দিন বদলের সরকার তার ছ’মাস পূর্তি করল অনেকটা নীরবে। দলীয় বলয়ে শৃঙ্খলিত সুশীলকুল এবং প্রচার মাধ্যমের রাঘব বোয়ালদের মাইক্রোস্কোপে বিডিআর ঘটনার বাইরে গেল ছ’মাসে বাংলাদেশে এমন কিছু ধরা পরেনি যা দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে রাজনৈতিক আদালতে আসামী করা যেতে পারে। আসলেই কি তাই? ব্যাপারটা নিয়ে আসুন একটু গভীরে যাই। আমাদের রাজনৈতিক সাংস্কৃতির একটা অপরিহার্য্য অংশ বিরোধীদল কতৃক ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতা গ্রহনের প্রথমদিন হতে রাজপথে হেনস্তা করা। বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল যখন বিরোধী দলে ছিল এ ধরনের সাংস্কৃতি চর্চা ছিল তাদের একমাত্র রাজনৈতিক কর্মসূচী। কিন্তূ এবারই বোধহয় এর ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে, কারণ বিএনপি এখন নিজ ঘর সামলাতে ব্যস্ত। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা এবং গেল নির্বাচনে ভরাডুবি হতে উত্তরনের পথ খুজতে গিয়ে দলটি জেলায় জেলায় নতুন কমিটি ঘোষনা দিয়েছে। এ ঘোষনা বারুদে দিয়াশালাইয়ের কাঠি হিসাবে কাজ করেছে, সংগত কারণেই দলটি জ্বলছে আভ্যন্তরীন কোন্দলে। ফাকা রাজপথ, পার্লামেন্টে অতি আকৃতির নির্বাচনী রায় এবং প্রতিবেশী দেশের ব্লাংক সমর্থন নিয়ে আওয়ামী সরকারের যাত্রা কতটা সফল হয়েছে তার কিছু তথ্য পাঠকদের বিবেচনার জন্যে তুলে ধরছিঃ
মন্ত্রীসভা গঠনের আগে রাজনৈতিক মহলে এমন একটা খবর ঘুরপাক খাচ্ছিল যার বাস্তবায়ন দেখার জন্য গতানুগতিক রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ব অনেকেই আগ্রহভরে অপেক্ষায় ছিল। কথা হচ্ছিল সংসদের ডেপুটি স্পীকার পদে নিয়োগ দেয়া হবে বিরোধী দল হতে, এ পদের জন্যে দু একটা নামও ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনৈতিক অংগনে। এমন একটা সিদ্বান্ত হতে পারত সত্যিকার দিন বদলের শুরু। কিন্তূ বাস্তবে তা হয়নি। দিন বদলের সরকার তার দিন শুরুর আগেই জানিয়ে দিল তাদের যাত্রা হবে পুরানো পথে এবং মুখে থাকবে দিন বদলের গান।
মন্ত্রীসভার চমক হজম করতে জাতিকে বেশীদিন অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী নেত্রীত্বের যে সব রাঘব বোয়ালদের র্দুনীতি সহ বিভিন্ন অভিযোগে বিচারের আওতায় এনেছিল তাদের কাউকেই মন্ত্রী সভায় ঠাই দেন্নি প্রধানমন্ত্রী। জনগণ ভাবল এই ত নতুন দিনের শুরু মাত্র! এ ধরনের মন্ত্রীসভা গঠনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রকারান্েত এক ঢিলে বহু পাখী মারতে চেয়েছিলেন; প্রথমত, সংস্কারের নামে যারা তার ব্যক্তিগত আধিপত্য ক্ষুন্ন করতে চেয়েছিল তাদের শাস্তি, দ্বিতীয়ত মন্ত্রীসভা হতে এসব নেতাদের দূরে রেখে তাদের র্দুনীতির স্বীকৃতি দেয়া, তৃতীয়ত কথিত দিন বদলের সাফাই গাওয়া। বাস্তবে যা হয়েছে তা হল, একদল অযোগ্য আবুলদের মন্ত্রীসভায় ঠাই দিয়ে মন্ত্রীত্বকে ঠাট্টার পাত্র হিসাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বানিজ্য, শিক্ষা, গনপূর্ত সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় এমন সব ব্যক্তিদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে যাদের মন্ত্রীত্ব বুঝার ধারাপাতও জানা নেই। