প্রেক্ষাপট-১:
গোয়ালন্দ ঘাট হয়ে ট্রেনে করে ঢাকা ফিরছি। কমলাপুর ষ্টেশনের অনতিদূরে মালিবাগ ক্রসিং পার হতেই ঠায় দাড়িয়ে গেল ট্রেনটা। মহাকালের সময় হতে হাটি হাটি পা পা করে একটা ঘন্টা বিদায় নিল, কিন্তূ ট্রেনটা সেই যে লাশ হয়ে দাড়াল আর জ্যান্ত করা গেল না। সাথে একগাদা লাগেজ, তাই অন্য দশটা যাত্রীর মত টারজান কায়দায় ট্রেন হতে লাফিয়ে রিক্সা চেপে উউউউ শব্দে গন্তব্যে পৌছার ছবি চিত্রায়ন সম্ভব হলনা। চরম বিরক্তিতে ত্যাক্ত বিরক্ত, না পারছি গিলতে না পারছি ফেলতে। পাঠক, শক্ত হয়ে বসুন, কাহিনীর এখানেই শেষ নয়, শুরু মাত্র! জানালায় থুতনি হেলিয়ে চারদিক চোখ বুলাচ্ছি, যতদূর চোখ যায় বস্তি আর বস্তি। ময়লা, নোংরা আর আবর্জনায় বেড়ে উঠা বস্তি জীবনকে এত কাছ হতে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হলনা। এক মা সদ্য প্রসূত বাচ্চাকে কোন রকমে আকড়ে চুলায় আগুন ধরানোর চেষ্টা করছে, চারদিকে আরও গোটা তিনেক নাবালক শিশুর এলোমেলো চলাফেরা। এ যেন নোংরা রাজ্যে নোংরা রানী আর শাহাজাদা-শাহাজাদীদের রাজত্ব! পাশেই এক মহিলা অন্য মহিলার কেশ চর্চার পাশাপাশি উকুন মারছে মহা আনন্দে। এক কথায় গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মানুষের অলস এবং বৈচিত্রহীন জীবন। এক নাগাড়ে দেখতে গেলে ঝিমুনী এসে যায়। এমনটাই আসছিল বোধহয়, হুড়মুড় করে জেগে উঠলাম বিকট এক গর্জনে। ‘চু...নীর মাগি, তুরে কইলাম ভাত পাকাইতে আর তুই গেলি তুর ভাতারের মার ১৪ গুষ্টি...মারাইতে।’ স্বামী হবে হয়ত ৪টা নাবালক সন্তানের জননীর। ঝাপিয়ে পরে এলোপাথাড়ি লাথি মারতেই কোলের বাচ্চাটা ছিটকে পরল মাটিতে, বাকি ৩টা হাল্কা উত্তম-মধ্যম খাওয়ার পর পিপড়ার মত পালিয়ে গেল। দানবীয় উন্মত্ততায় চুলের মুঠি টেনে মাথা চেপে ধরল ফুটন্ত পানিতে। গগনবিদারী চীৎকারে চারদিক কেপে উঠল। এ নিয়ে বস্তির কাউকে খুব একটা উতলা মনে হলনা। আমার সহযাত্রীর অনেকেই দেখলাম প্রাণখুলে উপভোগ করছে এ দৃশ্য।
প্রেক্ষাপট-২:
এ প্রেক্ষাপটের চাক্ষুস স্বাক্ষী হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে নিশ্চিত, কেউ না কেউ তা খুব কাছ হতে তা দেখেছে। সপ্তাহ দু’এক আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ির এক ডাক্তার পরিবারের মহিলা ইনটার্ন ডাক্তারকে পিটিয়ে হত্যা করে গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। আসামী? স্বামী, এবং তিনিও একজন ডাক্তার। ভালবেসে বিয়ে হয়েছে ত তাতে কি! টাকা, জমি আর ঢাকায় একটা ফ্লাটের চাহিদা ত আর ভালবাসার কাছে বিকিয়ে দেয়া হয়নি! অক্ষম? লেলিয়ে দাও গোটা পরিবার, অত্যাচারে জর্জরিত কর ভালবাসার শুকনো পাতাকে, জিম্মি করে নাও শ্বশুরালয়! টাকা চাই, নইলে রক্ত!! এমন একটা চাহিদার কাছে সমাহিত কর দু’দিন আগের প্যানপ্যনানির প্রেম। ভালবাসা গেলে ভালবাসা মিলবে পানির দরে (ডাক্তার যে!), কিন্তূ ঢাকার একটা ফ্লাট গেলে?
প্রেক্ষাপট-৩:
খবরটা একেবারে তাজা। গত ১৯শে সেপ্টেম্বরের ঘটনা । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন সংযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের মাষ্টার্স কোর্সের ছাত্রী মাফরুদা হক সুতপাকে তার ব্যাংকার স্বামী এবং তার পরিবার বিয়ের মেহেদী না শুকাতেই পিটিয়ে পরপারে পাঠিয়ে দিয়েছে। চাহিদার মাত্রাটা এখনো প্রকাশ পায়নি, তবে তা যে খুব একটা সীমিত ছিল তা নিশ্চয় নয়! পাত্র বাবাজীর একই দাবী, মনের দুঃখে ভালবাসার মানুষটি আত্মহত্যা করেছে।
কোন প্রেক্ষাপট নেইঃ
ব্লগার, আপনি কি একজন কবি? আপনি কি ব্যর্থ ভালবাসার অনলে জ্বলে পুড়ে অংগার হচ্ছেন? মোবারকবাদ আপনাকে। এ যাত্রায় আপনি নিজে যেমন জেল-হাজত হতে বেচে গেলেন, তেমনি অন্য একজনকে জানে বাচতে দিলেন। কবিতার আড়ালে যে পশুটাকে আপনি লালন করছেন তার সাথে শেষ মোলাকাত কবে হয়েছিল? পশুর সাথে ফয়সালা না করে ভালবাসা নিয়ে কেবল কবিতা লিখে যাওয়াই বোধহয় সমাজের জন্যে নিরাপদ। এক কাজ করুন, ব্যর্থ প্রেমের কবিতা রচনার অন্তরালে আপনার বৈষয়িক ব্যাপারগুলোর একটা সন্তোষজনক সমাধান করে ফেলুন। ঢাকায় একটা ফ্লাটের দরকার হলে পরিশ্রম করুন, আয় রোজগার বাড়ানোর ধান্ধা করুন। দয়াকরে কবিতার মোহজালে আটকে ফ্লাট চাহিদার কাছে কাউকে জিম্মি করবেন না।
আপনি ডাক্তার? ইঞ্জিনীয়ার? উকিল? শিক্ষক? ব্যবসায়ী? এবং ভালবাসার রুগী, এবং সাথে একটা ফ্লাটের চাহিদাও সংগোপনে লালন করছেন? চিকিৎসা করান এ জৈবিক এবং মানষিক রোগের। যদি ফ্লাটের চাহিদার কাছে ভালবাসা পরাজিত হয়, তা হলে আত্মহত্যা করে অমর করে যান আপনার ভালবাসা। আপনার কাহিনী লাইলী-মজনু, শীরিন-ফরহাদ এবং শেক্সপীয়ার ট্রাজেডীর নায়ক নায়িকাদের মত যুগ যুগ ধরে বেচে থাকবে।
Enough is enough!!!