মইন উদ্দিন উপাখ্যান এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক চরিত্র

Submitted by WatchDog on Saturday, July 11, 2009

জেনারেল মইনের নাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম। ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার বদৌলতে এই জেনারেল বাংলা সিনেমার ভিলেন চরিত্রকেও যেন হার মানাচ্ছেন। অবসরে যাওয়া এই সেনা অফিসার বিমান বন্দরের কোন দুয়ার দিয়ে আগমন র্নিগমন করছেন এটাও একটা বিরাট খবর, অথবা এই ক্ষমতাধর ব্যক্তির সম্বন্ধি বাংলাদেশের পল্লীতে কত ছটাক জমি ক্রয় করেছে তা এখন র্দুনীতির মানদন্ডে বড় ধরনের র্দুনীতি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। পার্লামেন্টের সংসদীয় কমটিগুলো সম্ভব হলে এখনই এই জেনারেলকে ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠিয়ে আইনের শাষন সুনিশ্চিত করতে চাইছে। দেশের প্রফেশনাল বুদ্বিজীবি মহলে মইন উদ্দিন আহমেদ অনেকটা পাকিস্থানী কায়দায় মইন উদ্দিন খান’এ রূপান্তরিত হয়ে গেছেন ১/১১’র কারণে। বলা হচ্ছে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা এই জেনারেল এবং তার দোসরদের কারণে হাজার বছর পিছিয়ে পরেছে। এক কথায়, আমাদের সমসাময়িক যত ব্যর্থতা তার সব কারণ এই জেনারেল এবং তার তৈরী ১/১১।

রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর কোন স্থান নেই, এটা সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠিত সত্য। সমস্যা হচ্ছে, ১/১১’র কারণে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যহত হয়েছে এমন তত্ত্ব নিয়ে যারা আহাজারী করছেন তাদের অনেকেরই জন্ম সেনাছাউনিতে। আমাদের স্মরণ শক্তি যদি ফিকে না হয়ে থাকে তাহলে মনে করতে অসূবিধা হওয়ার কথা নয় বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি নামের দল দুটির জন্ম ইতিহাস। এই দুটি দলের আর্কিটেক্টরা দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নিজদের ক্ষমতা দখলকে বৈধ করতে চেয়েছেন সমসাময়িক রাজনীতিকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে। জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখল ছিল একদলীয় বাকশাল হতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে, জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিলেন র্দুনীতি দমনের নামে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর পারস্পরিক বিশ্বাষ, আস্থা এবং সন্মানের ভয়াবহ ঘাটতির কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করে সমাধান করতে হয় নির্বাচন পদ্বতি। এধরনের মধ্যবর্ত্তী সরকারও নিশ্চিত করতে পারেনি একটা স্বচ্ছ নির্বাচন, একদিকে ক্ষমতাসীন দল হাজার কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফলকে নিজদের পক্ষে নেয়ার পায়তারা, অন্যদিকে বিরোধী দলের হিংস্র প্রতিরোধের নামে দেশকে অচল করে দেয়ার প্রেক্ষাপটে জন্ম নেয় ১/১১। জেনারেল মইন উদ্দিন পর্দার অন্তরালে কথিত ইয়েস উদ্দিনের সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করিয়ে নতুন এক সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। শুরু হয় ১/১১ পর্ব। রাজনীতিবিদ্‌দের ক্ষমতার প্রতি সীমাহীন মোহের অন্য পীঠ উন্মোচনের মাধ্যমে ১/১১ আমাদের পরিচিত করিয়ে দেয় বাংলাদেশের আসল রাজনীতির সাথে। অসূস্থ রাজনীতির সূতা ধরে টানতে গিয়ে বেরিয়ে আসে সমাজের সর্বস্তরে র্দুনীতির ভয়াবহ বাস্তবতা। রাজনীতির নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের মহাভারত উন্মোচিত হয় যার সাথে জড়িত পাওয়া যায় জিয়া এবং মুজিব পরিবার সহ রাজনীতির সব রাঘব বোয়ালদের নাম।

জেনারেল মইন ১/১১’র শুরুতেই প্রতিশ্রুতি দেন একটা স্বচ্ছ নির্বাচন শেষে রাজনীতিবিদ্‌দের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার। এমন প্রতিশ্রুতি বিশ্বাষ করার কোন কারণ ছিলনা রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর পূর্ব ইতিহাসের কারণে। অনেকেই মনে করেছিলেন জেনারেল মইন জিয়া এবং এরশাদের পথ ধরে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে যাচ্ছেন। ক’দিন আগে যারা ছিল অধরা, তাদেরই ধরা হল সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগের মাধ্যমে। বিচার শেষে অনেকের শাস্তি হল, অনেকে ফেরারী হয়ে পালিয়ে গেল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী সহ অনেকেই কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করল অসৎ সাম্রাজ্য রক্ষার জন্যে।

সময় বয়ে যায়। ১৮ মাস সময় যে কোন মানদন্ডে মধ্যবর্তী সরকারের জন্যে অনেক সময়। জেনারেল মইন ১৮ মাস সময়ের কোন পর্য্যায়েই ক্ষমতা দখলের সিগন্যাল দেন্‌নি, বরং সময়মত ক্ষমতা রাজনীতিবিদ্‌দের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার আগের প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকে নির্বাচন আয়োজনের দিকে এগিয়ে যান। ২৯ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনী ফলাফলের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক সরকার গঠনের পর বিদায় নেয় ১/১১ সরকার, পর্দা নামে মইন উদ্দিন নামের এক জেনারেল চরিত্রের।

আজকে এই বিদায়ি জেনারেলকে নিয়ে রাজনীতির মাঠ কেন গরম করা হচ্ছে তার প্রেক্ষাপট লুকিয়ে আছে গণতন্ত্রের প্রতি রাজনীতিবিদ্‌দের মায়াকান্নার ভেতর নয়, বরং ১/১১’র কারণে নেংটা হওয়া চোরাই চরিত্রের জড়ায়ুতে। সময়ের দাবির কারণে জেনারেল মইন এবং ১/১১’র অভ্যুদয় ঘটেছিল, সময়ের বাস্তবতার সাথে তারা বিদায় নিয়েছে। এ নিয়ে তিলকে তাল বানানোর আগে রাজনীতিবিদ এবং তাদের সহযোহী চোরেই দলের উচিৎ নিজদের চরিত্র নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করা।

পদটীকাঃ

১/১১’র অভ্যুদয় না হলে আমরা কি করে জানতামঃ
চেকের মাধ্যমেও বাংলাদেশে চাঁদাবাজী করা যায়।
ওসমান গনী এবং তার বস সাজেদা চৌধুরী শুধু ডাল-ভাত নয়, জ্বলজ্যান্ত বনও আহার করতেন।
জিয়া পরিবারের ডাইনিং রুমে সিদ্বান্ত হত কোটি টাকার টেলিকম বানিজ্য।
অফিস পিওন হতে কোটিপতি হওয়া কোন ব্যপার নয়।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন