শনিবার সকাল, সপ্তাহের শুরুঃ
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ... ডিসি অফিস হতে বলছি, স্যার আপনার সাথে কথা বলবেন, লাইনে থাকুন। ও আপনি বলছেন? আমি......বলছি, শুনুন, আগামীকাল শিল্প সচিব আসছেন আমাদের শহরে, শিল্প বিষয়ক মূল্যবান কথা-বার্তা হবে, এরপর থাকছে আপ্যায়ন। আপনাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ৫,০০০ ধরা হয়েছে। সময় করে পাঠিয়ে দেবেন। আচ্ছা, রাখি এবার। বিদায়।
বিকাল ৩টাঃ ঢাকা হতে এসেছেন ভদ্রলোক,
একেবারে কেতাদূরস্ত, গায়ে স্যুট হাতে দামী সিগারেট। হাত বাড়িয়ে পরিচয় দিলেন, লেবার ডিপার্টমেন্ট হতে এসেছেন।...... 'আপনাদের নামে অভিযোগ পাওয়া গেছে, শ্রমিকদের কোন সূযোগ সুবিধা দিচ্ছেন না............'। কত টাকা চাই? ১০ হাজার হলে বসদের মানানো যাবে, ব্যক্তিগত ভাবে আমি এসব ঘৃনা করি। বিদায়।
রাত ৮টাঃ স্থানীয় গ্যাস অফিসের মিটার রিডার।
'আপনাদের গ্যাসের মিটার উলটা ঘুরাতে হবে। কারন? আপনাদের বিল বেশী আসছে, অথচ পাশের কারখনায় আপনাদের চেয়ে বেশী মেশিনারীজ থাকা সত্ত্বেও বিল কম হচ্ছে। উপরওয়ালারা সন্দেহ করেছে। যতটুকু কমানো হবে তার ৫০ভাগ আমার, আর রাজী না হলে বকেয়া বিলের জন্য লাইন কাটা হবে। উপরওয়ালাদের আদেশ। কত চাই? ৫০ হাজার টাকার বিল কমানো হবে, ২৫ আমার।বিদায়।
রবিবারঃ সকাল ৬টা
স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, চোখে মুখে খাই খাই ভাব।
'......শুনেছি আপনারা গ্যাস চুরি করছেন, এভাবে জাতীয় সম্পদ চুরি করবেন আর আমরা জাতীর বিবেক হিসাবে তা চেপে যাব, এমনটা হতে পারেনা,.........। কত চাই? ১০ হাজার। খবরটা পেলেন কোথায়? গ্যাস অফিস হতে। বিদায়।
সকাল ১১টাঃ
স্থানীয় চলন্তিকা ক্লাবের ক'জন তরুন, চোখে মুখে আগ্রাসী ভাবঃ
'......আমাদের ক্লাবের উদ্যোগে ব্যডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে, আপনাকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি বানানো হয়েছে। কত চাই? ২ হাজার। বিদায়।
দুপুর ১টাঃ
বিদ্যুৎ নেই, গ্যাসের চাপ কম, মেশিনারীজ চলছেনা। দাড়োয়ান এসে জানাল দু'জন শ্রমিককে মালামাল সহ বমাল গ্রেফতার করা হয়েছে, চুরি করে পালাচ্ছিল। ইতিমধ্যে কিছু উত্তম-মধ্যম দেয়া হয়ে গেছে।
সন্ধ্যা ৭টাঃ
ছাত্রদলের শহর কমিটির সভাপতি হোন্ডা চড়ে এসেছেন, সাথে ২১ খুনের আসামী আবুল হোসেন। চোখে মুখে খুনী ভাব।
'......শুনেছি শ্রমিক মেরে আধমরা করেছেন, মানুষের ভাল-মন্দ দেখার জন্য আমরা রাজনীতি করি। কত হলে চলবে? ৫ হাজার। বিদায়, শ্রমিকরা অসুবিধা করলে খবর দেবেন, মেরে টেংরী ভেংগে দেব।
রাত ২টাঃ
বাসায় ফোন, শ্রমিক কলোনিতে হাংগামা। স্থানীয় কমিশনার এক মহিলা নিয়ে ফূর্তি করতে চাইছে, দাড়োয়ান বাধা দিতে গেলে তাকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। উলটো দাড়োয়ানকে বাজে মেয়ে মানুষ আনার জন্যে হাতমোড়া দিয়ে বাধা হয়েছে। '......আপনারা ব্যবসা বানিজ্যের নামে বেশ্যাখানা খুলে বসেছেন, এর প্রতিকার করতেই হবে। লাথি মারা হচ্ছে দাড়োয়ানকে, এবং উপর্য্যপুরি। একজন মধ্যস্থতাকারী এসে জানাল এ যাত্রায় ৩ হাজার না দিলে কমিশনার চেয়্যারম্যানকে নিয়ে আসবেন। বিদায়। কমিশনারের হুমকির মুখে দাড়োয়ানের চাকরী শেষ, বিদায়।
