রহামান সাহেবের হূদয়ে এখন বঙ্গোপসাগরের উচ্ছাস বইছে। সুদিনের হৈমন্তিক বাতাসে ভর করে উনি হাটা ভূলে এখন রীতিমত উড়ছেন। রহমান সাহেবের সোনালী অতীত ফিরে পেয়েছেন, তাই এত আবেগ, উচ্ছাস। গেল রমজানে উনার সাথে শেষ দেখা, সান আন্তনিও হতে নিউ ইয়র্কের ল্যা গোয়ারডিয়া এয়ারপোর্টে নামতেই দেখি রহমান সাহেব হলুদ ক্যাব নিয়ে ঝিমুচ্ছেন ডেলটা স্যাটল্’এ যাত্রীর আশায়। বিষন্ন, বিপর্য্যস্থ এবং জীবনযুদ্বে পরাজিত খা-জি ফোর্সের এই অকুতভয় সৈনিক। কিন্তূ সে রমজান এখন রহমান সাহেবের কাছে দুঃস্বপ্ন মাত্র, উনার মুখে এখন বিজয়ের হাসি আর সোনালী অতীত ফিরে পাওয়ার রূপালী হাতছানি।
গভীর রাতে ফোন করে তারেক জিয়ার মুক্তিতে নিজের উচ্ছাস প্রকাশের পাশাপাশি আমার হতাশার ক্ষতে একটু টাইগার বাম লাগাতে ভূললেন্না। কম করে হলেও ৩টা খুনের মামলার ফেরারী রহমান সাহেব চাঁদাবাজী, গুম করে মুক্তিপন আদায়, সম্পত্তি দখল, টেন্ডারবাজী, ধর্ষন সহ শত শত অপরাধে অপরাধী। সিরাজগঞ্জের হাফ-মন্ত্রীর জল্লাদ বাহিনীর উনি ছিলেন সেনাপতি। এ সব অপরাধের বিভীৎষ কাহিনী বর্ণনা করে দানবীয় উল্লাস এবং তৃপ্তিতে ঢেকুর তুলে থাকেন এই জাতীয়তাবাদি সৈনিক। আমি যতই এ সব অপরাধের নৈতিকতা এবং আইনী দিকগুলো তুলে ধরতে চাই, উনার চোখে কিলবিলিয়ে উঠে পশুত্ব; "...কোন শালা আমার বিচার করবে, থানাওয়ালারা আমার পোষ্য কুকুর, ...এসপি ডিসিদের দিয়ে চাইলে জুতা পরিস্কার করাতে পারি... হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা আমার মাগীবাজির দোস্ত'', ইত্যাদি।
তারেক জিয়া কোর্ট হতে জামিনে মুক্ত হয়ে বিদেশ পালিয়ে গেছেন, এ ধরনের মুক্তি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তূ সমস্যা হচ্ছে, তারেক জিয়া এবং তার গৃহপালিত পশুর দল সহ সবাই জানে তাকে আর কোনদিনও জেলমূখী হতে হবে্না। ক্ষমতায় গিয়ে বিচারকদের চেয়ারে দলীয় ক্যাডা্র বসালে কি সুফল পাওয়া যায় তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে থাকবে তারেক জিয়ার মত অপরাধীর দল। রহমান সাহেব গভীর রাতে ঘুম ভাংগিয়ে সে কথাগুলোই মনে করিয়ে দিলেন।
উনি একা নন, রহমান সাহেবদের সংখ্যা লাখ লাখ। উনারা ছড়িয়ে আছেন টেকনাফ হতে তেতুলিয়া, ব্রিকলেন হতে জ্যাকসন হাইট্যস্, সুইডেন হতে দক্ষিন আফ্রিকা। দেশ হতে পালানো খুনী, ধর্ষক, চাঁদাবাজ, লুটেরার দল তল্পিতল্পা গুটিয়ে স্বগর্বে ফিরে যাচ্ছে অপরাধের অভয়ারন্য বাংলাদেশে। নিজের অসহায়ত্বকে ঘৃনা করতে ইচ্ছে করে মাঝে মধ্যে। ইচ্ছে করে রহমান সাহেবের বিচি বরাবর একটা লাথি মেরে ’সেলিব্রেট’ করি তারেক জিয়ার মুক্তি!
একজন অপরাধীর প্রকৃত শাস্তি তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া যায়না, মূল শাস্তিটা আসতে হয় তার ভেতর হতে। অপরাধ যদি তার বিবেককে দংশন এবং দহন করতে পারে সেটাই তার আসল শাস্তি; - কথাগুলো আমার নয়, বিখ্যাত রুশ লেখক ফেওদর দস্তায়েভস্কির কালজয়ী উপন্যাস ’ক্রাইম এন্ড পানিশম্যন্ট’ হতে নেয়া। একজন তারেক জিয়াকে হাজার বছর জেলে রেখে মানুষ বানানো যাবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়, সে জেলেও যেমন চোর, বাইরে তার দ্বিগুন চোর। কারন বিবেকের দংশন জিনিষটা তার মত অপরাধীর মগজে এখনো জন্ম নেয়নি।