ভারত প্রসংগ টানলেই কেন জানিনা আমাদের আলোচনা সমালোচনায় বাংলাদেশের বিপরীতমূখী দু’টি রাজনৈতিক দলের প্রসংগ এসে যায়। আওয়ামী-বিএনপি, আবাহনী-মোহামাডান, ভারত-পাকিস্থান, পছন্দ অপছন্দের এই মেরুকরনে আমাদের সমগ্র জাতিসত্ত্বা যেন বিনা সূতার শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত হয়ে আছে অনাদিকালের জন্যে। যেমন, আওয়ামী লীগ করলেই ভারতের অপ্রতিবেশী সূলভ কাজে বোবা হয়ে থাকতে হবে, কথায় কথায় পাকিস্থানের গুষ্টি উদ্বার করতে হবে এবং খেলার মাঠে আবাহনীর সমর্থক হতে হবে (ব্যতিক্রম লক্ষ্যনীয়)। উলটো দিকে, বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদের মূল আদর্শই যেন এ তত্ত্বের সমর্থকদের ভারতের বিরুদ্বে সার্বক্ষনিক বিষেদগার করতে হবে, পাকিস্থান সহ বিশ্বের ব্যর্থ মুসলিম দেশগুলোকে কাছের মানুষ ভাবতে হবে, এবং খেলার মাঠে মোহামাডানের নিরলষ সমর্থক হতে হবে (ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়)। এ যেন ফাষ্ট ফুড জায়ান্ট ম্যাকডোনালড্’এর কম্বোর মত; বিগম্যাক, সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস এবং পানের জন্যে সোডা জাতিয় কিছু। ভারত নিয়ে আমাদের আভ্যন্তরীন রেশারেশির ফাক ফোকর গলে যে বেশী লাভবান হচ্ছে তা কিন্তূ সে ভারতই। ফারাক্কার অভিশাপে আমাদের উত্তর দক্ষিন বাংলা আজ সাহারা মরুভূমি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তান্ডব লীলায় সীমান্ত এলাকায় আমাদের নীরিহ জনগণ প্রাণ হারাচ্ছে অহরহ। মরার উপর খড়ার গায়ের মত ভারত নতুন করে তৈরী করতে যাচ্ছে টিপাইমূখী বাধ। এমন একটা বাধের ফসল বাংলাদেশের জন্য কি হতে পারে তা বুঝতে পানি বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয়না। কিন্তূ আশ্চর্য্য ঘটনা হল, এ ব্যাপারে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জন্মকালীন বোবার ভূমিকা পালন করছে। কোন সন্দেহ নেই ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিজদের পছন্দসই সরকার দেখতে চায় বহুমূখী স্বার্থের কারণে। আওয়ামী লীগের এ ধরনের নীরবতা এবং সমস্যার প্রতি র্নিলিপ্ততা ভোটের রাজনীতিতে ভারতকে তার পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে কতটা সহায়তা করবে তা বিবেচনা করে দেখার সময় এসেছে। ভারতের ফারাক্কা এবং টিপাইমূখী বাধ আমাদের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক সমস্যা হতে পারেনা, এ আমাদের জাতীয় সমস্যা এবং এর সময়োচিত সমাধানের জন্য চাই জাতীয় ঐক্যমত। পাশাপাশি বিএনপি এবং তার কথিত জাতিয়তাবাদী বলয় ভারত সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্যে যা করছে তা সমস্যা সমাধানের বদলে উলটো প্রতিবেশীর সাথে আমাদের বৈরীতাকে উস্কে দিচ্ছে। ভারতকে হুমকি ধামকি আর জাতিয়তাবাদের ভয় দেখিয়ে যারা সমস্যার সমাধান আদায় করতে চায় তারা একবিংশ শতাব্দী নয় বরং পাথর যুগে বাস করছে।
ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকার সূবিধা নিয়ে ভারত বাংলাদেশ হতে বহুমূখী সূবিধা আদায় করতে চাইছে নিজদের পরিকল্পনা মাফিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগও ভারতের এই মিশনে সহযাত্রী হতে যাচ্ছে দেশীয় স্বার্থ পদ্দলিত করে। কে লাভবান হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের এ ধরনের ম্যন্ডেটহীন কর্মকান্ডে? একটা সত্য আওয়ামী লীগ অনুধাবন করতে বোধহয় ব্যর্থ হচ্ছে, গেল নির্বাচনে জনগণের রায় তাদের পক্ষে গিয়েছিল ভারত ইস্যুতে নয়, এ রায় ছিল জোট সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার বিরুদ্বে। সমস্যা হচ্ছে, সাড়ে চার বছর পর আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচনের মুখোমূখি হতে হবে, সে নির্বাচন বৈতরনী পার হতে আজকের ভারত প্রীতি তাদের কতটা সহায়তা করবে সে অংক এখন হতে কষলেই বোধহয় ভাল হয়। ভারতের সাথে বুঝাপড়ার করে অন্তত লোক দেখানো কিছু বাদ-প্রতিবাদও আওয়ামী লীগকে এ মুহুর্তে সাহায্য করতে পারে। দু’একজন মন্ত্রীর কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারা যেন ভারতের তদ্বীরকারী হয়ে বাংলাদেশ সরকারে কাজ করছে।
ফারাক্কা এবং অন্যান্য বাধ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে আমরা প্রায়শঃই ভূলে যাই আজকের বাংলাদেশ ভারতীয়দের কাছে লাভজনক বাজার বৈ অন্যকিছু নয়। আমাদের ভারী এবং ক্ষুদ্রশিল্পের গোড়াই পত্তন হতে পারেনি ভারতীয় বানিজ্য আগ্রাসনে। প্রতিবেশী দেশের এ ধরনের অসম এবং ন্যাক্কারজনক বানিজ্যের সর্বশেষ শিকার আমাদের স্পিনিং ইন্ডাষ্ট্রী। সম্ভাবনাময় এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রী সহ বাংলাদেশের সব সম্ভাবনাময় শিল্পের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয়দের উগ্র বেনিয়া চরিত্র এবং আমাদের আপদমস্তক র্দুনীতিগ্রস্থ রাজনীতির সহমিলনে।
এতকিছুর পরেও ভারত আমাদের প্রতিবেশী এবং বর্তমান বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি। আমাদের নিজদের স্বার্থেই আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে ভারত ইস্যুকে ক্ষুদ্র দলীয় ইস্যুর উর্ধ্বে নিয়ে জাতীয় ইস্যুতে পরিনত করতে হবে। তবেই বোধহয় এই শক্তিশালী প্রতিবেশীর সাথে শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের সহজ পথ খুজে পাব।