অনেকেই হয়ত এড্ডি মারফির ’কামিং টু আমেরিকা’ ছবিটা দেখে থাকবেন। যারা দেখেন্নি তাদের জন্যে সংক্ষেপে ছবিটার কাহিনী তুলে ধরছিঃ আফ্রিকার জামুন্ডা রাজ্যের রাজপুত্র আকিমের বিয়ে ঠিক হয় এমন একজনের সাথে যার চেহারা ইতিপূর্বে তার দেখার সূযোগ হয়নি। প্রিন্স এমন একটা বিয়ের পিড়িতে বসতে বেকে বসেন এবং একজন মনের মানুষের সন্ধানে আমেরিকা যাওয়ার সিদ্বান্ত নেন। যেই কথা সেই কাজ! প্রিন্স নিউ ইয়র্ক শহরের কুইনস্ এ আস্তানা গাড়েন। পরিচয় হয় ভবিষৎ রাজকুমারীর সাথে এবং হাল্কা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে জয় করে নেন হবু রাজকুমারীর মন। অজানা কারণে রাজকুমার চেপে যান নিজ পরিচয় এবং ভালবাসার প্রমান দিতে কাজ করতে বাধ্য হন স্থানীয় ম্যাকডোনালড্ রেষ্টুরেন্টে। একটা কথা বলা হয়নি, জামুন্ডা রাজ্যের রাজা কিন্তূ কিছুতেই মেনে নিতে পারেন্নি পুত্রের এই স্বনির্বাসন, যার কারণে স্বার্বক্ষনিক নিরাপত্তার কথা ভেবে সাথে একজন পাহাড়াদার নিতে বাধ্য করান। যেখানেই রাজকুমার সেখানেই পাহাড়াদার! যাই হোক, হাল্কা রাগ-অনুরাগ এবং জামুন্ডা রাজার আমেরিকা আগমনের মধ্য দিয়ে মিলন হয় রাজকুমার এবং রাজকুমারীর।
দু’দিন আগে আমাদের পার্লামেন্ট মুজিব পরিবারের সবার জন্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে আইন পাশ করেছে। এই আইনের আওতায় শুধু মুজিব তনয়াদ্বয়ই আসবেনা বরং তাদের সন্তানাদিকেও আনা হবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দুই সন্তানদের একজন যুক্তরাষ্ট্রে এবং অন্যজন কানাডায়। রেহানা পরিবারের বিস্তারিত এই লেখকের জানা নেই, শুধু জানা আছে এরা স্বপরিবারে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে বাস করছে। রেহানার পুত্র কিছুদিন হল বিয়ে করেছে স্ক্যান্ডিন্যভিয়ান দেশ ফিনল্যান্ডের এক মেয়েকে। দৃশ্যটা কল্পনা করুনঃ এশিয়ার বাংলাদেশ রাজ্যের প্রায়ত বাদশার মেয়ে এবং নাত-নাতনীরা সুদূর আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের বাসিন্দা, এদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশবাসী বন্দুক রাইফেল সহ একদল পাহাড়াদার পাঠিয়ে দিয়ে কিছুটা হলেও শোধ করল জমানো ঋণ। নাতী জয় আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় বেপরোয়া গাড়ি হাকাচ্ছে, তার ডানে বায়ে দু’দল বাংলাদেশী পাহাড়াদার, এবং তাদের সবাইকে তাড়া করছে সে দেশের হাইওয়ে পুলিশ! অথবা, পৃথিবীর অন্যতম র্দুনীতিহীন দেশ ফিনল্যান্ডে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গেছেন অন্য এক নাতী। স্বভাবতই সাথে থাকবে বাংলাদেশ হতে আগত একদল পাহাড়াদার। হেলসিংকি শহরের মানুষ অবাক বিস্ময়ে, অনেকটা ’কামিং টু আমেরিকা’ ছবির কায়দায় উপভোগ করছে এই সার্কাস। একজন খেটে খাওয়া প্রবাসী হিসাবে কি ভাবে দেখবেন স্বদেশের এই পাহাড়া পাহাড়া খেলা?
কালা জাহাংগীর, সুইডেন আসলাম, সুব্রত বাইন, এ ধরনের নামগুলোর সাথে আপনাদের কি পরিচয় আছে? থাকবে তাতে সন্দেহ কি! কারা এবং কেন এ ধরনের যমদূতদের জন্ম দেয় তার ভেতর লুকিয়ে থাকে আমাদের অনেক অপ্রিয় সত্য। অসূস্থ রাজনীতি এবং ক্ষমতার লোভে বিকারগ্রস্থ রাজনীতিবিদ্দের জড়ায়ুতে জন্ম নিয়ে এরা বেড়ে উঠে বিষাক্ত সাপ হয়ে। স্বার্থের রেশারেশিতে এরাই আবার ছোবল হানে জন্মদাতা/দাত্রীদের বুকে পিঠে। কথিত আছে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যিনি এই পাহাড়া নাটকের লেখক এবং পরিচালক, এক সময় ক্ষমতার লড়াই জোড়দার করতে গিয়ে বাসে আগুন ধরিয়ে সাধারণ যাত্রী পুড়িয়ে মারতে নির্দেশ দেন (যেহেতু বিষয়টির আইনী ফয়সালা হয়নি বিধায় ধরে নেব সত্য, অন্তত আমার কাছে। কারণ এ ধরনের মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হয়ে মরতে হয়েছে বেশ ক’জনকে)। কথা হচ্ছে, রাজনীতিবিদ নিজেরাই যখন নিজদের পাগলা কুকুর লেলিয়ে সাধারণ মানুষের জান কবচ করেন তখন কোথা পাওয়া যাবে পাহাড়া? না-কি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা কোন আইনী ব্যাপার নয়? মুজিব পরিবারের মাত্র একজন এখন বাংলাদেশমূখী এবং তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যদি বিশেষ আইন করতে হয় তা হলে আমরা কি ধরে নেব বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র? আর বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের নিরাপত্তার জন্যে সে সব দেশই যথেষ্ট, বাংলাদেশ হতে র্দুনীতির নাটের গুরু পুলিশ/সেনাবাহিনী পাঠিয়ে তা নিশ্চিত করা হবে এড্ডি মারফির ’কামিং টু আমেরিকা’র মত স্রেফ ঠাট্টা তামাশা।