সঠিক দিন তারিখের কথা মনে নেই, শুধু মনে আছে অনেকগুলো বছর পর দেশে গেছি বেড়াতে । বাংলাদেশে তখন ফুটবলের ভরা বসন্ত। রাজনৈতিক বিভক্তিকরনের পাশাপাশি ফুটবল মাঠেও ছিল বিভক্তির দেয়াল, আবাহনী এবং মোহামেডান! ছাত্রলীগ, যুবলীগের মত আবাহানী ক্রীড়াচক্রকেও মনে করা হত আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠন, এবং একই কথা বলা যেত মোহামেডানের বেলায়। পার্থক্যটা ছিল, মোহামেডানকে নির্দিষ্ট কোন দলের অংগ সংগঠন না বলে বরং আওয়ামী বিরোধী অংগ সংগঠন বললেই বোধহয় সঠিক বলা হত। প্রসংগে ফিরে যাই, ঢাকায় আগা খান গোল্ড কাপ চলছে তখন যার রেশ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আলোড়ন তুলছে ব্যাপকভাবে। টুর্নামেন্টটা যেহেতু টিম ভিত্তিক তাই ঘরে ঘরে উড়ছিল আবাহনী এবং মোহামেডানের পতাকা।
একসময় নিজেও ফুটবলের ভক্ত ছিলাম। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে অনেক খেলা দেখেছি মোহামেডানের সমর্থক হয়ে। প্রযুক্তির বদৌলতে বিশ্ব ফুটবল যেদিন আমদের বৈঠখানায় এসে হাজির অবাক হয়ে দেখলাম দেশে ফুটবল বলতে যা খেলা হয়েছে তা ছিল নিছকই ছেলে মানুষি। স্বভাবতই অনেকের মত আমিও মুখ ফিরিয়ে নেই ফুটবল হতে। এ সব ঘটেছিল উল্লেখিত ঘটনার অনেক পর। লীগ এবং সেমি-ফাইনাল ধাপ পেরিয়ে ফাইনালে উঠেছে ঢাকার আবাহনী ক্রীড়াচক্র এবং ইরানের সফেদ-রুহ (যদি ভূল না হয়ে থাকে) ক্লাব।
খেলা শুরু হল। বাসার দু’টা টিভির সামনে ফুটবল পাগল দর্শকে পলটন ময়দান হবার মত অবস্থা। পুরানো দিনের স্মৃতি রোমন্থানের মত আমিও নীরবে দর্শক হয়ে বসে পরলাম খেলা দেখব বলে। খেলা কিছুটা সময় এগুতেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম দর্শকদের সবাই ইরানীয় ক্লাবকে সমর্থন করছে। জিনিষটা মেনে নিতে কষ্ট হল, তাই টিভি পর্দার সামনে দাড়িয়ে খেলা দেখায় ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়ে জানতে চাইলাম নিজ মাতৃভূমির দল সমর্থন না করে বিদেশী দলকে সমর্থন করান আসল কারণ। উত্তর শুনে ধাধায় পরে গেলাম, যে টিভির সামনে বসে আমি খেলা দেখছিলাম ওটা নাকি মোহামেডান সমর্থকদের টিভি এবং পাশের ঘরের টিভি আবাহনীর। সেমি ফাইনালে আবাহনী মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠছে এবং মোহামেডান সমর্থকরা এ ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তাই মনে প্রাণে চাইছে ইরানী ক্লাবের জয়। অদ্ভূদ বিশ্লেষন! অবাক হওয়ার পালা, কেন জানিনা হঠাৎ করে বিতৃষনা এসে গেল ফুটবলে। রাজনীতি একটা জাতিকে কতটা বিভক্ত করলে এ ধরনের মন মানষিকতা জন্ম দিতে পারে এমন সমীকরনের নজিড় বিশ্বের দ্বিতীয় কোন দেশে খূজে পাওয়া বোধহয় দুস্করই হবে। হতে পারে বিদেশে বাস করতে গেলে দেশপ্রেমের মাত্রাটা একটু বাড়াবাড়ির পর্য্যায়েই চলে যায়, অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। কিন্তূ তাই বলে দেশী টিম ফেলে বিদেশী টিমের সমর্থন?
