মেনুতে ছিল কেবল লালশাক। ভাতের পরিমাণও ছিল সামান্য। সাধারণত সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সেরে নেই রাতের খাবার। ঘড়ির সময়ে ৬টা হতে ৭টার ভেতর। ঝাঁকিয়ে নেমেছে শীত। বাইরের তাপমাত্রা -৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যদিও কাগজে কলমে এখনো শরত কাল।
ব্যস্ত কর্ম-দিবসের পর কম্বলের নীচে আশ্রয় নেয়ার সাথে কোথায় যেন কিছু সুখের সখ্যতা আছে। এ সুখ তৃপ্তির সুখ। ভাল থাকার সুখ। এ মুহূর্তে কেবল যাপিত দিনটাই নয়, গোটা জীবনের সমীকরণ মেলাতে গেলে কোথাও কোন অমিল খুঁজে পাবোনা। কারণ দিনশেষে টেবিলে যে খাবার উঠে তাতে নেই কোন ভেজাল। যে অর্থে কেনা এই খাবার তাতেও নেই কোন জটিলতা, হোক তা লাল শাক।
শুয়ে শুয়েই প্রতি রাতে ল্যাপটপটা খুলি। ঘুরে বেড়াই পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে। কড়া নাড়ি নেট দুনিয়ার অনেক দরজায়। মন মেজাজ ভাল থাকলে বসে যাই লেখালেখিতে।
বাসার বেড়ালটা ওত পেতে থাকে কখন লিয়া লিয়াম ঘুমাবে। নিশ্চিত হওয়া মাত্র আমার বুকের উপর চেপে বসে। ওখানে ল্যাপটপ থাকলে মন খারাপ করে পায়ের উপর ঘুমাতে যায়। ১০টার ভেতর প্রকৃতি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সবাই যখন ঘুমাতে শুরু করে, আমার কেবল শুরু হয় তখন।
আসলে জীবন নিয়ে কোন অভিযোগ নেই, নেই তেমন কোন আক্ষেপ। তাই একধরণের সন্তুষ্টি নিয়েই প্রতি রাতে ঘুমাতে যাই।
নেট দুনিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্যে শুরু হয়েছে নির্বাচন সুনামি। বদলে গেছে জীবনের গতি প্রকৃতি। এ বাস্তবতা ২২ গজ কাপড় মুড়েও লুকানোর উপায় নেই যে নির্বাচন মানে কেবল আওয়ামী লীগ। এই দলের মনোনয়ন মানে বিজয় গ্যারান্টেড। আমেনা-জরিনা নামের বিরোধী কিছু সাইড শো থাকলেও দিনশেষে ওরা আওয়ামী সমীকরণেরই বাই-প্রোডাক্ট। এই দলের নেত্রীর দয়া ভিক্ষার বেনিফিসিয়ারী।
আন্তর্জাতিক হিসাব মতে এ মুহূর্তে দেশের প্রায় ১ কোটি নাগরিক ফেরারি। হামলা মামলা হতে বাঁচার জন্যে পালিয়ে বেড়ায়। প্রতি রাতে ঘুমের জন্যে সন্ধান করে নতুন নতুন ঠিকানা।
বিনাভোট ও রাতের ভোটের পর আমারও আগ্রহ ছিল কোন পথে এ যাত্রায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখবে। গেল বারের মত এ যাত্রায় কোন রাখ-ঢাক নেই সরকার প্রধানের। যারাই তেনার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দেবে তাদেরই জেলে পাঠাতে হবে। তার জন্যে আইন ও বিচার ব্যবস্থার পরিকল্পনায় পারফেক্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। যানবাহনে আগুন লাগাও, মামলা দাও এবং আদালতের সহায়তায় সম্ভাব্য আন্দোলনকারীদের জেলে ঢুকাও। জাতীয় নেতা হতে শুরু করে জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকেও ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় প্রধান। কারণ নির্বাচন ছাড়া হারানোর মত তেমন কিছু বাকি নেই তেনার।
