আসলেই এ এক করুন তামাশা, সভ্য বিশ্বে বিরল আর অসভ্য দুনিয়াতে খুজতে দরকার হবে কেরোসিনের। কিন্তূ বাংলাদেশে এ তামাশা ফাটা জোৎস্নার মত আলো ছড়াচ্ছে, কাঠ ফাটা রৌদ্রের মত ধৌত করছে টেকনাফ হতে তেতুলিয়া। ১৯৭১ সাল কি শত বছর আগের কোন এক সাল যা আমাদের সৃত্মিতে ঝাপসা হয়ে যাবে? একি সেই মোঘল আমলের কোন তোঘলকী উপাখ্যান যা ইতিহাসের জীর্ন পাতা ঘেটে উদ্বার করতে হবে?
চোখ বুজলে এখনো সেলুলয়েডের ফিতায় ভাসবে আগুন ঝড়ানো সেই মাস গুলোর সৃত্মি, মার্চ, এপ্রিল, ... ডিসেম্বর। ঢাকাবাসী পালাচ্ছে শহর ছেড়ে, মৃত্যু ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এক কাপড়ে ঘর ছাড়ছে মানুষ। পাশাপাশি গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পরছে প্রতিশোধের বহি¡শিখা। দ্বিজাতি তত্ত্বের হায়েনার দল দলিত মথিত করছে আমাদের জনপদ। তারা এগুচ্ছে আর বাঙালী জাতি পিছু হটছে।
ত্যানা পেচানো মোচ, পরনে খাকি পোশাক আর মুখে উর্দু, পাঞ্জাবী, পশতু ভাষার মত বাহারী ভাষার উৎসবে বাংলার মাটিকে ওরা বানিয়ে ছিল সূরা আর সাকির আসর। পথে ঘাটে মানুষের লুংগি উঠিয়ে মুসলমানিত্ব পরখের নামে এ দেশের হাজার বছরের ঐতিয্য বেড়ে উঠা মান-সন্মানকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল হাসি ঠাট্টার ছলে। এগুলো কি শুধুই কালো ইতিহাসের কালো অধ্যায়? অনেকের কাছে হতে পারে, কিন্তূ বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ পরিবারে এ গুলো দুঃসহ ব্যর্থতা, সীমাহীন অক্ষমতা আর পরাজয়ের নির্মম কাহিনী। জাতির অস্থিত্ব যখন বিদেশী হায়েনার ভয়াল থাবায় ছিন্নভিন্ন ঠিক তখনই ওরা গর্ত হতে বেরিয়ে আসে। বুকে লড়কে লেংগা পাকিস্তান আর মুখে ইসলাম রক্ষার নহবত বাজিয়ে ওরা হাত মেলায় বর্গীদের সাথে। গোলাম আজম, নিজামী, আমিনী, আর সাকা ফকা চৌধুরীর দল এ জাতির ভাগ্য নির্ধারণী পরীক্ষায় হাতে বন্দুক নিয়ে ঝাপিয়ে পরে তাদের প্রিয় পাকিস্থান রক্ষায়। লক্ষ মানুষের রক্তে অবগাহন করে ওরা প্রতিদান দেয় নিজ প্রভূদের। রাজাকার, আলবদর আর আলশামসের মত পৈচাশিক শক্তির উদ্ভব ঘটিয়ে জাতিকে জিম্মি করে রাখে ভয়, সন্ত্রাষ আর হুমকির কাছে। এ গুলো কি শুধুই কথার পিঠে কথা, শুধুই রাজনৈতিক দলাদলির হাতিয়ার? হতে পারে অনেকের কাছে, কিন্তূ বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে এ গুলো পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী, সন্তান আর স্বজন হারানোর হ্রদয় বিদায়ক ঘটনার ঐতিহাসিক দলিল।
রাজনীতি নিয়ে দলাদলি হতে পারে, জাতিয়তাবাদ পছন্দের নামে লুটপাটকেও মেনে নেয়া যায়, কিন্তূ একদল খুনী জল্লাদের প্রাপ্য শাস্তি নিয়ে বিতর্ক জাতি হিসাবে আমাদের দৈনতার করুন বহিপ্রকাশ, এবং তা মেনে নেয়া হবে পশু শক্তির কাছে শৃঙ্খলিত হওয়া। এদেশের মুক্ত বাতাসে নিশ্বাষ নেয়ার যোগ্যতা এবং অধিকার গোলাম আর চৌধুরীর দল অনেক আগেই হারিয়েছে, এদের স্থান সংসদ অথবা ক্যবিনেটে হতে পারেনা, এদের কোমরে বেড়ি পরিয়ে ছেড়ে দিতে হবে জনপদে, স্বামীহারা স্ত্রী আর সন্তানহারা মা-বাবাদের লাথি গুতায় এদের পাপের প্রায়শ্চিত্য করলে শান্তি পাবে মৃত আত্মা, তারপর এদের গলায় ঝুলাতে হবে নারকেলের রশি। একজন যুদ্বাপরাধীর অন্যকোন পরিচয় থাকতে পারেনা, সে কেবলই রাষ্ট্রদ্রোহী, খুনী, ধর্ষক, এবং ফাসিই হতে পারে তার একমাত্র চাওয়া পাওয়া।
জাতি হিসাবে আমাদের ব্যর্থতার তালিকা দিন দিন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, রাজনৈতিক বৈরীতার যাতাকলে আমাদের অস্তিত্বই আজ হুমকির সন্মুখিন। অনিশ্চয়তার এই ফাক ফোকর গলে বেড়ে উঠছে ’৭১এর হায়েনাদের পরবর্তী বংশধর, এদের বিষাক্ত দাঁত দিন বড় হতে বড় হচ্ছে এবং অপেক্ষায় আছে মোক্ষম সময়ের। আমরা কি প্রস্তূত আরও একটা ’৭১এর জন্যে?
গোলাম আজম আর নিজামী মানেই জামাতে ইসলামী নয়, গণতান্ত্রিক সমাজে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ব করারও কোন অবকাশ নেই। কিন্তূ এই অধিকার চর্চার নামে খুনী আর ধর্ষকেরা গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে আমাদের রক্তাক্ত ইতিহাসের সাথে ঠাট্টা করবে তা মেনে নেয়া যায়না।