সোমবার সকাল ১০টা। গণভবনের লোকজন ভীত ও উৎকণ্ঠার আরও একটা রাত পার করলো। শেখ হাসিনার পদত্যাগের আন্দোলন যেকোন মূল্যে দমন করার লক্ষ্যে গনভবনের বিশাল হল রুমে তিন বাহিনী ও বিজিবি প্রধান, ডিজি RAB, ডিজিএফআই, পুলিশ প্রধানের সাথে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং। শেখ রেহানাও বোনের পাশের সীটে মলিন মুখে নীরবে বসে আছেন।
গনভবনে ভিন্ন রকমের একটা দিন। আগের দিন আন্দোলনকারী ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে পুলিশ এবং আন্দোলন প্রতিহতকারী সশস্ত্র যুবলীগের ক্যাডারদের অনেক রক্ত ঝরলেও ছাত্ররা বীরদর্পে রাস্তা দখল করে রাখে। আজ রোড মার্চ টু গনভবন। বুক পেতে গুলি নিয়ে আজ স্বৈরশাসক হাসিনাকে তারা বিদায় করতে চায়। তীব্র স্রোতের মতো ধেয়ে আসা লক্ষ লক্ষ ছাত্রজনতা গগন বিদারী আওয়াজ তুলে সে দিকে ছুটে আসছে। তারা হাসিনা সরকারকে বিদায় করে রাষ্ট্রমেরামতের রক্ত শপথ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মিটিংএ এসেই সেনা প্রধানের দিকে আড় চোখে রাগত ভাবে তাকালেন। বিড় বিড় করে কিছু একটা বললেন। পুলিশ প্রধানকে হুংকার দিয়ে বললেন...আমি যে সেনাবাহিনীকে এতো সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি, তারা নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়য়ে ছিলো। তোমর পুলিশও কিছু করতে পা্রো নাই। তোমাদের সামনে আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগের ৭০ জন লোক কিভাবে মারা পরলো? আজ তোমরা ছাত্রদের যেকোন মূল্যে সরিয়ে দাও। আমি আর্মির অস্ত্র পুলিশকে দিয়েছি...এগুলো বহন করার জন্যে নয়! আজ কয়েকশ রাজাকার ফেলে রাস্তা পরিস্কার করো।
আইজিপি বললেন...আমার পক্ষে কয়েক শত নয়, কয়েক হাজার মারলেও ছাত্রদের ঠেকানো সম্ভব হবে না। আপনি তো ডিজিএফআই রিপোর্ট শুনলেন ওরা দু-এক ঘণ্টার মধ্যে গনভবনের গেটে পৌঁছে যাবে। আরো আগে পৌঁছতো, আর্মি কৌশলে তাদের ঠেকিয়ে রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী এবার চিৎকার করে বললেন...আমার কি দোষ, আমি কি দোষ করেছি! আমি কি দেশের জন্য, তোমাদের জন্য কম করেছি! প্রয়োজনে আজ হাজার ফেলে দাও, গনভবন রক্ষা করো।
একথা শুনে সবাই নীরব হয়ে রইলেন কিছু সময়। প্রধানমন্ত্রীর এ কথাগুলোর সাথে তারা পরিচিত হলেও আজ তিনি ভিন্ন মাত্রায়, চড়া স্বরে কথা বলছেন। তার এসব আদেশ পালন করে তাকে বাঁচানো যাবে না।
ডিজিএফআই এবং আইজি রেহানাকে নিয়ে পাশের রুমে গেলেন। বুঝালেন, ৫/১০ হাজার মেরেও এ আন্দোলন থামানো যাবেনা। আপনি ওনাকে বুঝান।
রেহানা ধীরে লয়ে মিটিংএ পুনরায় এসে বসে বড় বোনের কাঁধে হাত রাখলেন, এ প্রথম তাকে সামনে রাখা সেনা সদরের তৈরী করা পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করতে অনুরোধ করলেন। রেহানার চোখে পানি।
প্রধানমন্ত্রী আবারও রাগতস্বরে প্রত্যাখ্যান করে সেনাপ্রধানকে অথর্ব জাতীয় একটা শব্দ বললেন। বললেন-আমার পিতা এ দেশকে স্বাধীনতা দিয়েছে, স্বপরিবারে জীবন দিয়েছে। আমি এ দেশের জন্যে কি করি নাই? জামাত-বিএনপিকে এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর সুযোগ দেয়া যাবেনা।
সবাই ঘড়ির দিকে তাকালেন...ডিজিএফআই বারবার রিপোর্ট নিলেন-ছাত্রজনতা বিশাল বিশাল উত্তাল মিছিল নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে। সময় ফুরিয়ে আসলেও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে নমনীয় হওয়ার লক্ষন নেই। সবার মুখে অভিব্যাক্তি - এ অবস্থায় কি করা যায়!
এবার পাশের রুমে গিয়ে ডিজিএফআই বিদেশে থাকা সজিব ওয়াজেদকে ফোনে বুঝালেন - কিছুক্ষণের মধ্যে চারপাশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ গনভবনে পৌঁছে যাবে। সেনাবাহিনী গুলি চালালেও তাদের হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করা যাবে না।
সজিব বললেন - ঠিক আছে আমি আম্মুকে বুঝিয়ে বলছি।
সজিবের ফোন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী একেবারেই স্থবির হয়ে গেলেন। মুখ কালো করে বললেন...আমি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিবো।
তখন বেলা দেড়টা। প্রায় সবাই একযোগে বলে উঠলেন-স্যার আমরা ভাষন বেকর্ড করার সময় পাবোনা। আমরা হয়তো খুব বেশী হলে জোর করে এক ঘণ্টা ছাত্রজনতার রোড মার্চ ঠেকিয়ে রাখতে পারবো। ৪৫ মিনিটের মধ্যে আপনি রেডি হন ... আপনার জন্যে হেলিকপ্টার এবং বিমান রেডি।
রুমের বাহির থেকে SSF'এর কয়েকজন হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসলেন এবং হেলিকপ্টার নামার কথা জানালেন। এক প্রকার জোর করেই প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর নেয়া হলো। তাকে তার বেডরুমের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। এসময় SSFএর ওয়ারলেস এবং তাদের বুট জুতার ঠক ঠক আওয়াজ গনভবনে এক ভীষন রকমের তাড়াহুড়া দেখা দিলো। রেহানা ইতিমধ্যে ১৪টির মতো বড় লাগেজ রেডি করে ফেললেন। কড়া প্রহরায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি হেলিকপ্টারের দিকে এগিয়ে গেলো। তখন ঘড়ির কাটায় দুপুর আড়াইটা হয়ে গেছে। ছাত্রজনতা গনভবের ভিতর ঢুকা শুরু করে দিয়েছে।
--------------------------------------------------------------
- লেখাটা আমার নিজের না। নিজের হওয়ার প্রশ্নই আসেনা কারণ দেশ ও ঘটনাসমূহ হতে আমি হাজার হাজার মাইল দূরে। একজন পাঠিয়েছেন এবং পরিচয় গোপন রাখতে অনুরোধ করেছেন। তার ভাষ্য এ লেখা এমন একজনের যে ঘটনার সময় গনভবনে ছিল। সত্য মিথ্যার দায়-দায়িত্ব তাই আমার না।