শান্ত হয়ে গেছে রাতের প্যারিস। জানালার বাইরে ব্যস্ত রাস্তা এখন নিঝুম। মানুষ দূরে থাক, গাড়িরও কোন শব্দ নেই। থেমে থেমে এম্বুলেন্সের কর্কশ সাইরেন রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে খান খান করে দিচ্ছে। হয়ত কোথাও কিছু একটা ঘটেছে, ওদিকেই ছুটছে ওরা। আমারও ব্যস্ত একটা দিনের শেষ। আগামীকাল রাত ১২টার পর লন্ডন-গামী বাস ধরবো এবং পথে কোন অসুবিধা না হলে ভোরের দিকে পৌঁছবো।
প্যারিস অথবা ফ্রান্স, এ দুটোর উপরই লুকানো কিছু দুর্বলতা ছিল। ইতিপূর্বে আসা হয়নি অনেক কারণে।
সময়টা গেল শতাব্দীর ৭০ দশকের শেষদিকের। প্রথমবারের মত ব্রিটেনে প্রবেশ করার ভিসা পেয়েছি। স্বভাবতই উত্তেজিত।
প্রাক্তন সোভিয়েত দেশের সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে ফ্রান্সের কনস্যুলেট আছে জানতাম। তাই অনেকটা ভাগ্য পরীক্ষা করার জন্যে হানা দিলাম ওখানে। উদ্দেশ্য দেশটার ভিসা।
ফ্রান্স যাওয়ার উদ্দেশ্য জানতে চাইলো ওরা। নেদারল্যান্ড অথবা বেলজিয়াম হয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করার পরিবর্তে কেন ফ্রান্স হয়ে ঢুকতে চাচ্ছি তার ব্যখ্যা চাইলো। আমি বললাম নতুন দেশ দেখার ইচ্ছা। ওরা সন্তুষ্ট হল না। আমাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করলো।
ওটাই ছিল আমার লম্বা প্রবাস জীবনের প্রথম ও শেষ দেশ যারা ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল। বয়স কম, তাই হতাশ হলেও আশা ছাড়িনি। কিন্তু একটা সময় এই অস্বীকার গলার কাঁটা হয়ে ফিরে এসেছিল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ওদিকে কোনদিন পা বাড়াবো না।
ছেলে-মেয়ে ও গিন্নীকে কথা দিয়েছিলাম লন্ডন নিয়ে আসার। আর এখানে আসতেই মনে হল প্যারিস তো ঘরের কাছে। ইউরোস্টারের ট্রেনে ঘণ্টা দুই জার্নি মাত্র। আমার প্রস্তাব শুনে ওরাও উত্তেজিত আর আমিও আমার কৈশোর স্মৃতির একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি টানতে পেরে আনন্দিত।
নিজকে কেন জানি এ মুহূর্তে বিখ্যাত সব রুশ লেখকদের আসনে বসাতে ইচ্ছে করছে । ফেঁদোর দস্তায়েভস্কি, নিকোলাই নেকরাসভ, ইভান তুর্গেনেভদের লেখা ধরেই যে প্যারিসের সাথে পরিচয়!