আসুন এমন একটা দিনের স্বপ্ন দেখি যেদিন এদেশের মানুষ স্বাধীনতার ঘোষক, জাতির পিতা, রাজাকার সহ ইতিহাসমূখী বিতর্কগুলোর অবসান ঘটিয়ে একটা common point of understanding আসতে পারবে। এ ধরনের একটা বুঝাপরায় আসা গেলে দেশের রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গরুর খোয়ার, পাবলিক শৌচাগার সহ যাবতীয় স্থাপনাগুলোর উপর পুনঃপুনঃ নাম বদলানোর খড়্গ নেমে আসবেনা। খবরে প্রকাশ এখন হতে ১ হতে ৫০০ টাকার সব নোটে শেখ মুজিবের ছবি থাকবে শেখ কন্যা যে গতিতে উনার পিতার নাম দেশের আকাশ বাতাসে ছড়াতে চাচ্ছেন মনে হচ্ছে এ সূযোগ হাতছাড়া হলে আর বোধহয় সূযোগ আসবেনা। আমাদের currency'র উপর শেখ মুজিবের ছবি থাকাটা অযৌক্তিক কোন ব্যপার নয়, কিন্তূ ক্ষমতা পাওয়ার ৬ মাসের ভেতর পিতাকে নিয়ে এতটা উন্মাদনা জাতি ভাল চোখে দেখবেনা। দেশের ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের অভাবে ফুসছে, গ্যাসের অভাবে নিভূ নিভূ করছে শিল্পখাত, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, তাতী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগের মত অংগ সংগঠংনগুলোর ষ্টীম রোলারে জন জীবন বিপর্য্যস্ত, ভোগ্যপন্যের বাজার জ্বলছে দাউ দাউ করে ... দেশ শাষনের এমন একটা ব্যর্থ প্রেক্ষাপটে মুজিব নামের জয় জয়কার আওয়ামী লীগের জন্যে মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দিতে পারে যদিনা মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবনে এ দলটি আবারও ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগ এবং তার লেজুড় সংগঠনগুলোর নেতারা শেখ মুজিবকে রাতারাতি আকাশে উঠাতে চাইছে নিজদের পকেট স্বার্থে, এ ধরনের ধান্ধাবাজির দৌড়ে শামিল হয়ে শেখ হাসিনা শুধু নিজের পিতাকেই ছোট করছেন্না, সাথে একজন জাতীয় নেতাকে তার উচ্চতা হতে নামিয়ে ধান্ধাবাজদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা হয়ত ভূলে যান দেশের শতভাগ মানুষই উনার পিতার একনিষ্ঠ ভক্ত নন এবং অনেক ক্ষেত্রে এই নেতার রাজনৈতিক এবং প্রশাষনিক কর্মকান্ডের ঘোরতর বিরোধী। জাতি হিসাবে আমরা এখনো মধ্যযুগীয় সভ্যতা পার হতে পারেনি তাই পকেট স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে জাতীয় রাজনীতি এবং এর পথিকৃতদের মূল্যায়ন করার মন মানষিকতাও আমাদের তৈরী হয়নি। তাই স্বভাবতই ধরে নিতে পারি ব্যর্থতার পংকিলতায় সমাহিত হয়ে আওয়ামী লীগ যেদিন ক্ষমতা হতে বিদায় নেবে সাথে বিদায় নেবে তার নাম প্রতিষ্ঠা করার দলীয় মহোৎসব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচনী রায় আনুবাদ করতে আওয়ামী লীগ নেতারা পূরোপূরি ব্যর্থ হচ্ছেন। একটা জিনিষ উনারা হয়ত হিসাবে ভূল করছেন, বাংলাদেশের মানুষ এই দলটিকে আকাশ সমান ম্যন্ডেট দিয়েছিল ইতিহাস লেখার জন্য নয়, হাসপাতালের নাম বদলানোর জন্যে নয়, ১ হতে ৫০০ টাকার নোটে নেতার ছবি ছাপানোর জন্যে নয়, খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করার জন্যে নয়, বরং বিএনপির যাতাকলে নিষ্পেষিত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে একটা সূস্থ প্রেক্ষাপটে টেনে আনার জন্যে। বাস্তবতা হল, বিএনপির ৫ বছরের অপশাষন এবং আওয়ামী ৬ মাসের শাষনের ভেতর মৌলিক কোন তফাৎ খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা, অনেকাংশে বরং দিন বদলের শাষন খালেদা-তারেক অপশাষনকেও হার মানাচ্ছে বিদ্যুত গতিতে। নোটের উপর ছবি নয়, বরং আইনের শাসন এবং জনগুরুত্ব সম্পন্ন সমস্যগুলো সমাধান করে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবকে দলীয় নেতার বলয় হতে বের করে জাতিয় নেতার পর্য্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। এমনটা করতে ব্যর্থ হলে দিন দিন শেখ মুজিবের ভক্তের চেয়ে তার শত্রুর সংখ্যাই বাড়তে থাকবে। এবং এর জন্যে দায়ী থাকবেন শেখ কন্যা নিজে।