প্রসংগটা টানছি সমসাময়িক একটা ঘটনার সূত্র ধরে। দু’দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে সে দেশের সর্বোচ্চ খেতাবে ভূষিত করলেন। বিশ্ব মিডিয়াতে এ খবরটা ব্যাপক প্রচারনা পেয়েছে। আমরা যারা বিদেশে বাস করি তাদের কাছে একজন বাংলাদেশীর এ ধরনের প্রাপ্তি বিভিন্ন কারণে একটু অন্যরকম; প্রথমত, বিশ্ব মিডিয়া বাংলাদেশকে রোগ বালাই, মহামারী, ঝড় সাইক্লোন, র্দুনীতির দেশ হিসাবে তুলে ধরতে অভ্যস্ত। স্বভাবতই এ নিয়ে কর্মস্থলে বিদেশী সহকর্মীদের বাকা কথা শুনতে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। দ্বিতীয়ত, তৃতীয় বিশ্বের সীমাহীন দারিদ্রতার মাঝেও যে মেধার জন্ম নেয় ডঃ ইউনূসের পুরস্কার তার প্রমান। এ ধরনের একটা প্রাপ্তি বাংলাদেশের কনটেক্সটে কত বড় প্রাপ্তি ছিল তা প্রকাশ পেত যদি একই পুরস্কার সমসাময়িক রাজনীতির দুই নেত্রীর একজনকে দেয়া হত। কি দেখতাম আমরা? আসুন কিছুটা ছবি আকি কাল্পনিক এ প্রপ্তির। দলীয় মিডিয়ার শিরোনামঃ ’৭১’এর পর নতুন করে বাংগালীর বিশ্ব জয়, জয়তু হাসিনা/খালেদা, ঢাকা শহর ছেয়ে যেত ব্যানারে আর তোরনে। দলীয় উৎসবের সূনামীতে প্লাবিত হত বাংলাদেশের পথ-প্রান্তর। তাহলে ডক্টর মো ইউনূস কি এ সবের যোগ্য ছিলেন না? ইদানীং সরকার দলীয় একজন মন্ত্রী মনতব্য করেছেন, মাইক্রো ক্রেডিট দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক নয়, এটর্নী জেনারেল প্রশ্ন রেখেছেন হাসিনাকে নোবেল না দিয়ে কেন ডঃ ইউনূসকে দেয়া হল। হতে পারে সবই বৈধ প্রশ্ন। বিভিন্ন বাংলা ব্লগে ঘুরলে একটা জিনিষ পরিস্কার হবে, ডঃ মো ইউনূসকে নোবেল এবং মার্কিন পুরস্কার দেয়া ছিল ভূল, অন্যায় এবং বাংলাদেশের বিরুদ্বে আর্ন্তজাতিক বেনিয়া সমাজের ষড়যন্ত্রের অংশ, এবং অনেকের কাছে তা শাস্তি যোগ্য অপরাধ! ডক্টর মোঃ ইউনূস নাম উচ্চারনের আগেই এখন জুড়ে দেয়া হয়া জোবরা গ্রামের গ্রামীন ব্যাংকের এক মহিলার নাম, যার কাফনের কাপড় যোগার করতে হয়েছে হাত পেতে। সন্দেহ নেই গ্রামীন ব্যাংকের সূদের হার খুবই চড়া এবং এর আদায় পদ্বতি নিয়েও অনেক প্রশ্ন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের নিস্বঃ এবং দূস্থ মহিলাদের সাহায্যার্থে স্বল্প সূদে কো-লেটারেলহীন ঋণ দিতে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছেনা কেন? গ্রামীন ব্যাংক কোন চ্যারিটি সংস্থা নয়, এটি একটি ব্যাংক এবং এর মূল অবদান হচ্ছে কো-লেটারেলহীন ঋণ। কেউ যদি চড়া সূদের খপ্পরে পরতে না চায় গ্রামীন ব্যাংক নিশ্চয় তাকে গলা ধাক্কায় নিজদের শিকার বানায় না? এক হতে পারে চাটিবাটি গোল করে গ্রামীন ব্যাংককে বাংলাদেশ হতে নির্বাসিত করা। এ আর এমন কি কাজ! সংসদে আইন আনলে দুই বৈরী শিবির একহয়ে এমন আইন রাতারাতি পাশ করাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তূ অবাক কান্ড হচ্ছে, পৃথিবীর প্রায় সব দেশ এই ব্যাংকিং পদ্বতির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে, এবং দারিদ্র বিমোচনের স্বপ্ন দেখছে। এমনকি খোদ মার্কিন মুলুকেও এমন ব্যাংকের কার্য্যক্রম সফল ভাবে