মারিওপোল নামের শহরে আমার যাওয়া হয়নি। ২২৭ কিলোমিটার দূরের জাপোরঝিয়ে শহর দিয়ে শুরু হয়েছিল আমার সোভিয়েত যাত্রা। একই স্কুলের পাবলোকিসকাস নামের শহরতলির ছোট ও আইসোলেটেড ভাষা স্কুলে রুশ ভাষার প্রথম হাতেখড়ি। ডাউন-টাউন এলাকার ট্রাফিক জ্যাম, ব্যস্ত দোকানপাট ও রেস্টুরেন্ট নিয়ে আর দশটা ইউরোপিয়ান শহরের মতই ছিল এ শহরের জীবন। দিনেপ্রর নদীর উপর মনোরম হাইড্রোলিক বাঁধ দেখতে ইউরোপের অনেক দেশের মানুষ পৃথিবীর এ প্রান্তে ভিড় জমায়। ইউরোপের অন্যতম বড় নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন ধারে কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি কারণ সোভিয়েত শাসন ব্যবস্থায় ওসব জায়গায় বিদেশীদের যাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
জাপারোঝিয়ে ও মারিওপোল অনেক কারণে এক অপরের উপর নির্ভরশীল। অর্থনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও ওরা এক ও অভিন্ন।
প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের মারিওপোল শহর এখন মৃত। শহরের সব দালান-কোঠা ক্ষত-বিক্ষত ও বসবাসের অযোগ্য। বেওয়ারিশ কিছু কুকুর ছাড়া রাস্তায় জনজীবনের স্পন্দন নেই। কিছু মানুষ বিধ্বস্ত দালানের নীচের কুঠুরিতে লুকিয়ে আছে। প্রতি দশ মিনিট অন্তর ছুটে আসছে রাশানদের ব্যালেস্টিক মিসাইল।
যাদের জানা নেই তাদের প্রশ্ন, এত শহর থাকতে মারিওপোল কেন?
হিসাব খুব একটা জটিল না। আজব সাগরের তীরে অবস্থিত মারিওপোল হচ্ছে ইউক্রেইনের অন্যতম পোর্ট। এখান হতে বন্দর নগরী কেরচ হয়ে এ সাগর মিশে গেছে ব্ল্যাক সী'তে। এবং ওখানেই ইউক্রেইনের প্রধান বন্দর নগরী ওডেসা, যা বাইরের পৃথিবীর সাথে ইউক্রেইনের যোগাযোগের অন্যতম পথ। মারিওপোলকে আটকানো গেলে অর্ধেক ইউক্রেইনকে ভাতে মারা সহজ হবে রাশিয়ার পক্ষে। এ বন্দরের দখল নিয়ে তা নব্য ঘোষিত দুই 'স্বাধীন' দেশের জন্যে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্মুক্ত করাও সহজ হবে দখলদারদের জন্যে।
আজ হঠাৎ করে রুশ ডিফেন্স মিনিষ্ট্রি (আসলে তা হবে রুশ ট্যবলয়েড, যাচাই করে পাওয়া) ইউক্রেইনে যুদ্ধে তাদের নিজস্ব ক্ষয়ক্ষতি প্রকাশ করে যার অন্যতম ছিল মোট ৯,৮২০ জন রুশ সৈন্যের মৃত্যু। পরিসংখ্যানটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি মিনিষ্ট্রির বুলেটিন। ক্রেমলিনের চাপে তা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়। দেশটায় ফেইসবুক, টুটার সহ পশ্চিম দুনিয়ার সব সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ। কেবল আমাদের বিটিভির মত রুশ টিভি চ্যানেল দিনরাত চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রচারণা।
যুদ্ধের শুরুতে পুতিন এক মাস সময় চেয়েছিল তার নাগরিকদের কাছে। কিয়েভকে 'নাৎসি' মুক্ত করার পর ওখানে রুশ-বান্ধব সরকার দেখার স্বপ্ন দেখিয়েছিল রুশদের। সব বিবেচনায় বলা যায়, স্বপ্ন হতে পুতিন এখন অনেক দূরে। নিজের ব্যর্থতায় উন্মত্ত হয়ে এখন বাড়ি-ঘর, হাসপাতাল, ডে-কেয়ার, স্কুল কলেজে দূরপাল্লার হাইপারসনিক মিসাইল ছুড়ছেন। উদ্দেশ্য, ইউক্রেইনদের মনোবল ভেঙ্গে জেলেনস্কির বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়া।
পুতিন কি ইউক্রেইনে যুদ্ধাপরাধ করছেন? প্রশ্ন অনেকের। পশ্চিমা দেশের অনেকে অনেক উপাত্ত সংগ্রহ করছেন ভবিষ্যতের জন্যে। সার্বিয়ান কসাই স্লোবদান মিশসোভিচের কায়দায় আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের পুতিনের বিচারের রাস্তা খুঁজছে অনেক দেশ।
সমস্যা হচ্ছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। সমীকরণ খুব সোজা, স্বাক্ষর করলে তার পার্টনার-ইন-ক্রাইম ইসরায়েলকে বিচারের মুখোমুখি করায় সহযোগিতা করতে হবে।
রুশ-ইউক্রেইন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে, যার প্রতিফলন ঘটবে বাকি বিশ্বের ঘরে ঘরে। একদিকে জ্বালানি তেল, গম ও সয়াবিন তেলের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ ব্যহত হবে।
Pictures: Mariopoul today from American propaganda machine! Photoshopped by CIA/FBI!
লিংকের ভিডিও মারিওপোলে ঘটেনি...সবটাই পশ্চিমাদের প্রচারণা!
https://www.independent.co.uk/news/world/europe/pregnant-woman-ukraine-death-baby-b2035184.html