সোমবার, দুপুর ১২টা।
জেলা আওয়ামী লীগের কর্মিসভা, সভাপতির ফোন। '......বিএনপি শুনেছি আপনাদের অত্যাচার করছে, এর প্রতিবাদ করতে হবে। কর্মিসভা হচ্ছে, এ নিয়ে আলোচনা হবে। আপনি আমন্ত্রিত। কত চাই? ৫ হাজারের কম হলে খবর আছে। বিদায়।
বিকাল ৩টাঃ
বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই, পানির পাম্প চলছেনা। আবারও চোর ধরা পড়েছে। সসন্মানে চোরকে বিদায় করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সে বিদায়।
রাত ৮টাঃ
স্থানীয় মসজিদ কমিটির গন্যমান্য মুরুব্বীরা এসেছেন। মসজিদ মুসুল্লিদের ভারে পদানত, এর আকার বাড়াতে হবে। কত চাই? '১৫ হাজারের কম হলে আপনাদের মান-ইজ্জত বাচানো যাবেনা.....' গ্যাস অফিসের সেই মিটার রিডার বিশিষ্ট মুসুল্লী। বিদায়।
মংগলবার, ভোর ৫টা।
বিএনপির এমপি লোক পাঠিয়েছেন, ব্যাংকে এলসি খোলায় গোলামাল পাওয়া গেছে, বাচতে চাইলে উনার মুখ বন্ধ করতে হবে। বেচারার ৪ স্ত্রী, সবাইকে আজমীর শরীফ পাঠাবেন এবার। ২০ হাজার মাত্র। বিদায়।
বুধবার, সকাল ১১টা।
ব্যাংক ম্যানেজারের ফোন, ক্যাশ ক্রেডিট (CC) নবায়ন নিয়ে কথা বলতে হবে, সমন পাঠাচ্ছেন। হাজির। '......আপানাদের লেনদেন পড়ে যাচ্ছে, এ অবস্থায় CC নবায়ন করা যাচ্ছেনা, উপরওয়ালারা মানছেনা। কত? ১%, মানে ৩ লাখ। বিদায়।
সন্ধ্যা ৭টাঃ
ক্যাশিয়ার জানালো ১০ লাখ টাকা বাকি নিয়ে হিন্দু এক ব্যবসায়ী ভারতে পালিয়ে গেছে। সন্ধ্যা হতে বাতি নেই, উৎপাদন ৫০ ভাগ কমে গেছে এ সপ্তায়।
বৃহস্পতি বার, সকাল ১০টা।
শ্রমিক বিল দেয়া যাচ্ছেনা, আমদানী নেই। বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিল পরিশোধ না করলে লাইন কাটা যাবে। চেয়ারম্যান সাহেব (আওয়ামী লীগের খুনী নেতা) ২ লাখ টাকার জন্যে চাপ বাড়াচ্ছেন, না দিলে ভাড়াটে খুনী দিয়ে হাইজ্যাক করার ভয় দেখাচ্ছেন। পাকিস্থান আমলে চেয়ারমায়নের স্বগীয় পিতা এখানে হিসাব রক্ষকের কাজ করত বিধায় উনি সড়াসড়ি আসতে লজ্জা বোধ করেন। বিদায় দেয়ার সব রাস্তা বন্ধ।
বিকাল ৫টাঃ
স্থানীয় ছাত্রদলের ভয়াবহ খুনী সাধারন সম্পাদক কারখানার খুটি হতে বিদ্যুৎ লাইন নিয়েছেন, কেউ কিছু বল্লে মেরে টেংরী ভেংগে দেওয়ার হুমকি ঝুলছে।
রাত ১০টাঃ
ফোন, একদল ছাত্রনেতা (জিয়া সৈনিক) ৩/৪জন দেহপশারীনি নিয়ে আমোদ-ফূর্তি করবে কারখানার সুসজ্জিত অফিসে, তাদের অনেকের সাথে পিস্তল এবং মুখে খিস্তি। মদের পয়সা যোগাতে হবে। বিদায়।
ভোর ৫টাঃ
শ্রমিক র্দুঘটনা, মারা গেছে একজন। শত শত চাদাবাজ, ধান্ধাবাজ, মোড়ল, বিচারকে টাইটম্বুর কারখানা। সবার কিছু চাই, না হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ হাজির, ৫০ হাজার না দিলে মামলা দিয়ে সবাইকে আটকানো হবে।
শুক্রবার, সকাল ১১টা।
বিএনপির এমপি, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান, পুলিশের এসপি, প্রেস্ক্লাবের সভাপতি, ছাত্রদল, ছাত্রলীগের ডকসাইটের নেতা, মানুষের জোয়াড়। কিছু চাই, লাশ পড়ে গেছে, সুতরাং বাচতে হলে সবাইকে খুশী করতে হবে। কিন্তূ কি করে?
রাতে মেশিনের সামনে মদ্যপ অবস্থায় কাজ করা এক লাশের মূল্য এখন প্রায় ১০ লাখ।
বিকাল ৩টাঃ
আমার ব্লাড প্রেসার ২০০/১২০...
হে বেচে থাকা, পেচ্ছাব করি তোমার মুখে!