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নামে এমন এক আজব চিড়িয়াকে আমাদেরকে উপহার দেয়া হয়েছে যার ব্যক্তিগত জীবন এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মূল মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বানিজ্য মন্ত্রীর বাচালতা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অযোগ্যতা, আইন মন্ত্রীর বেআইনী কথাবার্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উদ্দেশ্য এবং লাগামহীন বিদেশ যাত্রা, সব মিলিয়ে মন্ত্রীসভাকে ইতিমধ্যে একদল বানরের আড্ডা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শোনা যাচ্ছে দলীয় কাউনসিল শেষে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সভাপতির পদ হতে পদত্যাগ করে সহোদরা শেখ রেহানাকে এই পদে বসাতে যাচ্ছেন। দিন বদলের এমন নমুনা আসলেই বদল হিসাবে কাজ করবে, তবে তা দেশের জন্য নয় বরং শেখ পরিবারের জন্যে।
দিন বদলের যাত্রাপথে কেমন ছিলাম আমরা গত ছ’মাস? ভাল বল্লে নিশ্চয় বাড়িয়ে বলা হবেনা। আমাদের শাষন ব্যবস্থার পূরোটাই এখন বিচারমূখী। যুদ্বাপরাধী এবং রাজাকার বিচার, শেখ মুজিব হত্যা বিচার, জেলহত্যা বিচার, ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা বিচার, ইতিহাস বিকৃতকারীর বিচার, কিবরিয়া হত্যা বিচার, বিচারের তালিকা এখন অনেক লম্বা, এবং এসব অপরাধের শিকার পরিবারগুলোর জন্যে সত্যি দিন বদলের সময় এখন। বাকি দেশবাসীর জন্যে দিন বদলের যাত্রা এখন ভিন্নমূখী। শুরুটা অংগ সংগঠন ছাত্রলীগ দিয়ে, যা পরবর্তীতে নিখিল আওয়ামী লীগের শুরু হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। চাদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ব্লাক মেইলিং, বেআইনী দখল, হত্যা, গুম, ধর্ষন, প্রশাষন দলীয়করন সহ জাতীয় রাজনীতির যাবতীয় অপরাধগুলোকে আওয়ামী সাইনবোর্ডের ছত্রছায়ায় রফতানী করা হয়েছে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, জেলা-উপজেলায়, শহর-বন্দরে, নগর-মহানগরীতে। এমনটা করা হয়েছে অতীতের সব সরকারের অপকর্মের গতিকে হার মানিয়ে, এক কথায় ফেডারেল এস্কপ্রেস কায়দায়। লুটপাট মহোৎসবের উন্মাদনায় নাচছে সমগ্র বাংলাদেশ, সাথে নাচছে আওয়ামী লীগ। গ্রামে গঞ্জে স্থবির হয়ে গেছে জনজীবন; ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, তাতী লীগ সহ অগুনিত লীগের যাতাকলে থমকে গেছে মানুষের বেচে থাকা। আওয়ামী লীগের এই উন্মাদনার সাথে যোগ দিয়েছে দেশের ব্যুরোক্রাসি, বুদ্বিজীবি, মিডিয়া, ডাক্তার, এঞ্জিনিয়ার, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মজীবি সহ সমাজের সব সূবিধাভোগী দল। পাশাপাশি ব্যর্থতার শ্মশানে সমাহীত হচ্হে বিডিআর অধ্যায়, প্রতিবেশী দেশের মৃত্যু ফাদ, গার্মেন্টস শিল্প সহ দেশের গোটা অর্থনৈতিক ভিত্তি।
আওয়ামী লীগের ছ’মাস জোট সরকারের পাচ বছর অপশাষনের গতিকে দ্রুত ছাড়িয়ে যাচ্ছে, টার্ম শেষে এই দলের শাষন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হবে এ ব্যাপারে সন্দিহান থাকার আপাত কোন কারণ দেখা যাচ্ছেনা।