সোস্যাল মিডিয়ায় মিনিটে মিনিটে আপডেট দিচ্ছেন অনেকে। বুঝাই যাচ্ছে আবেগ, উচ্ছাস আর সমর্থন মিলেমিশে একাকার হয়ে আকাশে উড়ছে। অনেকে একধাপ এগিয়ে উপদেশ দিচ্ছেন কোথায় কিভাবে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।
তালেবানদের কাবুল অভিযানে দেশীয় সমর্থনের বেশকিছু কারণ থাকতে পারে। তার অন্যতম, কাবুল দখলকে ইসলামের বিজয় হিসাবে দেখা।
যারা গোটা বিশ্বে একদিন ইসলাম কায়েম করার গায়েবি স্বপ্নে বিভোর তাদের জন্যে এ হতে পারে স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন।
দ্বিতীয়ত; অনেকের জন্যে তালেবানদের বিজয়ের চাইতে মার্কিন পরাজয়ই উল্লাসের মূল কারণ।
তৃতীয় গ্রুপের জন্যে তালেবান বিজয় মানে বিদায়ী আফগান সরকারের প্রতি ভারতীয় সাহায্য সহযোগীতার করুণ পরিণতি।
লেখাটা যখন লিখছি তালেবানরা দখল নিয়েছে কাবুলের। মার্কিন সমর্থিত আফগান সরকার পালিয়ে গেছে।
এটাই তালেবানদের প্রথম কাবুল দখল নয়। ১৯৯৬ সালেও গোটা বিশ্ব তালেবানদের ক্ষমতা দখলের স্বাক্ষী হয়েছিল।
তালেব অর্থ শিক্ষার্থী। হয়ত ধর্মীয় শিক্ষার শিক্ষার্থী হিসাবে নিজদের প্রকাশ করতে চেয়েছিল।
ক্ষমতার প্রথম প্রহরে একচোখা মোল্লা ওমর ও তার ধর্মীয় উন্মাদনায় দিক্ষিত জল্লাদ বাহিনী অত্যাচারের রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিল গোটা দেশজুড়ে।
১৯৯৬ হতে ২০০১ সাল। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উৎপাটন করে ওখানে প্রতিষ্ঠা করে জল্লাদি শরীয়া আইন।
গুড়িয়ে দেয় স্কুল কলেজ। তান্ডব চালায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন ও বিচার ব্যবস্থার সবকটা অঙ্গে।
দেশটার মহিলা সমাজকে পুরুষের ভোগের উপকরণ হিসাবে ঘোষণা দিয়ে চালুকরে পাথর যুগের অত্যাচার। এবং সবকিছুতে লাগানো হয় ইসলামের ইনগ্রেডিয়েন্ট।
এক কালের দখলদার সোভিয়েতদের সমাজতন্ত্র কায়েমের মত মোল্লা ওমরের জল্লাদ বাহিনীও বিশ্বাস করতে শুরু করে বিশ্বব্যাপী চালু হবে শরীয় আইন। মোল্লা ওমরদের তরবারীর নীচে মাথা নীচু করবে গোটা বিশ্ব।
এসব অন্ধ, উন্মাদ, রক্তপিপাসু মানুষ নামের নরপশুদের ভাগারে আশ্রয় নিয়ে লতায় পাতায় বেড়ে উঠে ধর্মীয় উন্মাদনার সফিস্টেকেটেড পশু ও আধুনা সভ্যতার বাই-প্রোডাক্ট ওসামা বিন লাদেন ও তার আল-কায়েদা বাহিনী।
মার্কিন গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে ওরা হামলা চালায় দেশটার বিভিন্ন শহরে। গুড়িয়ে দেয় বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র নিউ ইয়র্কস্থ টুইন টাওটার।
এখানেই জন্ম নেয় নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থা। যার চমৎকার ব্যখ্যা দেয়া যায় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের এক বক্তব্যেঃ either you're with us, or with the terrorists!
রুটি হালুয়ার ভাগাভাগির কারণে অনেক মুসলিম প্রধান দেশের সরকার প্রধান অথবা রাজা-বাদশারা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও ১.২ বিলিয়ন মুসলমানদের অধিকাংশই উল্লাসিত হয়েছিল তালেবান উত্থানে। বাংলাদেশের মত দেশ হতে অনেকে আফগানিস্তানে হিজরত করেছিল আল-কায়েদার হয়ে যুদ্ধ করার মিশনে যোগ দিতে।
১৯৯৬-২০০১ সালের তালবান সরকারকে পাকিস্তান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাত ছাড়া কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। এ সরকারের পতন ছিল সময়ের দাবি।
মার্কিনিরা কাজটা করেছিল তাদের নিজস্ব সমীকরণে। আল-কায়েদা নির্মূলে তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল বাকি বিশ্ব।
ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে হানা দিয়েছিল খোদ পাকিস্তানে। এই সন্ত্রাসী চক্রের কোমর ভেঙ্গে তোরাবোরার পাহাড়ের গর্ত হতে বের করেছিল ইঁদুরের মত। হয়ত এখানেই সমাপ্ত হওয়ার দরকার ছিল মার্কিনিদের আফগান মিশন।
কিন্তু তারা তা করতে যায়নি। বরং পাথর সভ্যতায় সভ্য আফগান জাতিকে নেশন বিন্ডিং প্রকল্পের আওতায় এনে যুদ্ধ চালিয়ে যায় ২০ বছর। খরচ করে ট্রিলিয়ন ডলার।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের চাইতেও দীর্ঘস্থায়ী এ যুদ্ধের মিশন নিয়ে মার্কিন জনগন মুখ খুলতে শুরু করে। অর্থনীতিতেও ব্যপক প্রভাব ফেলতে শুরু এই অর্থহীন যুদ্ধ।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জোসেফ বাইডেনের জাতির কাছে ওয়াদা করেছিলেন জিতলে আমেরিকানদের ফিরিয়ে আনবেন আফগানিস্থান হতে।
যেকোন বিচারে ওসাম বিন লাদেন উত্তর আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতি ছিল অবৈধ। জোর করে অন্য একটা দেশ দখলকরে সেখানে কালচারাল ওয়ার চালিয়ে যাওয়ার জন্যে মার্কিনিদের ম্যান্ডেট দেয়নি জাতিসংঘ। তাতে সমর্থন ছিলনা অধিকাংশ মার্কিনিদের।
আফগানিস্তান আফগানদের। মার্কিনি অথবা সোভিয়েতদের ওখানে স্থায়ীভাবে আস্তানা গাড়ার অধিকার ছিলনা।
জাতি হিসাবে আফগানরা যদি সিদ্ধান্ত নেয় শরীয়া নামের জংলি শাসন কায়েমের, সিদ্ধান্ত তাদের।
পায়ের পাতার উপর কাপড় পরা যদি নারীদের অপরাধ হয় এবং সে অপরাধে তাদের প্রকাশ্যে পেটানো হয়, সেটাও আফগান ম্যাটার।
মার্কিনি অথবা ইউরোপীয়ানদের এ নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন কারণ আছে বলে মনে হয়না।
তবে দেশটার মাটিতে যদি ওসাম বিন লাদেনদের মত শুয়র জাতীয় কোন মানবপশু আশ্রয় নিয়ে বাইরের পৃথিবীর দিকে হাত বাড়ায়, সে হাত গুড়িয়ে দেয়ার অধিকার গ্লোবাল অর্থনীতির বাকি সদস্যদের নিশ্চিত থাকাটা খুবই জরুরি।