বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে অনেকটা তামাশা করে কথাটা বলা হয়, হাজির ছেলে পাঁজি! বাস্তবে এমনটা হতে হবে তার কোন বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা নেই, তবুও কথাটার প্রচলন বেশ ব্যাপক অন্তত আক্ষরিক অর্থে। আসলে পিতা-মাতার পথে পা মাড়িয়ে সন্তান ভাল পথে এগুবে এমন নজির আজকের বাংলাদেশে বেশ দুর্লভ। হাজী হোক আর পাজি হোক সন্তান আজকাল সন্তানের মতই বেড়ে উঠছে, এতে মা-বাবার নিয়ন্ত্রণ থাকছে খুব সামান্যই। প্রসঙ্গটা টানছি বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনে সরকার এবং বিচার ব্যবস্থার নিবিড় বুঝা পরার কারণে। একথা সত্য বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিক ক্ষমতার আয়না মাত্র, নিম্ন এবং উচ্চ আদালতের বিচারকরা সরকারের প্রতিনিধি হয়ে আদালতে দলীয় স্বার্থ রক্ষা করে থাকেন। এমনটা চলে আসছে বাংলাদেশের ঊষালগ্ন হতে। বর্তমান সরকারের আগ পর্য্যন্ত বিশেষকরে উচ্চ আদালতের বেঞ্চগুলো কিছুটা হলেও চক্ষু লজ্জার কারণে রাজনৈতিক সরকারের সাথে সন্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিল। বর্তমান ডিজিটাল সরকার এমন এনালগ লজ্জা অনেকটা সন্ত্রাসী কায়দায় বিদায় করে বিচার ব্যবস্থায় দলীয় প্রতিনিধিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। দলীয় কর্মসূচী বাস্তবায়নে ক্ষমতাসীন দলকে এখন আর পার্লামেন্টে সময় ব্যয় করতে হয়না, হাইকোর্ট সুপ্রীম কোর্ট দুয়ার খুলে বসে আছে এ সব কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নের জন্যে। হয়ত সরকার বুঝে নিয়েছে পার্লামেন্টে আইন করতে গেলে অনেক ঝামেলা, প্রস্তাব আনতেই বিরোধী দল শুরু করে হাঙ্গামা, সাথে সূর মেলায় মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর মত মিডিয়া মোগলদের বৈরী প্রচারযন্ত্র। নীচু লেভেলের দলীয় উকিলকে দিয়ে আদালতে রীট করলেই আদালত রায় দেয় বিদুৎ গতিতে এবং এই রায়ের বিরুদ্বে কেউ কোন শব্দ করলেই দেশদ্রোহী, রাষ্ট্রদ্রোহী, মস্তিষ্ক বিকৃত, কালা, বোবা ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাকে আনা হয় বিচারের আওতায়। সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল পরিবর্তন! আসলেই আমরা গর্ব করতে পারি আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে, সরকারের প্রতি বিচার ব্যবস্থার এমন বিশ্বস্ততার উদাহরণ বিশ্ব শাসনব্যবস্থায় একেবারেই বিরল।
ফিরে যাই হাজীর ছেলে পাঁজি প্রসংগে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ মুজিবের নাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তার সন্তানাদি সহ পরিবারের সবার জন্যে শারীরিক এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন পাশ করা হচ্ছে। একটু খটকা লাগার কথা, তৃতীয় বিশ্বের সবচেয়ে চরিত্রহীন দেশে আইন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা? কল্পনা করুন দৃশ্যটা; ছোটখাট শেখ হাসিনা মাথায় ঘোমটা এবং চারপাশে ২/৪ জন বন্দুকধারী চৌকিদার নিয়ে বাজার করতে গেছেন নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে (বাজারে না গেলে বাজার রাজনীতি বুঝবেন কি করে কথিত জননেত্রী!)