এগিয়ে চলছে। তাহলে আমরাই কি পৃথিবীর একমাত্র জাতি যা ক্ষুদ্র ঋণ প্রবাহের মধ্যে কেবল আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি? এ প্রসংগে আরও একটা প্রশ্ন আসতে বাধ্য, কি এমন সম্পদ রয়েছে আমাদের দেশে যা নিয়ে বিশ্ব নিজদের কাজকর্ম ফেলে সব সময় আমাদের বিরুদ্বে ষড়যন্ত্র ব্যস্ত? আমাদের মাটির তলা ফাকা, ১৫ কোটি পদভ্রষ্ট মানুষ, চারদিকে পানি আর পানি, এ গুলো দখল নেয়ার জন্যে বিদেশীদের ষড়যন্ত্রের দাবী কেবল অসাড়ই নয়, বরং অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানারই অলীক উৎপাদন।
আসলে ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে সমালোচনার তীরে ধরাশায়ী করা হয় তার মাইক্রো ক্রেডিট ব্যবসার কারণে নয়, বরং রাজনীতি করার ইচ্ছা পোষনের কারণে। কারণ আমাদের রাজনীতি দুই নেত্রীর দুই পরিবারের কাছে ইজারা দেয়া আছে আগামী ২০০ বছরের জন্যে। এ ফাকে যারই রাজনীতি করার খায়েস হবে তাকেই ঠাই নিতে হবে সমালোচনার আস্তাকুড়ে।
সেই আবাহনী মোহামেডান ফুটবল খেলার মত, বাংলাদেশে রাজনীতি করতে গেলেও আওয়ামী বিএনপির খেলোয়াড় হয়ে খেলতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলেই বরন করতে হবে ইউনূসের পরিনতি। হোক তা নোবেল শান্তি অথবা সর্বোচ্চ মার্কিন পুরস্কার, আওয়ামী-বিএনপি পুরস্কারের কাছে এসব একেবারেই নাম গন্ধহীন।
একটা বাস্তবতা আমরা ভূলে যেতে পছন্দ করি, পৃথিবীটা বদলে গেছে। প্রতিদন্ধিতামূলক দুনিয়ায় যোগ্যরাই এখন হতে বেচে থকবে, অযোগ্যদের ঠাই হবে অর্থনীতির আস্তাকুড়ে। আমরা কি তেমন একটা আস্তাকুড় হতে খুবে বেশী দূর?সঠিক দিন তারিখের কথা মনে নেই, শুধু মনে আছে অনেকগুলো বছর পর দেশে গেছি বেড়াতে । বাংলাদেশে তখন ফুটবলের ভরা বসন্ত। রাজনৈতিক বিভক্তিকরনের পাশাপাশি ফুটবল মাঠেও ছিল বিভক্তির দেয়াল, আবাহনী এবং মোহামেডান! ছাত্রলীগ, যুবলীগের মত আবাহানী ক্রীড়াচক্রকেও মনে করা হত আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠন, এবং একই কথা বলা যেত মোহামেডানের বেলায়। পার্থক্যটা ছিল, মোহামেডানকে নির্দিষ্ট কোন দলের অংগ সংগঠন না বলে বরং আওয়ামী বিরোধী অংগ সংগঠন বললেই বোধহয় সঠিক বলা হত। প্রসংগে ফিরে যাই, ঢাকায় আগা খান গোল্ড কাপ চলছে তখন যার রেশ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আলোড়ন তুলছে ব্যাপকভাবে। টুর্নামেন্টটা যেহেতু টিম ভিত্তিক তাই ঘরে ঘরে উড়ছিল আবাহনী এবং মোহামেডানের পতাকা।
একসময় নিজেও ফুটবলের ভক্ত ছিলাম। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে অনেক খেলা দেখেছি মোহামেডানের সমর্থক হয়ে। প্রযুক্তির বদৌলতে বিশ্ব ফুটবল যেদিন আমদের বৈঠখানায় এসে হাজির অবাক হয়ে দেখলাম দেশে ফুটবল বলতে যা খেলা হয়েছে তা ছিল নিছকই ছেলে মানুষি। স্বভাবতই অনেকের মত আমিও মুখ ফিরিয়ে নেই ফুটবল হতে। এ সব ঘটেছিল উল্লেখিত ঘটনার অনেক পর। লীগ এবং সেমি-ফাইনাল ধাপ পেরিয়ে ফাইনালে উঠেছে ঢাকার আবাহনী ক্রীড়াচক্র এবং ইরানের সফেদ-রুহ (যদি ভূল না হয়ে থাকে) ক্লাব।
খেলা শুরু হল। বাসার দু’টা টিভির সামনে ফুটবল পাগল দর্শকে পলটন ময়দান হবার মত অবস্থা। পুরানো দিনের স্মৃতি রোমন্থানের মত আমিও নীরবে দর্শক হয়ে বসে পরলাম খেলা দেখব বলে। খেলা কিছুটা সময় এগুতেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম দর্শকদের সবাই ইরানীয় ক্লাবকে সমর্থন করছে। জিনিষটা মেনে নিতে কষ্ট হল, তাই টিভি পর্দার সামনে দাড়িয়ে খেলা দেখায় ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়ে জানতে চাইলাম নিজ মাতৃভূমির দল সমর্থন না করে বিদেশী দলকে সমর্থন করান আসল কারণ। উত্তর শুনে ধাধায় পরে গেলাম, যে টিভির সামনে বসে আমি খেলা দেখছিলাম ওটা নাকি মোহামেডান সমর্থকদের টিভি এবং পাশের ঘরের টিভি আবাহনীর। সেমি ফাইনালে আবাহনী মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠছে এবং মোহামেডান সমর্থকরা এ ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তাই মনে প্রাণে চাইছে ইরানী ক্লাবের জয়। অদ্ভূদ বিশ্লেষন! অবাক হওয়ার পালা, কেন জানিনা হঠাৎ করে বিতৃষনা এসে গেল ফুটবলে। রাজনীতি একটা জাতিকে কতটা বিভক্ত করলে এ ধরনের মন মানষিকতা জন্ম দিতে পারে এমন সমীকরনের নজিড় বিশ্বের দ্বিতীয় কোন দেশে খূজে পাওয়া বোধহয় দুস্করই হবে। হতে পারে বিদেশে বাস করতে গেলে দেশপ্রেমের মাত্রাটা একটু বাড়াবাড়ির পর্য্যায়েই চলে যায়, অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। কিন্তূ তাই বলে দেশী টিম ফেলে বিদেশী টিমের সমর্থন?
প্রসংগটা টানছি সমসাময়িক একটা ঘটনার সূত্র ধরে। দু’দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে সে দেশের সর্বোচ্চ খেতাবে ভূষিত করলেন। বিশ্ব মিডিয়াতে এ খবরটা ব্যাপক প্রচারনা পেয়েছে। আমরা যারা বিদেশে বাস করি তাদের কাছে একজন বাংলাদেশীর এ ধরনের প্রাপ্তি বিভিন্ন কারণে একটু অন্যরকম; প্রথমত, বিশ্ব মিডিয়া বাংলাদেশকে রোগ বালাই, মহামারী, ঝড় সাইক্লোন, র্দুনীতির দেশ হিসাবে তুলে ধরতে অভ্যস্ত। স্বভাবতই এ নিয়ে কর্মস্থলে বিদেশী সহকর্মীদের বাকা কথা শুনতে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। দ্বিতীয়ত, তৃতীয় বিশ্বের সীমাহীন দারিদ্রতার মাঝেও যে মেধার জন্ম নেয় ডঃ ইউনূসের পুরস্কার তার প্রমান। এ ধরনের একটা প্রাপ্তি বাংলাদেশের কনটেক্সটে কত বড় প্রাপ্তি ছিল তা প্রকাশ পেত যদি একই পুরস্কার সমসাময়িক রাজনীতির দুই নেত্রীর একজনকে দেয়া হত। কি দেখতাম আমরা? আসুন কিছুটা ছবি আকি কাল্পনিক এ প্রপ্তির। দলীয় মিডিয়ার শিরোনামঃ ’৭১’এর পর নতুন করে বাংগালীর বিশ্ব জয়, জয়তু হাসিনা/খালেদা, ঢাকা শহর ছেয়ে যেত ব্যানারে আর তোরনে। দলীয় উৎসবের সূনামীতে প্লাবিত হত বাংলাদেশের পথ-প্রান্তর। তাহলে ডক্টর মো ইউনূস কি এ সবের যোগ্য ছিলেন না? ইদানীং সরকার দলীয় একজন মন্ত্রী মনতব্য করেছেন, মাইক্রো ক্রেডিট দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক নয়, এটর্নী জেনারেল প্রশ্ন রেখেছেন হাসিনাকে নোবেল না দিয়ে কেন ডঃ ইউনূসকে দেয়া হল। হতে পারে সবই বৈধ প্রশ্ন। বিভিন্ন বাংলা ব্লগে ঘুরলে একটা জিনিষ পরিস্কার হবে, ডঃ মো ইউনূসকে