জ্যাকসন হাইট্সের সূপ্রিয় রহমান সাহেবের বদৌলতে ভদ্রলোকের সাথে পরিচয়, বাংলাদেশের তরুন এক প্রতিমন্ত্রী (খালেদা-বাবর মন্ত্রীসভার)। উডসাইডের ঢাকা ক্লাবের একটা অনুষ্ঠানে আলাপ, দেশ হতে এসেছেন বাংলাদেশী জাতিয়াবাদ নিউ ইয়র্কে রফতানী করতে (মেয়র ব্লুম বার্গ শুনেছি খবরটা শুনে বেশ বিচলিত)। বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদের স্থানীয় এজেন্ট দরকার, তার সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্যেই মন্ত্রী মহোদয়ের বিদেশ যাত্রা। মন্দ লোকের মুখে অবশ্য অন্য কথা, মন্ত্রী এসেছেন উনার বিনিয়োগ তদারকীকরতে, সাথে এনেছেন বেশ কিছু নগদ অর্থ।
’কি কর তুমি?’। ’জনাব, তুমি শব্দটা এই মুহুর্তে আমার কাছে গ্রহন যোগ্য নয়, দয়া করে আপনি বলে সন্নোধন করলে খুখী হব’। এমন আজব কথা মন্ত্রী সাহেব শেষ কবে শুনেছেন তা বোধহয় মনে করার চেষ্টা করছিলেন। অনেক কথার শেষে মন্ত্রী আসল কথায় আসলেন, ’আপনাকে আমাদের দরকার, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ আপনার মত লোকদের খূজছে’। মনে মনে ভাবলাম, শালা ভন্ড! কথা অনেক দূর গড়াবে, তাই নড়েচড়ে বসলাম। ’তা জনাব, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জিনিষটা কি?’ ’আমরা মুসলমান, ইসলাম আমাদের ধর্ম এবং আমাদের হাতে বাংলাদেশী পাসপোর্ট। এই দুই পরিচয়ের সাথে শহীদ জিয়ার স্বপ্ন, এই তিনের অপরনাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’। ’তা শহীদ সাহেবের স্বপ্নটা কি ছিল?’। ’খাল কাটা সহ অনেক কিছু’। ’তা বাংলাদেশের সব মৃত নেতাদেরই ত স্বপ্ন দেখার অভ্যাস ছিল, স্বপ্ন দেখতে পয়সা খরচ হয়না’। মন্ত্রীর ভেতরের জাতীয়তাবাদি সাপটাকে বোধহয় জাগিয়ে দিলাম। ’শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক’। ’দাড়ান, মানুষ যখন চাদে নামে সে খবরটাও টিভিতে একজন ঘোষক ঘোষনা করে, তাতে চাদে যাওয়ার কৃত্বিত্ত ঐঘোষকের নয়’। ’ওরা মালাউন, ভারতের দালাল, দেশকে বিক্রী করে দিতে চায়, বাকশাল কায়েম করতে চায়, আমাদের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে চায়’। এতখনে মন্ত্রী আসল জাতীয়তাবাদী তত্ত্বে ফিরে এলেন। ’কিন্তূ স্যার, একটা রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীর পাশাপাশি থাকে তাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কর্মসূচী , শর্ট-টার্ম এবং লং-টার্ম কর্মসূচী, তা আপনাদের কর্মসূচী গুলো একটু তুলে ধরবেন কি?’ ’আমার নেত্রী আতাতে বিশ্বাষ করেন্না, উনি এরশাদের সাথে আপোষ করেনি, ভবিষতেও এ ধরনের স্বৈচাচারের সাথে আতাত করবেন্না’। ’কিন্তূ জনাব, এ সব কি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী হতে পারে?, আমাকে বলুন, আগামী ১০ বছরের জন্য আপনাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কি, জনসংখ্যার বিস্ফোরন ঠেকাতে আপনাদের কি কর্মসূচী?’। ’আমরা র্যাব সৃষ্টি করেছি’। ’থামেন মশাই, এ সব বস্তাপচা গাজাখুরী কাহিনী বলে অনেক রহমান সাহেবদের কুপথে নামিয়েছেন, নিজের পকেট ভারি করেছেন, দেশের বারটা বাজিয়েছেন, এখানে এসেছেন নতুন শিকারের সন্ধানে’। বজ্রপাত হয়ে গেল যেন, মন্ত্রীর মুখে কথা নেই। ’আমি জানি আপনি কেন আমার সাথে কথা বলছেন, আপনার একজন দালাল দরকার, চুরির দালাল, যারা আপনার ব্যবসা এখানে দেখাশুনা করছে তাদের আপনি বিশ্বাষ করতে পারছেন্না। এর অপরনামই আপনার জন্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। খারাপ সংবাদ হল, আপনার কালো ধান্দার কালো পৃথিবীর হাজার কালো কাহিনী আমার জানা’। ’তোকে আমি দেখে নেব, তোর সবাইকে আমি বংগোপসাগরে ডুবিয়ে মারব, আমার নাম অমুক, আমার কথায় বাংলাদেশ নাচে’। ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম। মানুষের ভেতরের পশূটাকে সহজে নেংটা করার জন্মগত ক্ষমতাটাকে সালাম জানিয়ে ঢাকা ক্লাব হতে বিদায় নিলাম।
দ্রষ্টব্যঃ খালেদা জিয়ার মন্ত্রীসভার অন্যতম লুটেরা এই মন্ত্রী পরিচিত একজনের রেফারেন্সে নিয়ে আমার হদিস খুজে বের করে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল তার তথাকথিত রিয়েল এষ্টেট ব্যবসা নিঊ ইয়র্কে বাজারজাত করা। ধোকাবাজীর ব্যবসায় দেশীয় গ্রাহকদের পকেট খালি করে এই মন্ত্রী-কাম-ব্যবসায়ীকে ইতিমধ্যে একবার জেলে যেতে হয়েছিল। চরিত্রের বেলুন চুপসে যাওয়ায় দেশে গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছিলনা, তাই বিদেশ যাত্রা।