অনেকটা এনক্লেভের মত যুক্তরাষ্ট্রের এই অঙ্গরাজ্য। এক্সট্রিম উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত এই অংশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের কোন সীমান্ত নেই। পূব দিকে কানাডার ব্রিটিশ কলোম্বিয়া ও ইউকন টেরিটরি। পশ্চিমে বেরিং ও চুকচি সাগর পার হয়ে রাশিয়া। হ্যাঁ, রাশিয়ার সাথেও আমেরিকার সীমান্ত আছে, তবে তা মেরিটাইম সীমান্ত।
আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বড় অঙ্গরাজ্য। আয়তনে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্থানে অবস্থিত যথাক্রমে টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া ও মন্টানার সম্মিলিত আয়তনের চাইতেও বড়। রাজধানী জুনিয়াও আয়তনের বিবেচনায় আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। প্রথম বৃহত্তম শহর হচ্ছে আলাস্কারই প্রাক্তন রাজধানী সিটকা।
প্রায় ৮ লাখ জনসংখ্যার এই অঙ্গরাজ্যের জনগণের মাথাপিছু আয় আমেরিকার প্রথমদিকের একটি।
তেল, গ্যাস, সোনা দানা সহ পৃথিবীর এ প্রান্ত খনিজ সম্পদের উপর ভাসছে। তার উপর রয়েছে ক্রমবর্ধমান ট্যুরিজম।
ইউরোপিয়ান দখলদারদের আগমনের আগে হাজার হাজার বছর ধরে আদিবাসীদের দখলে ছিল এ অঞ্চল। ১৮ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিয়ারিং প্রণালী ধরে ইউরোপ হতে রুশরা প্রথম পা রাখে আলাস্কার মাটিতে। স্থাপন করে উত্তর আমেরিকায় রাশান আমেরিকা।
যোগাযোগ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল হওয়ায় রুশ জার পিটার দ্যা গ্রেট ১৮৬৭ সালে ৭২ লাখ ডলারে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দেয়। আজকের মুদ্রা মানে যার মূল্য হবে ১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আদিবাসী আমেরিকানদের সংখ্যা এই অঙ্গরাজ্যে শতকরা ১৫ জন। অন্য যে কোন অঙ্গরাজ্যের চাইতে বেশি। ২৪টার মত আদিবাসী ভাষাও চালু আছে এখানে। স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব আদিবাসীদের।
রুশদের ইউক্রেইন ইনভেশনের কারণে কার্যত তারা বাকি বিশ্ব হতে বিচ্ছিন্ন। জলে, স্থলে অন্তরীক্ষে তাদের চলাফেরা একেবারেই সীমিত। রুশদের জন্যে বাকি বিশ্বের আকাশ সীমা যেমন নিষিদ্ধ তেমনি রুশরাও নিষিদ্ধ করেছে তাদের আকাশসীমা। আকাশপথে ইন্টারকন্টিনেন্টাল যোগাযোগে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাড়ছে আলাস্কার অন্যতম ব্যস্ত ও উন্নত শহর এঙ্কোরেজের গুরুত্ব। রুশদের ইউক্রেইন অভিযান দীর্ঘায়িত হলে জ্বালানি তেলের স্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে সামনে আসবে এঙ্কোরেজ। ইতিমধ্যে অনেক দেশের বিমান শুরু করেছে এর ব্যবহার।
ভদকাখোর রুশদের মগজে এতদিনে ঢুকেছে আমেরিকার কাছে পিটার দ্যা গ্রেটের আলাস্কা বিক্রি ছিল ভুল। কদিন আগে ওয়ান ম্যান শো রাশান পার্লামেন্ট ডুমার কয়েকজন সদস্য হুমকি দিয়েছেন আলাস্কা ফিরিয়ে না দিলে যুদ্ধ করে তা উদ্ধার করা হবে।
পৃথিবীর অন্যতম 'শক্তিশালী' দেশ রাশিয়া যুদ্ধ করছে ইউরোপের দুর্বল ও দরিদ্র দেশ ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে। তা আজ প্রায় একমাসের উপর। কথা-ছিল যুদ্ধ শুরুর ৭দিনের ভেতর পুতিন বাহিনী কিয়েভের মুল স্কয়ারে ভদকা পান করে বিজয় উল্লাস করবে। জালেনস্কি নামের ষ্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসাবে নতুন এক ইয়ানোকভিচকে। দেখার বিষয় পুতিন বাহিনীর আলাস্কা দখলে ক্রেমলিন কতটা সময় বেঁধে দেয়; ৭ দিন, না ১৫ দিন! এবং ওখানকার রিপাবলিকান গভর্নরকে সরিয়ে পলিটব্যুরোর কোন সদস্যকে ক্ষমতায় বসান!
অপেক্ষা রইলাম একবিংশ শতাব্দির রুশ জার ভ্লাদিমির পুতিনের আলাস্কা উদ্ধার অভিযান দেখার জন্যে!!!