নোবেল এবং মার্কিন পুরস্কার দেয়া ছিল ভূল, অন্যায় এবং বাংলাদেশের বিরুদ্বে আর্ন্তজাতিক বেনিয়া সমাজের ষড়যন্ত্রের অংশ, এবং অনেকের কাছে তা শাস্তি যোগ্য অপরাধ! ডক্টর মোঃ ইউনূস নাম উচ্চারনের আগেই এখন জুড়ে দেয়া হয়া জোবরা গ্রামের গ্রামীন ব্যাংকের এক মহিলার নাম, যার কাফনের কাপড় যোগার করতে হয়েছে হাত পেতে। সন্দেহ নেই গ্রামীন ব্যাংকের সূদের হার খুবই চড়া এবং এর আদায় পদ্বতি নিয়েও অনেক প্রশ্ন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের নিস্বঃ এবং দূস্থ মহিলাদের সাহায্যার্থে স্বল্প সূদে কো-লেটারেলহীন ঋণ দিতে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছেনা কেন? গ্রামীন ব্যাংক কোন চ্যারিটি সংস্থা নয়, এটি একটি ব্যাংক এবং এর মূল অবদান হচ্ছে কো-লেটারেলহীন ঋণ। কেউ যদি চড়া সূদের খপ্পরে পরতে না চায় গ্রামীন ব্যাংক নিশ্চয় তাকে গলা ধাক্কায় নিজদের শিকার বানায় না? এক হতে পারে চাটিবাটি গোল করে গ্রামীন ব্যাংককে বাংলাদেশ হতে নির্বাসিত করা। এ আর এমন কি কাজ! সংসদে আইন আনলে দুই বৈরী শিবির একহয়ে এমন আইন রাতারাতি পাশ করাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তূ অবাক কান্ড হচ্ছে, পৃথিবীর প্রায় সব দেশ এই ব্যাংকিং পদ্বতির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে, এবং দারিদ্র বিমোচনের স্বপ্ন দেখছে। এমনকি খোদ মার্কিন মুলুকেও এমন ব্যাংকের কার্য্যক্রম সফল ভাবে এগিয়ে চলছে। তাহলে আমরাই কি পৃথিবীর একমাত্র জাতি যা ক্ষুদ্র ঋণ প্রবাহের মধ্যে কেবল আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি? এ প্রসংগে আরও একটা প্রশ্ন আসতে বাধ্য, কি এমন সম্পদ রয়েছে আমাদের দেশে যা নিয়ে বিশ্ব নিজদের কাজকর্ম ফেলে সব সময় আমাদের বিরুদ্বে ষড়যন্ত্র ব্যস্ত? আমাদের মাটির তলা ফাকা, ১৫ কোটি পদভ্রষ্ট মানুষ, চারদিকে পানি আর পানি, এ গুলো দখল নেয়ার জন্যে বিদেশীদের ষড়যন্ত্রের দাবী কেবল অসাড়ই নয়, বরং অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানারই অলীক উৎপাদন।
আসলে ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে সমালোচনার তীরে ধরাশায়ী করা হয় তার মাইক্রো ক্রেডিট ব্যবসার কারণে নয়, বরং রাজনীতি করার ইচ্ছা পোষনের কারণে। কারণ আমাদের রাজনীতি দুই নেত্রীর দুই পরিবারের কাছে ইজারা দেয়া আছে আগামী ২০০ বছরের জন্যে। এ ফাকে যারই রাজনীতি করার খায়েস হবে তাকেই ঠাই নিতে হবে সমালোচনার আস্তাকুড়ে।
সেই আবাহনী মোহামেডান ফুটবল খেলার মত, বাংলাদেশে রাজনীতি করতে গেলেও আওয়ামী বিএনপির খেলোয়াড় হয়ে খেলতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলেই বরন করতে হবে ইউনূসের পরিনতি। হোক তা নোবেল শান্তি অথবা সর্বোচ্চ মার্কিন পুরস্কার, আওয়ামী-বিএনপি পুরস্কারের কাছে এসব একেবারেই নাম গন্ধহীন।
একটা বাস্তবতা আমরা ভূলে যেতে পছন্দ করি, পৃথিবীটা বদলে গেছে। প্রতিদন্ধিতামূলক দুনিয়ায় যোগ্যরাই এখন হতে বেচে থকবে, অযোগ্যদের ঠাই হবে অর্থনীতির আস্তাকুড়ে। আমরা কি তেমন একটা আস্তাকুড় হতে খুবে বেশী দূর?