মন্ত্রীসভার নেতৃত্ব দেবেন ইয়াইর লাপিড।
৪৯ বছর বয়স্ক নাফতালি বেনেট নিকট অতীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতনিয়াহুর চীফ অব স্টাফ হিসাবে কাজ করেছিলেন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি সেটলারদের সংখ্যা নিয়ে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে নাফতালি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফিলিস্তিনি ইস্যুতে নাফতালির অবস্থান আরও রক্ষণশীল। ইন-কামিং প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বাস্তবতা মানতে রাজী নন। গোটা ফিলিস্তিনকে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এনে ব্যাপকহারে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের কর্মসূচী নিয়েই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন আমেরিকান ইমিগ্রান্টের সন্তান নাফতালি।
তবে বর্তমান কোয়ালিশন নিয়ে নাফতালি তার রক্ষণশীল কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারবেন তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। কারণ একই কোয়ালিশনে আছেন ইসরায়েলী মুসলিম সম্প্রদায়ের পার্টি Ra'am।
মনসুর আব্বাসের নেতৃত্বাধীন এই পার্টির আছে ৪ আসন। যদিও তারা মন্ত্রীসভায় যোগ দিচ্ছেনা, তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি নিয়ে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে এই দল কোয়ালিশন হতে বেরিয়ে আসবে এবং ইয়াইর-নাফতালি সরকারের পতন তরান্বিত করতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ করার মত আরও এক ফ্যাক্ট হচ্ছে এই কোয়ালিশনে উগ্র জাতীয়তাবাদী দল রিলিজিয়াস জায়োনিষ্ট দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সঙ্গত কারণে অনেকে মনে করছেন ফিলিস্তিন প্রশ্নে নাফতালি ২ বছরের জন্যে পূর্বের দাবি দাওয়া হতে অনেকটাই দূরে থাকবেন।
সরকার বদল হবে, আসবেন নতুন সরকার প্রধান। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যের যে সামান্যতম হেরফের হবেনা তা অনেকটাই নিশ্চিত। এ ব্যপারে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকাও পরিষ্কার। ট্রাম্প প্রশাসনের মত তারাও ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের খুনের ফ্রি লাইসেন্স দেবে। জেরুজালেম হতে সরিয়ে রাজধানী তেল আভিভে ফিরিয়ে নিতেও ইসরায়েলকে চাপ দেবেনা হোয়াইট হাউস। এ নিয়ে মার্কিন ভোটারদেরও তেমন কোন চাপ নেই।
সব বিচারে বলা যায় ইসরায়েলে সরকার পরিবর্তন বিষ্ফোন্মুখ মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনই ভূমিকা রাখবেনা। বরং আরও অস্থির করতে তুলবে যদি নতুন প্রধানমন্ত্রী ফিরে যান তার দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে।