পুতিনের এক লাখ চল্লিশ হাজার সৈন্য প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেইনকে চারদিক হতে ঘিরে রেখেছে। আজকের খবর, এই কাফেলায় আরও যোগ দিচ্ছে নৌ ও আকাশ পথের সেনারা। মোবিলাইজ করছে মেডিক্যাল ইউনিট। সীমান্তের দিকে টেনে আনছে ব্লাড ব্যাংক। সব বিচারে রুশরা প্রস্তুত ২০১৪ সালের ইউক্রেইন অভিযানের পুনরাবৃত্তি করতে।
পুতিন তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেইনে সামরিক অভিযানের চুলকানি হিসাবে ব্যবহার করছে কথিত বার্লিন চুক্তি। সমসাময়িক কালের নিকৃষ্টতম এই ডিক্টেটরের মতে, ১৯৯০ সালে বার্লিন দেয়াল অপসারণের শর্ত হিসাবে মার্কিন এলায়েন্স কথা দিয়েছিল প্রাক্তন ওয়ারশভুক্ত পূর্ব ইউরোপের কোন দেশকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেবেনা। মার্কিনীরা তাদের কথা রাখেনি। খোদ পোল্যান্ড এখন ন্যাটোর সদস্য। ইউক্রেইনও সদস্য পদের জন্যে আবেদন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতি গোটা রাশিয়ার অর্থনীতির দ্বিগুণ। এটাই আজকের বাস্তবতা। গ্যাস ও তেল বিক্রি রুশ অর্থনীতির মূল উপাদান। তাদের ভাণ্ডার হতে নিউক্লিয়ার আর্সেনাল মাইনাস করলে আজকের রাশিয়া তৃতীয় বিশ্বের যে কোন উন্নয়নশীল দেশের প্রতিচ্ছবি। এমন একটা দেশে পুতিন অতীত রাশিয়ার জারদের মত ক্ষমতার সিংহাসনে পোক্ত হয়ে বসেছেন। গোটা রুশ জাতিকে রূপান্তরিত করেছেন প্রাণহীন সবজি জাতিতে।
কথা চলছে কি করে পুতিনকে চীনা প্রেসিডেন্ট শী'র কায়দায় আজীবন ক্ষমতায় রাখা যায়। এর জন্যে দেশটার শাসনতন্ত্র সংশোধনের পায়তারা হচ্ছে। স্বভাবতই এমন রমরমা সময় বেরসিক ইউক্রেনিয়ানরা তাদের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছে গণতন্ত্র নামের মার্কিন দাওয়াই। পুতিনের আসল ভয় এখানেই। আরেক প্রতিবেশী বেলারুশের মত ইউক্রেইনেও প্রয়োজন এক ব্যক্তির স্বৈরশাসন ও পুতিন ভক্তি। কেবল এসব নিশ্চিত করে গেলেই রুশ জাতিকে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব জারতন্ত্রে।
ইউক্রেইন একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতি। ওরা এখন সোভিয়েত কায়দার একদলীয় শাসন হতে বেরিয়ে বহুদলীয় দলীয় গণতন্ত্রের চর্চা করছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করছে পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে। এই জাতি কোন পথে যাবে তা ডিকটেক্ট করার কোন অধিকার রাখে না বাইরের কোন দেশ অথবা শক্তি। হোক তা রাশিয়া অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটো জোটে যোগ দিলে রাশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এমন দাবি হাস্যকর ও অবৈধ।
রাশিয়া এখন কোন হিসাবেই পরাশক্তির কাতারে পড়েনা। তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেবল জ্বালানি বিক্রির মাঝে সীমাবদ্ধ। তাই বাইরের দুনিয়া দূরে থাক, খোদ প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর তার কোন প্রভাব নেই। কিছুদিন পর পর প্রতিবেশী দুর্বল দেশগুলোর সীমান্তে শক্তির মহড়া দেখিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। রাশিয়া এখন মরা হাতি। এই হাতী গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্যে লায়াবিলিটি, হুমকি নয়। ক্ষমতা অপব্যবহারের এই ভাগাড়ে পশ্চিমাদের হুমকি দেয়ার কোন গ্রাউন্ড নেই।
এক ব্যক্তির স্বৈরশাসন চিরস্থায়ী করার জন্যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খুবই জরুরি। বিশেষকরে রুশ দেশে। ঐতিহাসিক কারণে যুদ্ধ রুশদের জন্যে সেনসিটিভ একটা বিষয়। এ বিষয়কে কাজে লাগিয়ে পুতিন নিজের ক্ষমতাকেই কেবল ঝালিয়ে নিচ্ছেন।