নেত্রী শেখ হাসিনা তার সর্বশেষ জন্মদিন পালন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এ সময়টায় তিনি এ দেশে ছিলেন। ফ্যামিলি এলবাম হতে প্রকাশিত জন্মদিনের ছবিতে বলা হয়েছে মা তার জন্মদিন পালন করেছেন ছেলের ভার্জিনিয়াস্থ গালফ ক্লাবে। কর্ম উপলক্ষে এ দেশের বেশ কটা গালফ ক্লাব ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। এই খেলার অনেক খুঁটিনাটিও শিখে ফেলেছি ইতিমধ্যে। ১৮টা গর্তে বল ফেলার এই খেলায় মাঠের আয়তন বাংলাদেশের অনেক ছোট শহরের আয়তনের সমান হতে হয়, তা না হলে গালফ এসোসিয়েশনের স্বীকৃতি মেলেনা। আর স্বীকৃতি না মিললে গালফ ব্যবসা মাঠে মারা যেতে বাধ্য।
কত টাকার মালিক শেখ হাসিনার পুত্র জয় ওয়াজেদ? এ নিয়ে অনেক সংখ্যা বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। তবে এক গালফ ক্লাবের মালিক বনতে তিনি যে বিলিয়ন ডলারের উপর বিনিয়োগ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ এমন অংক ছাড়া এ দেশে এ ব্যবসায় হাত দেয়া যায়না। নিজের মালিকানাধীন গালফ ক্লাবে তোলা ছবি যদি সত্য হয়ে থাকে তবে একটা পরিসংখ্যানে আমি শতভাগ নিশ্চিত ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিলিওনিয়র। এবং তা ডলারে। ১ ডলার সমান যদি ১১০ টাকা হয়, তাহলে ১ বিলিয়ন ডলার সমান ১১ হাজার কোটি টাকা। মাদারীপুর ছাত্রলীগের জনৈক নেতা যদি ২ হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারেন সে তুলনায় জয় ওয়াজেদের সংখ্যাটা সামান্য মনে হতে বাধ্য। অনেকে বলেন জনাব ওয়াজেদ ঐ দেশে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মালিক। যদিও এর পক্ষে কেউ সাক্ষী প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। উল্লেখ্য, অফিসিয়ালি জয় ওয়াজেদের যুক্তরাষ্ট্রে কোন ব্যবসা নেই। নেই কোন চাকরি। নাম সর্বস্ব বেশ কটা ব্যবসার লাইসেন্স নেয়া আছে,যদিও এসব ব্যবসা হতে আয় রোজগারের বৈধ কোন কাগজপত্র মার্কিন ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসে জমা করতে আজ পর্যন্ত সক্ষম হননি।
সামনে নির্বাচন। তোলপাড় চলছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলীয় মনোনয়নের জন্যে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি মাঠ হতে খেলোয়াড়, সিনে জগত হতে নায়ক-নায়িকা, সঙ্গীত দুনিয়া হতে গায়ক গায়িকা মৌ-মাছির মত ছুটে যাচ্ছে দলীয় মনোনয়ন নামের মৌচাকে। বাদ যাচ্ছেনা বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাও।
কি আছে এই মনোনয়নে? কি এমন মধু লুকিয়ে আছে মনোনয়ন নামের সোনার হরিণে?
