শনিবার রাত। নীচ তলার ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছি। সকালে ঘুম ভাঙ্গার তাড়া নেই, তাই লম্বা সময় ধরে HULU চ্যানেলে মুভি দেখার প্রস্তুতি নিয়ে বসেছি। উপর তলার টিভির সামনে এসব মুভি দেখতে গেলে বাচ্চাদের সামনে বিব্রত হতে হয়। ভাষার এদিক সেদিক হলে ছেলে মেয়ে দুজনেই আঁতকে উঠে, চ্যানেল চেঞ্জ করে অন্যকিছু দেখের অনুরোধ করে। অবশ্য এ শিক্ষা আমার নিজের দেয়া, তাই না করার উপায় নেই।
হঠাৎ বাইরের আসমান জমিন আলোকিত হয়ে গেল। আলোর ঝলকানি ভেতরে প্লাবন বইয়ে দিল। সাথে কড়াৎ কড়াৎ শব্দে গোটা পৃথিবী কেঁপে উঠল। এ খেলা কিছুক্ষণ চলার পর আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এলো।
জানালার কিছু অংশ খুলে দিলাম। পর্দা ঠেলে বৃষ্টি ভেতরে ঢুকছে। ভিজে যাচ্ছে সবকিছু। হঠাৎ মনে হলো, আসুক বৃষ্টি, ভিজে যাক সবকিছু।
একটা বছর ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। রোদ আর গরমের নীচে বলি হয়ে তামা তামা হয়ে গেছে বাইরের পৃথিবী। গাছা পালায় বিষণ্ণতার ছাপ। আপেল গাছটায় যেক'টা আপেল ধরেছিল সবগুলো অকালে ঝরে পরেছে। আঙ্গুরের থোবরা গুলো গাছে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। রুক্ষ পশ্চিমের জন্যে টিপিক্যাল দু'চার মিনিটের বৃষ্টি না, বাংলাদেশের শ্রাবণের ভরা বর্ষণ। ষোল বছর ধরে আছি এ শহরে। এমন দৃশ্য এই প্রথম। যে বৃষ্টি হওয়ার কথা জুন মাসে সে বৃষ্টি মুখ খুলছে আগস্টের শেষ সপ্তাহে।
ব্যাক-ইয়ার্ডের চাষাবাদ নিয়ে আমার উচ্ছ্বাস অতি পুরানো। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেককে জ্বালিয়েছি। কিন্তু এ বছর মে মাসেই বুঝা গিয়েছিল অন্যরকম হবে এবারের গ্রীষ্ম।
জুন-জুলাই মাসের গরম মাটি সহ্য করতে পারেনি। হোম ডিপোট হতে কেনা ৪টা টমেটো ও দুটো ক্যাপ্সিগামের চাড়া এক সপ্তাহ টিকেনি। চাষাবাদের হাল ছেড়েছি জুনের শুরুতেই।
শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি এলো। কবে কখন জুকিনির বীচি লাগিয়েছি খেয়াল ছিলনা। তবে বীচি হতে চাড়া গজিয়ে মরি মরি করছিল। সেই মৃত্যু পথযাত্রী জুকিনি (এক ধরণের সবজি) গাছ হঠাৎ করেই যৌবনের সাজে সজ্জিত হয়ে আমাকে টিটকারি দিল যেন!
মানি আর না মানি, প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। উত্তপ্ত হচ্ছে আমাদের পৃথিবী। ফসিল ফুয়েলের প্রভাব হারে হারে টের পাচ্ছে আমাদের এতদিনের পরিচিত বাসভূমি।
মার্কিন গাড়ি নির্মাতাদের প্রায় সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০৩৫ সালের পর আর কোন পেট্রোল ডিজেলের গাড়ি তৈরি করবেনা। সবটাই হবে প্রকৃতি বান্ধব এনার্জি চালিত। এবং তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরলেও এর পজিটিভ প্রভাব অনুভব করতে লেগে যাবে আরও ৫০/১০০ বছর। এ ফাঁকে জন্ম নেবে নতুন নতুন পুতিন, হাসিনা...পৃথিবী হবে আরও বিষাক্ত, বেঁচে থাকা হবে কঠিন, নির্মম।