কথাটা বোধহয় রুশ লেখক আন্তন চেখভ'এর..In a human being everything should be beautiful: the face, the clothes, the soul, the thoughts. . . .
রাশিয়া সুপার পাওয়ার। অন্তত এমনটাই আমরা জেনে এসেছি। চেখভের সংজ্ঞা আমলে নিলে মনুষ্য সংজ্ঞার মত সুপার পাওয়ারের সংজ্ঞায়ও সবকিছু সুপার হওয়া বাঞ্ছনীয়। জলে, স্থলী অন্তরীক্ষে থাকা চাই একচেটিয়া প্রাধান্য। ঘরে বাইরে থাকবে অবিভক্ত ও অবিচ্ছিন্ন সমর্থন।
তিন সপ্তাহ পেরিয়ে চার সপ্তাহে পা দিতে যাচ্ছে রুশদের ইউক্রেইন অভিযান। রাশিয়া নামের যে পরাশক্তিকে আমরা জেনে এসেছি সব হিসাবে তাদের এতদিনে কিয়েভের Khreshchatyk street'এ ভদকা উৎসব করার কথা।
পুতিনের হিসাবে কি তাহলে গোলমাল হয়ে গেল? জনসমর্থন-হীন পরভূমিতে রুশ সৈন্যরা কি তাহলে মনোবল হারিয়ে ফেলল?
কয়েকজন জেনারেল সহ প্রায় ৫০০ সৈন্য নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান খোদ রুশরাই স্বীকার করে নিয়েছে। নিশ্চিতভাবে বলা যায় এ সংখ্যা ৪/৫ গুন বেশী হবে। কারণ যুদ্ধ প্রচারণা ও মাঠের বাস্তবতার এমনটাই আসল চিত্র।
একাধিক চেষ্টার পর ইউক্রেইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে আটকে-পড়া স্থানীয় দুজনের সাথে কথা বললাম। বাঁচা মরার ব্যপারে তাদের ডিফায়েন্স সব হিসাব কেমন যেন এলোমেলো করে দিল।
তাদের মতে, শীতে কাবু রুশ সৈন্যরা ট্যাংক সহ অন্যান্য সামরিক যানে আটকে আছে। নিয়মিত খাবার আসছে না সীমান্তের ওপার হতে। আসছে না এমুনেশন রিপ্লানিশমেন্ট। তাই অনেক সৈন্য সামরিক কাফেলা ছেড়ে বনে-জঙ্গলে পালাচ্ছে।
বাস্তবতা খোদ পুতিনও উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। তাই বদলাচ্ছেন গলার সুর। কিয়েভের দ্রুত দখল নিয়ে ভিক্টর ইয়ানুকভিচের মত কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে পুতুল নাচ দেখার স্বপ্ন ভাঙ্গতে শুরু করেছে স্তালিন ভক্ত এই স্বৈরশাসকের। ইউক্রেইন নিজদের নিউট্রাল কান্ট্রি হিসাবে ঘোষণা দিলেই নাকি সৈন্যদের ফিরিয়ে নিতে রাজি আছেন তিনি।
চীনের কাছে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য চাওয়া, সন্মুখ যুদ্ধের জন্যে সিরিয়ান জঙ্গিদের রিক্রুট করা, সবকিছু এক করলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় রুশদের ইউক্রেইন অভিযান প্লান মাফিক এগুচ্ছেনা। গতকাল জাতির উদ্দেশ্য পুতিনের হিংস্র ও উত্তেজিত ভাষণ তেমন কিছুরই ইঙ্গিত দেয়।
যুগোস্লাভ প্রেসিডেন্ট স্লবোদান মিলশোভিচের কথা নিশ্চয় পাঠকদের মনে আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও রুশ দেশে পুতিনের উত্থানের সাথে কোথায় যেন যুগোস্লাভ এই নেতার উত্থানেরও মিল আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের মত যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে জন্ম দিয়েছিল স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া হার্জে গভিনা, ম্যাসিডনিয়া ও মন্টেনিগ্রোর মত দেশ। রুশদের ভূমিকায় নামতে বাধ্য হয়েছিল সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অব সার্বিয়া।
সার্বিয়ার উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন স্লোবদান মিলশোভিচ। পুতিনের মতই স্বপ্ন দেখতেন ফেডারেল রিপাবলিক অব ইউগোস্লাভিয়া ফিরে পাওয়ার। ইউক্রেইন অভিযানের মতই অভিযান চালিয়ে ছিলেন প্রতিবেশী দেশ ক্রোয়েশিয়া ও বসনিয়া হার্জেগোভিনায়। চেচেনদের মত নিজ দেশের কসভাতে চালিয়েছিলেন গণহত্যা।
ওয়ার ক্রিমিনাল হিসাবে ১৩ বছর জেল সাজার চার বছর পার করার পর জেলেই মারা যান স্লোবদান মিলশভিচ।
অনেকে বলছেন মিলোশভিচের পথেই হাঁটছেন পুতিন।
ন্যাটোর নিশ্বাস হতে মুক্তি পেতেই নাকি ইউক্রেইন আক্রমণ, কোটি কোটি রুশদের এমনটাই বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এক সীমানা নিশ্ছিদ্র করতে গিয়ে তিনি খুলে দিয়েছেন আরও অনেক সীমান্ত। এতদিনের নিউট্রাল দেশ সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটো জোটে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছে। বেলারুশ সীমান্তের ওপারের দেশ পোল্যান্ড সহ বাল্টিক সীমান্তের তিন দেশ এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া, লাতভিয়া ইতিমধ্যে যোগ দিয়েছে ন্যাটো জোটে। আরেক প্রতিবেশী রুমানিয়া এখন ন্যাটোর ছাতার নীচে। এসব ছোট দেশ অনেক আগেই ধারণা করতে পেরেছিল ন্যাটো জোটে যোগ না দিলে পুতিন ও তার বংশধরেরা হাত বাড়াবে তাদের দিকে। এ ভয় চেপে বসছে সুইডিশ ও ফিনিশদের মনে।
যুদ্ধ একসময় থামবে। সৈন্যরা ঘরে ফিরে যাবে। দিনশেষে সবাই ফিরে যাবে স্বাভাবিক জীবনে। কেবল হিটলারের কাতারে নিজের নাম লিখিয়ে পুতিন বেঁচে থাকবেন ইতিহাসের আস্তা-কুড়ে।