২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তের দিনগুলোতে এমন কি ভোটের দিন ভোট গ্রহন চলাকালীন সময়ে দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধবের কাছে ফোন করে নির্বাচনী হালচালের খবর নিয়েছিলাম। ফোনে কথা বলা এসব মানুষগুলির মধ্যে যেমন ছিল বিএনপি সমর্থক তেমনি ছিল আওয়ামিলীগ সমর্থক। এসব মানুষগুলির কাছ থেকে যেসব তথ্য উপাত্ত পেয়েছিলাম তাতে গত নির্বাচনে আওয়ামিলীগের অনুকুলে মইন উ আহমেদের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর যে একটা বিশেষ ভুমিকা রয়েছে তার কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলাম।
যাই হোক যথা সময়ে দেশে নির্বাচন হয়ে গেল। জাতি দেখতে পেল অনাকাঙ্খিত এক ফলাফল। ২৬১ আসন পেয়ে আওয়ামিলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিজয় কেতন উড়ালো। বিএনপির নাটোর, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রামের মত ঘাঁটিগুলো ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি তুলে বলা হল সেনাবাহিনী আর তত্তাবধায়ক সরকারের কারসাজিতে একটা প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল দেশে। কিন্তু তখন চরম বৈরি পরিবেশে মিডিয়া,আবাল শ্রেনীর বুদ্ধিজীবি ও বিদেশী শক্তির সমর্থনহীন বিএনপির সেই দাবির পালে হওয়া লাগেনি এতটুকু।
অতঃপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হল। যথারীতি শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস,প্রতিপক্ষের নেতা কর্মিদের উপর হামলা মামলা, চর দখল, হল দখল, ফুটপাত দখল, দলীয় অন্ত কোন্দল, প্রকাশ্য খুনি সন্ত্রাসীদের প্রত্যাবর্তন,প্রতিহিংসা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সময় এগিয়ে যেতে লাগলো ডিজিটাল বিভ্রমে।ইতিমধ্যে দেশে ঘটে গেল ন্যাক্কারজনক পিলখানা ট্র্যাজেডি।
আর ঠিক তখনি নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভুমিকা নিয়ে বিএনপির যে অভিযোগ ছিল তার প্রতি সমর্থন উঠে আসে খোদ সরকারের ভিতর থেকেই। মহাজোটের অন্যতম ডাকসাইটে নেতা,প্রধানমন্ত্রীর বড় ভাই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হু মো এরশাদ সেনা অফিসারদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন তোলেন ,"আওয়ামীলিগ কি করে ভুলে গেল তাদের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পিছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা?"
বিএনপি ঘরানার কিছু মানুষ এরশাদ সাহেবের বক্তব্য নিয়ে দু একদিন হৈচৈ করল ঠিকই কিন্তু কিছুই হলনা।দেশের ভাড়ায় খাটা বুদ্ধিজীবি শ্রেণী ও পক্ষপাতদূষ্ট মিডিয়া এরশাদ সাহেবের বক্তব্য নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষেন মেতে উঠেনি। মুন্নী সাহা, অকিল পোদ্দার, শারমীন রিনভীরা এই ব্যাপারে জ্বালাময়ী রিপোর্টিং করেননি। ফলে আবার সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে যায় । মিডিয়ার আনূকল্যহীনতায় আরো একবার পরাজিত হয় বিএনপি।
সময় আবারো এগিয়ে যেতে লাগল। এর মধ্যে শুরু হল প্রতিহিংসার নতুন নাটক। নাটকের নাম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি। পিলখানার ট্র্যাজেডির কথা মানুষের মন থেকে সরিয়ে ফেলতে কৌশলে সাজানো হল এই নাটক। খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করার সকল আয়োজন সমাপ্ত করা হল | হঠাৎ করে রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি করে বক্তব্য দিলেন আবদুল জলিল। আওয়ামিলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক তুরুপের তাস খ্যাত এই প্রবীন ডাক সাইটে নেতা ১/১১ পরবর্তি সময়ে এবং নির্বাচন কালীন সময়ে সেনাবাহিনীর সাথে আওয়ামিলীগের গোপন কানেকশনের তথ্য ফাঁস করে দিলেন।বেরিয়ে এল থলের বিড়াল।
আবদুল জলিল আওয়ামিলীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন ১/১১-এ ডিজিএফএই-এর দালালি করে যারা সুবিধা নিয়েছেন তারা এখনও সুবিধা নিচ্ছেন। সরকারের মধ্যে ঐ সুবিধাভোগিরা রয়েছেন। তিনি বলেন বর্তমান সরকারে অনেক মন্ত্রী রয়েছেন যারা ডিজিএফআই-এর পেইড এজেন্ট। তার মতে আমু, রাজ্জাক, তোফায়েল, সুরঞ্জিত সবাই ডিজিএফআই-এর দালাল। আবদুল জলিল আওয়ামিলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন,"কারা ঐ সময় সকালে ডিজিএফআই-এর সাথে মিটিং করে বিকালে দলের মিটিংয়ে অংশ নিয়েছে তা দেশের মানুষ জানে। প্রথমে কেন পালিয়ে লন্ডনে গেলেন,পরে কোন নিশ্চয়তা পেয়ে দেশে ফিরে এলেন তা দেশের মানুষ বোঝে।"
এরশাদ এবং সর্বশেষ আবদুল জলিলের বক্তব্যের মধ্য দিয়েই গত নির্বাচনে নৌকার অনুকুলে সেনাবাহিনীর বিশেষ ভুমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ডিজিএফআই-এর সাথে কি নিয়ে মিটিং করতেন জনাব আশরাফ? একের পর এক বিএনপি নেতা কর্মী কে গ্রেফতার করে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে আওয়ামিলীগের জন্য সুবিধাজনক ভোটের ক্ষেত্র তৈরি করার নীল নকশা কি ঐসব মিটিংয়ে প্রণীত হয়েছিল?দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী কতৃক বিএনপি নেতা কর্মীদের ভয় ভীতি প্রদর্শন এবং ভোটের দিন অনেক ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করার কৌশল কি সেইসব মিটিং গুলোতে নেওয়া হয়েছিল?
বিএনপির সেদিনের দাবি আজ অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য। ঊনত্রিশ ডিসেম্বরের সত্য আজ বেরিয়ে আসছে। কোন স্রোতের টানে নৌকা সেদিন মহা বিজয়ের দ্বীপে নোঙর করেছিল আজ তা মানুষের কাছে অনেকটাই পরিস্কার। সত্য গোপন থাকেনা। একদিন না একদিন সত্য বেরিয়ে আসে। সামনের দিন গুলোতে দেশবাসী হয়ত আরো অনেক সত্য জানতে পারবে। জানতে পারবে পিলখানা ট্র্যাজেডিকে ঘিরে তোরাব আলীর প্রকৃত স্বীকার উক্তির কথাও। দেশবাসী কে সাথে নিয়ে সেই মাহেন্দ্রক্ষনের অপেক্ষায় থাকলাম|