রুশদের ইউক্রেইন আক্রমণের ঊষালগ্নে পাকি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গেলেন রাশিয়া সফরে। দেখা করলেন সময়ের আলোচিত সমালোচিত নায়ক ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে।
যারা পাকিস্তান ও তার অতীত ইতিহাসে সাথে পরিচিত তাদের চোখ মাথায় উঠার অবস্থা! পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু, 'পার্টনার ইন ক্রাইম'। সেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনের চরম মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু শিবিরে মেহমান হয়ে হাজির হলেন।
একটু ভেতরে ঢুকে খান সাহেবের সফর নিয়ে ভাবতে গেলে একটু ভ্যাবাচেকা খেতে হয়।
প্রথমত; কি ছিল এই সফরের উদ্দেশ্য; দ্বিতীয়ত, কি পেলেন এ সফরের মাধ্যমে।
দুই প্রশ্নের জবাবই শূন্য। একটা দেশ অন্য আরেকটা দেশে আগ্রাসন চালাচ্ছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ, যার সাথে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে, তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে হাত মেলালেন পুতিনের সাথে। পুতিনের রাশিয়া পাকিস্তানকে এক তেল ও অস্ত্র ছাড়া তৃতীয় কিছু দেয়ার মত ক্ষমতা রাখে না। ঐ মুহূর্তে পাকিস্তানের কতটা জরুরি ছিল রাশিয়ার অস্ত্র তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে! তাহলে ইমরান খান কি আগ বাড়িয়ে সক্ষম হননি সফরের সমীকরণ কষতে? যদি না পেরে থাকেন, তাহলে তিনি মাথায় মগজ নিয়ে এতদিন দেশ শাসন করেননি।
আসলে ইমরান খান ভাল করেই জানতেন সফরের আউট-কাম। শূন্য!
তিনি এটাও জানতেন পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হারাতে যাচ্ছে তার সরকার। ট্রাম্প-কার্ড হিসাবে ব্যবহার করলেন নিজ দেশের এন্টি আমেরিকান সেন্টিমেন্ট। যেহেতু রাশিয়া সফরে গেছেন তাই যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্র করছে, তৃতীয় বিশ্বের জনপ্রিয় ন্যারেটিভ। জনগণের চেতনায় সুড়সুড়ি দেয়ার জন্যে আমেরিকাকে দায়ী করলেন। তবে
পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থাকে গেলানো যায়নি ইমরানের আমেরিকা ট্যাবলেট। ফলে যা হওয়ার তাই হল, আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হতে বিদায় নিলেন।
পাকিস্তানে গণতন্ত্রের চাইতে হাজার-গুন শক্তিশালী দেশটার গোত্র-তন্ত্র। গোত্র ও গোত্রের নেতারাই নির্ধারণ করে থাকেন প্রদেশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের গতি প্রকৃতি। ভেতর ঘাঁটলে দেখা যাবে ওসব নেতারা এখনও পাথর যুগে বাস করেন। চার বিবির পাশাপাশি অনেকেই স্থানীয় বাজার হতে কোমল কোন তরুণকে ক্রয় করে সাথে রাখেন পশ্চাৎদেশ ব্যবহারের জন্যে। এসব নেতাদের কাছে আমেরিকা রাশিয়া কোন ফ্যাক্টর না, তাদের জন্যে আসল হচ্ছে টাকা! এই টাকাই নির্ধারণ করে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনদের ভাগ্য। নওয়াজ শরীফ ও জারদারি পরিবারের টাকার অভাব নেই। গোত্রের নেতাদের ক্রয় করার জন্যে পকেট খুললেই যথেষ্ট। ওদের হাতের পুতুল স্থানীয় পার্লামেন্ট সদস্যরা।
ইমরান ফেরেশতা নন, পাকিস্তানের কলুষিত রাজনীতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। লেনাদেনার খেলায় হেরে গেছেন তিনি। তবে অতীত ক্ষমতার পালাবদলের সাথে এবারের পালাবদলের পার্থক্য হচ্ছে, সবিকছু হয়েছে শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে। মাঝখানে আমেরিকার দিকে আঙ্গুল তুলে তিনি হয়ত নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলেন।