আমার এই লেখাটার টার্গেটেড একটা অডিয়েন্স আছে, আছে একটা নির্দিষ্ট দেশ ও একটা ধর্ম। নিজকে তিনি গর্বিত ইহুদি হিসাবে দাবি করে থাকেন, ঢাকায় লেখাপড়া শেষ করে বাস করেন মার্কিন মুলুকের ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের কলম্বাস শহরে। এসব তথ্যের সত্য মিথ্যা নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই। নামে মহিলা হলেও আমার সন্দেহ বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষদের কেউ একজন। ভারতীয় হলেও অবাক হবোনা। আমার সৌভাগ্য যে তিনি আমার বন্ধু তালিকার একজন। কারণ বন্ধু তালিকায় বৈচিত্রতা আমাকে আনন্দ দেয়।
বিশেষ একজনকে নিয়ে শেষ কবে লিখেছি তা মনে করতে পারবো না। আমি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। নিজের ভাবনাকে সাজিয়ে গুছিয়ে লেখার চমৎকার প্লাটফর্ম এই ফেইসবুক। আমি সন্মান করি মুক্ত-চর্চার এই প্লাটফর্মকে।
এবং তিনিও সাজিয়ে গুছিয়ে কিছু লিখেছেন যা চাইলেও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বিশ্ব এখন একটা ক্রাইসিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। প্রতি ১৫ মিনিটে একটা করে শিশু মারা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত এলাকা গাজায়। যুদ্ধের দামামা বাজছে পৃথিবীর ঐ অঞ্চলে। গোটা পৃথিবীর মনোযোগ এখন ঐ দিকে।
ভদ্রলোকের দাবি ইসরাইল নাকি মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ। ঐ দেশটাকে বাঁচিয়ে রাখা মানে নাকি আশার আলো জ্বালিয়ে রাখা।
এখানেই আমার আগ্রহ। ইসরাইলের গণতন্ত্র কি ও এর উৎস কোথায় তা না জেনেই ভদ্রলোক এসব নীতিবাক্য আউড়ে গেছেন। সন্দেহ নেই এর পেছনে কাজ করছে একটা বিশেষ ধর্মের প্রতি জন্মগত বিদ্বেষ।
আমি নিজেও ধার্মিক নই। নেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে সামান্যতম বিশ্বাস। কিন্তু এও বিশ্বাস করি আমার বিশ্বাস আমাকে অধিকার দেয় না বিশ্বের ১.২ বিলিয়ন মানুষের বিশ্বাসকে হেয় করার। নোংরামি করে কিছু মানুষের সস্তা বাহবা নেয়ার। আমার বিশ্বাস অবিশ্বাস একান্তই আমার নিজের। একটা সমাজে এই দু'ইয়ের শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের অপর-নামই হচ্ছে গণতন্ত্র।
এবার আসুন ইসরায়েলই গণতন্ত্রে। একজন গর্বিত ইহুদির জানা থাকার কথা ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের জন্ম ও বিবর্তনের ইতিহাস। জানা থাকার কথা Nakba'র ইতিহাস। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের সময় জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানায় প্যালেষ্টাইনিরা ছিল মেজরিটি। এ সংখ্যাধিক্য ছিল ইহুদিদের জন্যে সমস্যা। তাই তাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা ছিল তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। তাই প্রতিবেশী আরব দেশগুলো আক্রমণ করলে ইসরায়েল তার সীমানা হতে ৭০০,০০০ প্যালেষ্টাইনিকে উচ্ছেদ করে। ধ্বংস করে দেয় তাদের বাড়িঘর। দিশেহারা এসব ফিলিস্তিনি অনাহারে অর্ধাহারে নিজেদের জীবন বাজি রেখে পাড়ি জমায় প্রতিবেশী দেশ মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ায়। এবং ওখান হতে ওদের আর কোনদিন নিজ বাড়িঘরে ফিরতে দেয়নি জায়নিষ্টরা। তাদের দাবি তারা ঈশ্বরের পছন্দ করা মানুষ এবং তাদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী প্যালেস্টাইন হচ্ছে তাদের প্রমিজ ল্যান্ড। তারপর হতে থেমে থাকেনি কথিত এই নাকাবার। আজ পর্যন্ত ইসরায়েলিরা ৫৯ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের জন্মভূমি হতে উচ্ছেদ করেছে। উদ্ধাস্তু এসব ফিলিস্তিনি পৃথিবীর দেশে দেশে নীপিড়িত লাঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছে। একমুঠো আহার ও মাথার উপর যেনতেন স্থায়ী একটা ছাদের জন্যে প্রহর গুনছে।
ইসরায়েলিরা প্রতিবেশী হিসাবে ফিলিস্তিন নামক রাষ্ট্রের বাস্তবতাকে কোনদিন মেনে নেয়নি। এর পক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা নেই, আছে কেবল উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা। আবার এক রাষ্ট্র, অর্থাৎ কেবল ইসরায়েলের বাস্তবতা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও মেনে নেয় না ৫৯ লাখ আরব ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুর প্রত্যাবর্তন। কারণ তারা জানে বাকি বিশ্বে তাদের গণতন্ত্র বিকাতে চাইলে ঐ ৫৯ লাখ আদিবাসী ফিলিস্তিনিদের ভোটাধিকারকেও মেনে নিতে হবে। আর তা মেনে নিলে আজকের নেতনিয়াহু ও তার রিলিজিয়াস বিগটদের ঠাঁই হবে আস্তাকুড়ে। সংখ্যাধিক্যের কারণে ফিলিস্তিনিরাই সরকার গঠন করবে। ভেস্তে যাবে তাদের অবৈধ প্রমিস ল্যান্ডের স্বপ্ন।
ব্যাপারটা এমন; প্রতিবেশী ভারত আমাদের বাংলাদেশ দখল করে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের উৎখাত করে সেখানে লিঙ্গ পূজারি, কপালে তিলক আর গেরুয়া পোশাক পরা উগ্র হিন্দুদের সংখ্যাগুরু বানিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করছে। আজকের ইসরায়েলে তাই হচ্ছে। ইউরোপ হতে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইহুদিরা ভিটেমাটি ছাড়া করেছে ঐ মাটির আসল মালিকদের। এমন একটা দেশে ভোট এর নাম গণতন্ত্র নয় জনাব/জনাবা। একে বলা হয় apartheid। ইসরায়েল নিজকে সত্যিকার গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে দাবি করতে চাইলে আগে তাদের ৭ লাখ উদ্বাস্তুকে দেশে ফিরতে দিতে হবে। দিতে হবে তাদের ভোটাধিকার। আসল বাসিন্দাদের বন্দুকের নলের মুখে উৎখাত করে অবৈধ দখলদাররা নিজেদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে তা হবে গণতন্ত্রের নামে তামাশা। এসব তামাশা নিয়ে গর্ব করতে পারে জ্ঞানহীন একদল উজবুক।
এবার আসি বেথেলহাম প্রসঙ্গে।
আমাদের স্বঘোষিত ইহুদি দাবি করছেন যিশুর জন্মস্থান বেথেলহাম শহর নাকি গাজায়! এবং খ্রিষ্টানদের ঐ পবিত্র শহরেও নাকি যুদ্ধ ছড়িয়ে পরেছে।
বেথেলহেম শহর গাজায়! এ ব্যপারে দেখছি আপনার সামান্যতম জ্ঞানও নেই। নিজের জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুন; বেথেলহেম শহর গাজায় নয়, দখলকৃত পশ্চিম তীরে। ওখানে কোন যুদ্ধ নেই। ঐ শহরে মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা শান্তিপূর্ণ সহবস্থান করছে।
দয়া করে স্বল্প-জ্ঞান নিয়ে বড় সব বিষয়ে ঘাটাঘাটি করতে যাবেন না। তা হলে ঝোলার বেড়াল বেরিয়ে পরবে। আর আমাকেও এ ব্যাপারে নসিহত করতে আসবেন না কারণ ইসরায়েল ও তাদের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমির অনেকটাই আমি ঘুরে এসেছি। বেথেলহেমও এর বাইরে না।
ফিলিস্তিনিদের নিয়ে বিদ্রূপ করার আগে অনুরোধ করবো পশ্চিম তীরের রামাল্লা, নাবলুস, হেবরনের কোন এক গ্রামে ঘুরে আসবেন। কথা বলবেন ফিলিস্তিনিদের সাথে, জানবেন তাদের জীবন। ক্ষণিকের জন্যে থামবেন তাদের জলপাই বাগানে।
এসব আমার কথা না; ইতিহাস হতে নেয়াঃ
১) According to the data documentation of www.palestineremembered.com, Israelis controlled 774 towns and villages during the Nakba. They destroyed 531 Palestinian towns and villages. Israeli forces atrocities also include more than 70 massacres against Palestinians killing 15,000 Palestinians during Nakba time.
২) https://www.un.org/unispal/about-the-nakba/