বাতাসে খবর উড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রাক্তন দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রথম বার যখন মনোনয়ন পত্র দাখিলে করেন নিজ সম্পত্তির মূল্য দেখিয়েছিলেন ১ কোটির কিছু উপরে। ৫ বছর পর জনাব মুর্তজা সম্পত্তির মূল্য দেখাচ্ছেন ৫০০ কোটি টাকার উপর। অর্থাৎ প্রতি বছর তিনি আয় করেছেন ১০০ কোটির কিছু উপর।
জাদু বা ভোজবাজি নয়। রূপকথার গল্পও নয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, মাত্র ৫শ’ টাকার মালিক ৭ বছরের মাথায় শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বৈধ কাগজপত্রেই এর প্রমাণ রয়েছে। দৈনিক যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানেও তার কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ মিলেছে। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বিত্তশালী হয়ে ওঠা এ ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম বাবু। তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সরকার-দলীয় সংসদ সদস্য। খবর প্রকাশের সময় আগস্ট ২, ২০১৫ সাল। গেল ৮ বছরে এই রাজনীতিবিদের সম্পত্তির পরিমাণ কম করে হলেও ৮ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে এমনটা বিশ্বাস করার মত অনেক পরিসংখ্যান আছে আমার ভাণ্ডারে।
বলাহয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ বহুলাংশে দেশের রাষ্ট্রপতি পদেরও উপরে। এই দুই ব্যাক্তি চাইলেই প্রশাসনের যে কাউকে দিনে দুপুরে থাপড়াতে পারে, প্রাইভেট জেট ভাড়া করে উড়ে যেতে পারে দেশের এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে। দশটা খুন করলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বাধ্য নয়।
লেখাপড়া আমিও করেছি। এ সুবাদে পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্না দেয়ার সুযোগ হয়েছে। উত্তর হতে দক্ষিণ আমেরিকা, মরক্কো হতে দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড হতে জাপান, পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন দেশে ছাত্র রাজনীতি নেই যেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ছাত্ররা নিজেদের যুবরাজের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
সব বিচারে এসব নিরেট ক্যান্সার। এ ক্যান্সার ইতিমধ্যে যুব সমাজকে গ্রাস করে নিয়েছে। খুবলে খুবলে খাচ্ছে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।
এক সময় নিজ ঘরে গৃহহারা ফিলিস্তিনি যুবকরা বুকে বোমা বেধে নিজকে উড়িয়ে দিত প্রতিশোধ নিতে। আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে কথা হয়েছিল হেবরন শহর হতে আসা দুই যুবকের সাথে। জিজ্ঞেস করতে ওরা বলেছিল বুকে বোমা নয়, হাতে কলম ও মগজে জ্ঞান আহরণ করেও প্রতিশোধ নেয়া যায়। এবং তাদের মুখের ভাষা ও জ্ঞানের বহর দেখেই বুঝা গিয়েছিল ওদের গন্তব্য। আমাদের কি অবাক হওয়ার কোণ কারণ আছে যখন দেখি বিশ্বের প্রথম সাড়ির দুই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের স্থান নেই? ১০ টাকার ছা ছমুছা যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরব বলে বিবেচিত হয় সেখানে খোদ শিক্ষার মানদণ্ড কি হতে পারে তা বুঝতে আমাদের বিশেষ কোন অসুবিধা হয়না।
আগামী বছর মার্কিন জনগণ নির্বাচিত করবে তাদের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস সদস্যদের। আমিও দেশটার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। দুটি রাজনৈতিক দলের একটার তালিকাভুক্ত সদস্য। আগের বার যাকে ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলাম তাকে নতুন করে নির্বাচিত করতে যাচ্ছিনা। কারণ অনেকের মত আমিও মনে করি তার হাতে ৬ হাজার ফিলিস্তিনি শিশুর রক্ত। তাকে ভোট দেয়া মানে শিশু হত্যার লাইসেন্স দেয়া।
গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় ভোটই হচ্ছে একমাত্র অধিকার যার মাধ্যমে আমার মত একজন সাধারণ নাগরিক ন্যায় অন্যায়, সত্য মিথ্যা আর সুন্দর অসুন্দরের পক্ষে বিপক্ষে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং তা আমেরিকার মত পরাক্রমশালী একটা দেশেও।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সে অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। এবং একই কাজ করেছিলেন পিতা শেখ মুজিবর রহমানও। রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে কতটা অর্থনৈতিক সুবিধা বাগিয়ে নেয়া যায় তার বিশ্ব রেকর্ড করেছে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। সর্বোচ্চ পর্যায় হতে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত রফতানি করা হয়েছে লুটপাট উৎসব। রাজনীতি ও সরকারী চাকরি এখন আয়-রোজগারের আগ্নেয়গিরি। এ হতে লাভা বের হয় এবং এ লাভায় জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে তৈরি হয় নতুন এক প্রজন্ম। এ প্রজন্ম চিন্তা চেতনায় পঙ্গু, মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ।
যে নির্বাচন নিয়ে এত কথা, এত আয়োজন, তার আপাদমস্তকে জনস্বার্থের নূন্যতম সংপৃক্ততা নেই, এ নির্বাচন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের চাবি হাতে পাওয়ার লড়াই। আলী বাবা ৪০ চোরের লুকানো গুপ্তধন খোলার সিসেম ফাঁক মন্ত্র মাত্র।