সংবাদে প্রকাশ বিএনপি নেতা এবং প্রাক্তন পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব) হাফিজের বিরুদ্বে ২১,০০০ (একুশ হাজার) কোটি টাকা র্দুনীতির অভিযোগ আনতে যাচ্ছে সরকারী প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, ব্যক্তিগতভাবে মেজর হাফিজ কত টাকার মালিক! কথিত ২১,০০০ কোটি টাকার একটা সামান্য অংশও যদি এই নেতা নিজ পকেটে পূরে থাকনে তার যে অংক দাড়াবে বাংলাদেশের বেশ ক’টা বানিজ্যিক ব্যাংকের ভলট্ একসাথে টাকার নদীতে ভাসানো সম্ভব হবে। হঠাৎ করে সংসদীয় কমিটিগুলি র্দুনীতির বিরুদ্বে কেন জেহাদে নেমে গেল তার একটা যুৎসই কারণ জানার জন্যে উচুমাপের একজন আওয়ামী নেতার সাথে দেশে কথা বল্লাম। নেতা যা বল্লেন তা শুনে একটু ভ্যবাচেকা খেয়ে গেলাম। আমার ধারণা ছিল, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো এমনটাই বোধহয় মুচলেকা দিয়েছিল, ক্ষমতায় গেলে সংসদীয় কমিটিগুলোকে জীবিত করে র্দুনীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখবে। শুরুটা মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে দিয়ে, প্রাক্তন এই আমলা র্দুনীতি কমিশনের বিরুদ্বে এমনভাবে কোমড়ে গামছা প্যাচিয়ে নেমে গেলেন যেন এই কমিশনই ছিল র্দুনীতির গডমাদার। হাসান মাসুদ চৌধূরী সহ কমিশনের বাকি সদস্যদের পারলে গলায় গামছা দিয়ে হাজির করান সংসদীয় কমিটির সামনে! এবার এই অতি-বিপ্লবী নেতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হাফিজের বিরুদ্বে অভিযোগ আনছেন এমন একটা অংকের, যার পরিমান হজম করা যে কারও পক্ষে কষ্টকর। গতকাল ঘটে গেল এর চেয়েও অদ্ভূদ এক ঘটনা; প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব এইচ টি ইমামকে সংসদীয় কমিটিতে তলব করা হয়েছে নিম্ন আদালতের দু'জন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কারনে। আসুন, রিওয়াইন্ড করে ফিরে যাই ঘটনার প্রেক্ষাপটে। নিম্ন আদালতের দু'জন বিচারক অনেকটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর লগি-বৈঠা সন্ত্রাষী আদেলে নিজদের দাবি আদায় করতে গিয়ে সচিবালয় তোলপাড় করে ফেলেন। নিজ আবিস্কৃত হাতিয়ারের তীব্রতায় ব্যাথিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী তলব করেন উনার উপদেষ্টা মাহমুদ সাহেবকে। রায়? চাটিবাটি গোল করে এখনই বিদায় নিতে হবে বিচারকদ্বয়কে। তাই হল, পত্রপাঠে বিদায় দেয়া হল তাদের। এর পরের ঘটনাগুলো ঘটে গেল অতিদ্রুত; বিচারকদ্বয় ক্ষমা চাইলেন, পাশাপাশি এ ধরনের চাকরীহরনে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় পাওয়া গেল আইনী গলদ। দু'দিন না যেতেই বিচারকদের পূনঃবহাল করা হল। সব ভাল যার শেষ ভাল, এ ক্ষেত্রে তাই হল। কিন্তূ মাঝখানে বাধ সেদে বসলেন সংসদীয় কমিটির নব্য ব্যাঘ্র, মহাশয় সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। ইমাম সাহেবকে জানালেন, বিচারক বিদায়ে উনার ইমামতী ছিল অন্যায়, অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সুতরাং হাজির হতে হবে কমিটির সামনে!
যাইহোক, আওয়ামী নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেল র্দুনীতির বিরুদ্বে জেহাদ ফেহাদ একেবারেই ফাও কথা, আসলে দলটির হোমরা চোমরা নেতাদের অনেকেই মন্ত্রীত্ব না পেয়ে বেজায় নাখোশ। ম খা আলমগীর এবং সূরঞ্জিত বাবু এই নাখোশ নেতাদের অন্যতম। সংসদীয় কমিটির ঘাড়ে বন্দুক রেখে একদিকে এই ধূর্ত আমলা একঢিলে অনেক পাখী শিকার করতে চাইছেন। প্রথমত; বছর ধরে জেলের ভাত খাওয়ার প্রতিশোধ, দ্বিতীয়ত; মন্ত্রীত্ব না পাওয়ার জ্বালা, তৃতীয়ত; নিজের অপরাধগুলি ধামাচাপা দেয়া। অন্যদিকে সূরঞ্জিত বাবু সদ্য সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাকে ঘর-জামাই বানানোর প্রতিশোধ নিতে সূযোগ খুজছেন নিজ নেত্রীর বিরুদ্বে।
আদালত কর্তৃক শাস্তি প্রাপ্ত একজন রাষ্ট্রদ্রোহী আমলার র্দুনীতির বিরুদ্বে এ হেন তেজী মনোভাব আওয়ামী লীগের জন্যে ব্যকফায়ার করতে বাধ্য। কোন আবস্থাতেই আদালতে মেজর হাফিজের ২১,০০০ কোটি টাকার জালিয়াতি প্রমান সম্ভব হবেনা, অন্যদিকে হাসান মাসুদ গংদের গায়ে হাত দিতে গেলেও প্রয়োজন হবে সংবিধান সংশোধনের। ইতিমধ্যে জমির উদ্দিন এন্ড দেলোয়ার গং বুড়ু আংগুল দেখিয়ে প্রত্যাখান করেছে সংসদীয় কমিটির তলব। ফাকা মাঠে ঘন ঘন গোলাগুলি করে ম খা আলমগীরের দল ইতিমধ্যে নিজদের ঠুনকো জগন্নাথের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। এ ধরনের অতি গর্জনের পাগলা ঘোড়ায় চড়ে আলমাগীর এবং সূরঞ্জিত বাবুরা মন্ত্রীত্ব ফিরে পাবেন কিনা তা নেত্রী হাসিনাই বলতে পারবেন, কিন্তূ উনারা যে পথে এই মিশন একমপ্লিশ করতে চাচ্ছেন তার প্রথম বলি হবে সেই র্দুনীতি, যার নামে নিজেরা গডফাদার সাজতে চাইছেন।