। সমস্যা হচ্ছে আজকের সন্ত্রাসবাদ এমন একটা উচ্চতায় পৌছে গেছে যেখানে ২/৪টা রাইফেল অথবা ট্যাংক কামান দিয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়না। মুফতি হান্নানদের দল আজকাল অনেক বেশী স্মার্ট, অনেক বেশী ধুরন্ধর। প্রধানমন্ত্রী নিজের দল আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার প্রথম প্রহর পার হওয়ার আগেই ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নামের বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলেছে বাংলাদেশকে। দলীয় প্রধান হিসাবে এর দায়-দায়িত্বের সবটাই নিতে হবে শেখ হাসিনাকে। একদিকে সন্ত্রাসের বীজ বপন আবার সেই সন্ত্রাষীদের হাত হতে ভবিষ্যতে রেহাই পেতে চৌকিদার নিয়োগ, এমন একটা ছবি অনেকটা কলম্বিয়ার ড্রাগ লর্ডদের চলাফেরার কথাই মনে করিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে এখন বিশাল এক ম্যান্ডেট, যার যথাযত প্রয়োগ এবং ব্যবহার করে আইনের শাসন নিশ্চিত পূর্বক শুধু নিজের জীবনই নিশ্চিত নয় সাথে নিশ্চিত করতে পারেন ১৫ কোটি মানুষের নিরাপত্তা।
পুরানো গণভবন না ’যমুনা’, এমন একটা দ্বন্দ্বে ভুগছেন আইনী লোকেরা। শেষ পর্য্যন্ত পছন্দ হয়ত ছেড়ে দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর উপর। আরও একটা দৃশ্য কল্পনা করার চেষ্টা করুন; ছোটখাট হাসিনা, ক্ষমতা হারিয়ে পুরানো গণভবনে চারদিকে বন্দুক কামানের পাহারা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। রুদ্ধদ্বার কক্ষে বৈঠক করছেন জাহাংগীর কবীর নানক এবং মোগলে আজমের সাথে। প্রসঙ্গ, কি করে দেশকে অচল করা যায়, ৫/১০টা যানবাহন পুড়িয়ে ক্ষমতার সিঁড়ি পাকা করা যায়! জনগণের বাড়ি আর তাদেরই পয়সায় লালিত অস্ত্রধারী চৌকিদার নিয়ে সেই জনগণের জীবনই বিপর্যস্ত করার মহাপরিকল্পনা! জাতির পিতাকে মূল্যায়নের যোগ্য প্রতিদান বটে! এমন একটা দৃশ্য কি খুবই কাল্পনিক, অবাস্তব এবং অপ্রাসঙ্গিক? শেখ হাসিনার অতীত রাজনীতি কিন্তু তা বলে না। প্রথমত উনি ১৪টা চাঁদাবাজির মামলার আইনী মোকাবেলা করেন্নি, ক্ষমতার জোড়ে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আমরা কি করে নিশ্চিত হব গণভবনে বসে আবারও তিনি আজম চৌধূরীদের দরবারে চাঁদার সমন পাঠাবেন্ না? অন্য আরেক শেখ তনয়া কে ধানমন্ডিতে আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে চৌকিদার প্রহরা সহ। বলা হয়ে থাকে এই শেখ কন্যা শেখ পরিবারের হিসাবরক্ষকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। শেখ হাসিনার পূর্ব লন্ডনের কন্ডোমনিয়ামের পাহারায়ও রয়েছেন এই জুনিয়র শেখ। লন্ডনে বাস করে উনাকে প্রায়ই বেয়াই বাড়ি বেড়াতে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি যেতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, শেখ রেহানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চৌকিদারের দলকে কি তাহলে লন্ডন এবং হেলসংকিতেও যেতে হবে? প্রশ্নটা আসতে বাধ্য কারণ মুফতি হান্নানের হাত এখন সুদূর লন্ডন পর্য্যন্ত বিস্তৃত, তা ছাড়া তারেক জিয়াও যে এখন লন্ডনে।
হাজীর ছেলে পাজি হয় কিনা তা গবেষণার বিষয়, কিন্তু শেখ হাসিনা যে উনার পিতার মত হন্নি তা বের করতে গবেষণার দরকার হবেনা। উনি একাধারে চাঁদাবাজ, প্রফেশনাল মিথ্যুক, খুন সংক্রান্ত হুকুমের আসামী এবং চরম ব্যর্থ সরকার প্রধান। এ ধরনের তৃতীয় শ্রেনীর রাজনীতিবিদ-কাম-সরকার প্রধানকে ঢাকায় বাড়ি আর ২৪/৭ পাহারার ব্যবস্থা করে জাতির পিতাকে সন্মান দেখানোর কথা একেবারেই তৃতীয় শ্রেনীর ধাপ্পাবাজি।