১৯৮৭ সালের ৮ই ডিসেম্বর। অধিকৃত গাজার জাবালইয়া শরণার্থী শিবিরে ৪ জন ফিলিস্তিনি শ্রমিককে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করে ইসরায়েলিরা। এবং পরদিন হতেই শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের অল-আউট প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ, যা পরবর্তীতে প্রথম ইন্তেফাদা নামে পরিচিতি লাভ করে। ফিলিস্তিনিদের এই রক্তাক্ত প্রতিবাদ স্থায়ী হয় ৫ বছরের উপর।
গাজা স্ট্রিপ তখন মিশরীয়দের দখলে। শেখ আহমেদ ইয়াসিন নামের প্রায় অন্ধ এক প্রভাবশালী ক্লারিকের কর্মকাণ্ড নজরে আসে মিশরীয়দের। এ সময় এই ক্লারিক ইসলামিক জিহাদ নামের একটি কট্টর রক্ষণশীল দলের নেতৃত্বে ছিলেন। এই দল মিশরীয়দের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। ফলশ্রুতিতে শেখ আহমেদ ইয়াসিনের উপর নেমে আসে অত্যাচারের স্টীমরোলার।
কিন্তু অবস্থা বদলে যায় যেদিন ইসরায়েল দখল নেয় গাজার। মিশরীয় সরকার আহমেদ ইয়াসিনের মাধ্যমে গাজায় ধর্মীয় প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে নতুন নতুন মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ শুরু করে।
১ম ইন্তেফাদার শুরুতে ইসরায়েলি সরকার বুঝতে পারে তাদের দখলদারিত্বের পথে একমাত্র বাধা হচ্ছে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও।
দৃশ্যপটে আবারও হাজির হন শেখ আহমেদ ইয়াসিন। তবে এ যাত্রায় ইসরায়েলিদের হাত ধরে। পিএলও'র একক কর্তৃত্ব খর্ব করে ইন্তেফাদা দমনের লক্ষ্যে দেশটার গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ গোপনে যোগাযোগ করে এই ক্লারিকের সাথে। হামাস নামের একটি উগ্র রাজনৈতিক মুভমেন্টের জন্ম দিয়ে লেলিয়ে দেয় পিএলও'র বিরুদ্ধে।
আমেরিকানরা যে উদ্দেশ্যে আফগানিস্তানে আল কায়েদার জন্ম দিয়ে সোভিয়েতদের মোকাবেলার নীল নক্সা এঁকেছিল একই উদ্দেশ্যে ইসরায়েলও হামাসের জন্ম দিয়ে আশা করেছিল নিজেদের ভেতর মারামারি করে পিএলও দুর্বল হয়ে পরবে।
স্বার্থ হাসিলের পর মার্কিনীরা যেভাবে ওসামা বিন লাদেনকে আফগানিস্তানের মাটিতে পরিত্যক্ত হিসাবে ফেলে এসেছিল, একই ভাবে প্রথম ইন্তেফাদা শেষ হওয়ার পর হামাসকেও ত্যাগ করে ইসরায়েল।
এরপর হামাসকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
আল কায়েদার টুইন টাওয়ার আক্রমণের মত হামাসও আক্রমণ শুরু করে মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থের বিরুদ্ধে। এ লড়াইয়ে রসদ যোগায় ইরানের মোল্লতন্ত্র। সাথে যোগ দেয় ১৯৮২ সালে লেবানন যুদ্ধের প্রক্কালে দেশটায় জন্ম নেয়া শিয়া আর্মড গ্রুপ হেজবল্লাহ। হেজবল্লার জন্ম ইরানী ক্লারিক আয়াতুল্লাহ খোমেনির হাত ধরে, এবং দলের নামটাও তার নিজের দেয়া।
ইসরায়েল এখন যতই অভিযোগ করুক হামাসের নৃশংসতা নিয়ে, তাদের মনে রাখা উচিৎ, দলটার জন্ম তাদের হাত ধরেই। আল কায়েদাকে জন্ম দিয়ে মার্কিনীরা যে কায়দায় মূল্য দিয়েছিল, হামাসের জন্যে ইসরায়েলকে একই মূল্য দিতে হবে এটা ইতিহাসের শিক্ষা।