১৯৯০ সাল হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর প্রেসিডেন্ট। আলবার্তো কেনিয়া ফুজিমোরে ইনোমতো'র পিতা জাপান হতে পেরুতে মাইগ্রেট করে স্থায়ী হয়েছিলেন সেখানে । ফুজিমোরে পেশায় ছিলেন একজন কৃষি প্রকৌশলী এবং ছিলেন স্থানীয় এক বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাক্টর।
১৯৯০ সালে তিনি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন পেরুর জন্যে সময়টা ছিল অন্ধকারময়। বামপন্থি সাইনিং পাথ গেরিলা ও টুপাক আমারু বিদ্রোহী গুষ্টির সন্ত্রাসী তৎপরতার কাছে জনজীবন ছিল প্রায় স্থবির। বিদ্যুৎ, গ্যাস সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুর সংকটে ততদিনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে পেরুভিয়ানদের জীবনে। ধ্বস নেমেছিলে দেশটার পর্যটন শিল্পে। পর্যটকদের লীলাভূমি মাচু পিচু পরিণত হয়েছিল বিরানভূমিতে।
ফুজিমোরে ক্ষমতায় এসে জাতিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাইনিং পাথ গেরিলা গুষ্টিকে নির্মূল করার। এবং কথা রেখেছিলেন তিনি। কঠিন হস্তে দমন করেছিলেন বাম-চক্রের সবাইকে। স্বস্তি নেমে এসেছিল পেরুভিয়ানদের দৈনন্দিন জীবনে।
শেষটার্ম নির্বাচনে হেরে গিয়েও চেয়েছিলেন জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কারণ ইতিমধ্যে দুর্নীতির করাল গ্রাসে আক্রান্ত হয়ে হয়ে পরেছিলেন জন-বিচ্ছিন্ন। গণতান্ত্রিক পেরু তাকে আর মেনে নেয়নি। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে ফেটে পরে জনগণ। অবস্থা আঁচ করতে পেরে পিতৃভূমি জাপানে পালিয়ে যান ফুজিমোরে।
স্বেচ্ছা নির্বাসন হতে অবসর নিতে চলে যান পেরুর প্রতিবেশী দেশ চিলিতে। ওখানে তাকে গ্রেফতার করে দেশটার সরকার। এবং পেরুর অনুরোধে ফেরত পাঠায় নিজ দেশে।
গেরিলা দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যে তাকে আদালতে তোলা হয়। ২০০৯ সালে শেষ হওয়া বিচারে ২৫ বছরের জেল দেয়া হয় তাকে।
১৬ বছর একনাগাড়ে জেল খাটার পর গেল ডিসেম্বরে মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া হয় তাকে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গতকাল (১১ই সেপ্টেম্বর) ৮৬ বছর বয়সে মারা যান ফুজিমোরে।
পেরুর বর্তমান সরকার দেশটায় ৩ দিনের শোক পালন করার ঘোষণা দিয়েছে বিতর্কিত এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে সাইনিং পাথ গেরিলাদের নির্মূল করতে গিয়ে ফুজিমোরে জেল খেটেছিলেন তাদের নেতা Abimael Guzmán একই দিনে অর্থাৎ ১১ই সেপ্টেম্বর মারা যান। মৃত্যুকালে তারও বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
আলবার্তো ফুজিমোরেকে নিয়ে পেরুতে অনেক বিতর্ক আছে। অনেকের কাছে তিনি নতুন পেরুর জন্মদাতা আবার অনেকের কাছে তিনি ছিলেন জাতীয় সম্পদ লুটপাটের চৌকস খেলোয়াড়।
একটা দেশে অন্তত একটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় সে দেশ পরাজিত হয়না অন্যায় অবিচার ও লুটপাটের কাছে। পেরু তার উদাহরণ। দেশটার বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। নেই কোন সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ। ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে বসে অপরাধ করার দায়ে জেলে গেছেন দেশটার একাধিক প্রেসিডেন্ট। অনেকে এখনও জেল খাটছেন। এবং সামনে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারাও জানেন দেশটায় অপরাধ ও শাস্তি পাশাপাশি বাসকরে।
চাইলে বাংলাদেশ পেরুকে উদাহরণ হিসাবে নিতে পারে। দেশটার অর্থনৈতিক ভিত্তি আজ কেবল লাতিন আমেরিকা নয়, উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের চাইতে শক্ত।