একজন রহমান সাহেবের গল্প

Submitted by WatchDog on Saturday, October 24, 2009

Rahman

পাগলামী করার ইচ্ছে হতেই নিউ ইয়র্ক সময় রাত ২টায় রহমান সাহবেকে ফোন করে বসলাম। এমন কাজটা করায় উনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। মাঝ রাতে ঘুম ভাংগিয়ে ছাগলের মত ভ্যা ভ্যা হেসে আমাকে অনেক জ্বালিয়েছেন, তাই জিনিষটা ফিরিয়ে দিতে বিবেকে এতটুকু বাধলনা। ’কি গোলমালের মিয়া, এত রাইতে ফোন কিল্লাই, খারাপ কিছু নাকি? ’আরে না, খারাপ খবর হতে যাবে কেন বরং বেজায় খুশীর খবর, আমি আপনার এএনপিতে (আসল ন্যাশনালিষ্ট পার্টি) যোগদান করার সিদ্বান্ত নিয়াছি’। ’মাল কি বেশী খ্যাইয়া ফেলাইছেন না-কি, মাঝ রাইতে আবোল তাবোল কথাবার্তা ভাল লক্ষন না’। ’কি যে বলেন রহমান ভাই, আপনার এত অনুরোধ ফেলি কি করে, তা ছাড়া ভেবে দেখলাম আমিও মনে প্রাণে জাতীয়তাবাদি, এএনপির তালিকায় নাম লিখিয়ে তা পাক্কা করতে চাই’। ’আলহামদুল্লিলাহ, এতদিনে লাইনে আইতাছেন মিয়া, তা আমি কি করবার পারি?।’ ’মন দিয়ে শুনেন রহমান ভাই, আপনার সোর্স মারফত নেত্রীকে খবর পাঠান, আমি জাতীয়তাবাদি দলের মহাসচিব হতে চাই’। ’ওয়াস্তাকফেরুল্লাহ্‌, নাফরমানি কথাবার্তা এত রাইতে মানায় না, দিনের আলোতে বলতে হয়’, বলেই রহমান সাহেব ফোনটা রেখে দিলেন। মনে মনে ভাবলাম, শালা ঠিক আছে, আমারও দিন আইব, দেইখ্যা নিমু।

ভোর হতে রহমান সাহেব নিজেই ফোন করে জানতে চাইলেন এএনপির মহাসচিব হওয়ার গত রাতের খায়েশ এখনও আস্ত আছে কিনা। আমি আরও জোর গলায় নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করে এতে এএনপির লাভ গুলো বর্ণনা করলামঃ এএনপি একটা মেগা পার্টি এবং এর রয়েছে পপুলার সাপোর্ট। কিন্তূ দলটার এখন র্দুদিন, নিজদের ভেতর মারামারি ছাড়াও জনগণের সামনে দলটার ঈমান-আকিদা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। আমি মহাসচিব হয়ে প্রথমে হাটু গেড়ে জনগণের কাছে ক্ষমাচেয়ে নেব গত ১০ বছরের অন্যায় এবং অনাচারের জন্যে। দল হতে অভিযুক্ত এবং শাস্তি পাওয়া চোর এবং তদের সাংগ-পাংগদের ঝেটিয়ে বিদায় করব। নেত্রীর ছাওয়ালকে পার্টি হতে বহিস্কার করব, তাকে এবং তার ইয়ার-দোস্তদের আইনের হাতে তুলে দিয়ে দেশ হতে পারিবারিক জমিদারী প্রথা বন্ধ করার প্রস্তাব রাখব। ’আসল ছাত্রদল’ নামের সন্ত্রাষী দলকে বিলুপ্ত ঘোষনা করে তাদের লেখাপড়ায় ফিরে যেতে বলব। মন্ত্রী বাবর আলীকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়ার জন্যে রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করব। জামায়াতে ইসলামী নামের ’৭১এর ঘাতক দলকে তাৎক্ষনিক তালাক দিয়ে তার নেত্রীত্ত্বকে আইনের হাতে তুলে দেব যুদ্বাপরাধে বিচারের জন্যে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং মহাসচিব পদ সহ সব পদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করব, পর পর দুইবার দায়িত্ব পালন শেষে নেত্রীত্ত্বকে অবসরে পাঠাব। অবসরপ্রাপ্ত সেনা, শিক্ষক এবং আমলাদের দলে ঢুকার রাস্তা বন্ধ করে দেব। কোন নেতা এবং মন্ত্রীর নামে চুরি চামারির অভিযোগ উঠলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব এবং আইনী লড়াইয়ে নিরপরাধ প্রমানিত হলে ফুলের মালা দিয়ে বরন করে নেব। যারা মুখে ইসলাম আর বাস্তবে মদ, মেয়ামানুষ আর চুরি করার কাজে ব্যস্ত থাকবে তাদের পার্টি হতে ওয়ালাইকুম জানাব। এ সব কার্যকর করার পর শুরু হবে নতুন যাত্রা, ভাল মানুষের সন্ধানে চষে বেড়াব সমগ্র বাংলাদেশ।

’আরে মিয়া, এ সব করতে গেলে এএনপির সব সদস্যকে আপনার বিদায় করতে হইব, আর তা হইব বাকশালী ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়ন। আপনি কি আমার নেত্রীর পদটাও খাইবার চান?’ রহমান ভাই, এসব ভাংগা-গড়ার মধ্য দিয়েই জন্ম নিতে পারে খাটি একটা জাতীয়তাবাদি দল, যে দলের নেত্রীত্ত্বে বাংলাদেশ পা রাখবে নতুন পৃথিবীতে। যে দলের শাষন আপনাকে দেশ হতে পালাতে বাধ্য করবেনা, জন্ম দেবেনা নেত্রীর ছাওয়ালদের মত ম্লেচ্ছদের। মনে রাখবেন, নেত্রী হতে দল বড় এবং দল হতে দেশ'। ’লেকচার রাইখ্যা গঞ্জিকা সেবন করিতে থাকেন, অহন আমার ল্যা গুয়্যারডিয়া এয়ারপোর্টে যাওন লাগব যাত্রীর খোঁজে’। খট করে ফোনটা রেখে বিদায় নিলেন রহমান ভাই।

আসল অথবা নকল কোন জাতীয়তাবাদই বিদেশে পেটের ক্ষুধা নিবারন করবেনা, তাই ফোনটা রেখে আমিও বেরিয়ে পরলাম পেটের ধান্ধায়। আসল জাতীয়তাবাদ নিয়ে মধ্য রাতে রহমান সাহেবের নসিহত আপাতত বন্ধ করা গেছে ভেবে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন