প্রথম আলো ব্লগে ফারহান দাউদের ‘একজন বড়ভাইকে বাঁচাতে সাহায্য চাই‘ পোষ্ট এবং প্রাসংগিক মন্তব্যগুলো পড়ে একটা কিছু লেখার তাগাদা হতেই এ লেখা (http://prothom-aloblog.com/users/base/deathmetal/48)। পরিচিত যে কাউকে এমন অবস্থায় দেখলে কিছু একটা করতে মন চায়, এটাই মনুষ্য মনের সহজাত প্রবৃত্তি, বোধহয় মানুষ হিসাবে বেচে থাকার এটাই আমাদের অন্যতম সার্থকতা। লেখক উনার পরিচিত শাম্মা ভাইকে সাহায্যের জন্যে এ ফোরামে অনুরোধ জানিয়েছেন। ফারহান দাউদ, আপনি আপনার কর্ত্তব্য এবং দায়িত্ব পালন করেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে। এ আসরে আপনার প্রত্যাশা কতটা পূরন হবে সময়ই তা প্রমান করবে, তবে হতাশ হবেন্না, বুয়েট শুধু একটা নাম নয়, এ মস্ত বড় একটা প্রতিষ্ঠান যার শিকড় ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর সব প্রান্তে। ঢাকায় এমন সব বুয়েটিদের চিনি যারা চাইলে শুধু ২০ লাখ কেন, ২০ কোটিও সংগ্রহ করতে পারেন ২০ ঘন্টায়। নিশ্চয় কেউ না কেউ ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছেন এবং সামনে আরও অনেকে এগিয়ে আসবেন।
আমার এ লেখার উদ্দেশ্য শাম্মা ভাই অথবা উনার চিকিৎসার্থে দরকারী ২০ লাখ টাকা নিয়ে নয়। এ লেখা বরং ছিদ্দিক নামের একজন বাংলাদেশী ড্রাইভারকে নিয়ে। জ্ঞান হওয়া অবধি দেখছি ছিদ্দিক আমাদের গাড়ি চালায়। শিং মাছের মত পিছলা তার চরিত্র, একজন ড্রাইভার হিসাবে যতটা পাপাচার শোভনীয় তার অনেক নীচে নামতে সামন্যতম কুণ্ঠাবোধ করতনা সে। তেল চুরি, গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ নিয়ে ঘাপলাবাজী, নতুন ব্যাটারী ক্রয় দেখিয়ে পুরানো ব্যাটারী স্থাপন, সময় অসময় মদ্যপান এবং বেপরোয়া ড্রাইভ করে রাস্তায় ত্রাশ সৃষ্টি সবই ছিল তার নিত্যদিনের সাথী। ড্রাইভারী জীবনে গোটা দশেক বড় র্দুঘটনা ঘটিয়েছে সে এবং সাথে রয়েছে ৩টা মৃত্যু। চেষ্টা করেও তাকে বিদায় করা যায়নি কারণ বিকল্প হিসাবে যারা আসত তারা ছিদ্দিক ড্রাইভারের চাইতেও একধাপ এগিয়ে থাকত। এই ছিদ্দিক মিয়া একটা নির্মান প্রকল্পে ড্রাইভারের চাক্রী নিয়ে একদিন পাড়ি জমায় মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবীতে।
সেবার দেশে গিয়ে দেখা ছিদ্দিক মিয়ার সাথে, ছুটিতে বেড়াতে এসেছে। নিউ ইয়র্ক ফিরতে আমাকেও আবুধাবী বিমান বন্দরে ১৬ ঘন্টা কাটাতে হবে শুনে ছিদ্দিক মিয়ার চোখে মুখে শিহরন খেলে যায়। আমার আগেই ফিরে যাচ্ছে সে, ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার দিয়ে আবুধাবীতে পৌঁছে যোগাযোগের জন্যে হাতে পায়ে ধরল আমার। আমার কোন অসূবিধা ছিলনা, এয়ারপার্ট নেমেই তার দেয়া নাম্বারে ফোন করলাম। বাতাসে ভেসে উড়ে এল সে এবং উড়ন্ত চীলের মত ছো মেরে আমাকে নিয়ে গেল তার আস্তানায়। গর্বের সাথে পুরানো মনিবকে পরিচয় করিয়ে দিল সহকর্মী ড্রাইভারদের কাছে। বেশ ক’জন বাংলাদেশী ড্রাইভার ছোট্ট একটা রুমে পাখীর মত গাদাগাদি করে বাস করছে। সন্মান এবং শ্রদ্বার সবটুকু উজাড় করে সবাই মিলে আপ্যায়ন করল আমায়। অনেক কথা হল ড্রাইভারদের আসরে এবং কথার ফাঁকে বেড়িয়ে এল এই ছিদ্দিক ড্রাইভারকে কোম্পানীর শ্রেষ্ঠ ড্রাইভার হিসাবে গন্য করছে মালিক পক্ষ এবং বলতে গেলে বাংলাদেশী ড্রাইভার গ্রুপের সবাই অঘোষিত দলনেতা হিসাবে মেনে নিয়েছে তাকে।
এই সেই ছিদ্দিক ড্রাইভার বাংলাদেশে ড্রাইভিং সীটে বসলে যার রক্তে খেলে যায় যাত্রী নিয়ে হোলি খেলার নেশা, চোখে মুখে চিকমিক করে যার চুরি চামারির ধান্ধা। অথচ একই ছিদ্দিক আবুধাবীতে গিয়ে অর্জন করেছে মালিকের বিশ্বস্ততা এবং ড্রাইভার হিসাবে লাভ করেছে সহকর্মীদের শ্রদ্বা। তাহলে আসল ছিদ্দিক ড্রাইভারকে চিনতে কি আমাদের ভূল হয়েছিল? শাম্মা ভাইয়ের র্দুঘটনার মত বাংলাদেশের প্রায় সব র্দুঘটনায় কোন না কোন ভাবে ছিদ্দিক ড্রাইভারদের হাত থাকে, থাকে তাদের বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কলঙ্কিত অধ্যায়। ছিদ্দিক ড্রাইভার মানুষ হত্যা করে হাজির হয় আমাদের মত মনিবদের কাছে, আইনের ফাঁক ফোকর গলে তাদের উদ্বারের জন্যে আমরাও এগিয়ে যাই বিনা দ্বিধায়। এভাবেই চলছে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা, যার বলি হয়ে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে শত শত বাংলাদেশী। আবুধাবীতে এগুলো সম্ভব নয় বলেই হয়ত বাংলাদেশের বেপরোয়া ছিদ্দিক পরদেশে বনে যায় সভ্য ড্রাইভার। আইনের শাষন একটা দেশে শুধু মানুষকেই বদলে দেয়না, সাথে বদলে দেয় তার মনুষ্যত্ব, পরিবর্তন আনে তার অভ্যাসে। কেবল আইনের শাষন নিশ্চিত করা গেলেই হয়ত শাম্মা ভাইদের মত আরও হাজার হাজার বাংলাদেশীকে বাচানো যেত র্দুঘটনার করুন পরিনতি হতে। এক শাম্মা ভাইকে হয়ত সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে সূস্থ করে তোলা যাবে ঠিকই, কিন্তূ এ রকম শত শত শাম্মা ভাই প্রতিদিন শিকার হচ্ছে অপশাষন আর কুশাষনের দেশ বাংলাদেশে, যাদের সাহায্যের আবেদন ভার্চুয়াল পৃথিবীর দেয়াল টপকে এ আসরে পৌছার কোন উপায় নেই।