মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজ এবং পারিবারিক জীবনে কতটা অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা তৈরী করতে পারে সমকালীন মার্কিন সমাজ তার ভাল উদাহরন। এ দেশের সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম ঘটনাটা ঘটে গেল গতকাল। টেক্সাস অংগরাজ্যের ফোর্ট হুড শহরে মার্কিন সেনা বাহিনীর মনো চিকিৎসক মেজর নিদাল মালিক হাসান নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে তার ১২ সহকর্মীকে এবং আহত করেছে আরও ২০ জনকে। এ ধরনের পাইকারী হত্যা এ দেশে এটাই প্রথম নয়, বিনা কারণে র্যাম্বো ষ্টাইলে মানুষ হত্যা এক ধরনের রোমাঞ্চকর উপকথায় পরিনত হয়েছে এ দেশে। অকলোহামা সিটি বোমা হামলা, কলম্বাইন হাই ম্যসাকার, ভার্জিনায় টেক গণহত্যা, এ তালিকার কোন শেষ নেই। ঘরে, বাইরে, স্কুল, কলেজে অথবা চাকরীতে সমস্যা হলে হাতে বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পর, রাস্তায় অথবা শপিং মলে নির্বিচারে গুলিয়ে চালিয়ে শুইয়ে দাও ডজন খানেক পথচারী! মিডিয়া ঝাপিয়ে পরবে এমন সংবাদে, চারদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ শব্দে কেটে যাবে ক’টা দিন। জন হিংকলে নামের এক যুবক ’ট্যাক্সি ড্রাইভার’ ছবিটা দেখে পাগল হয়ে যায় হলিউডের উঠতি নায়িকা জডি ফষ্টারের প্রেমে। নায়িকা পর্য্যন্ত প্রেমবানী পৌঁছানোর অভিনব পথ আবিস্কার করে এই হিংকলে, প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে হবে! হিংকলের গুলি মারতে ব্যর্থ হয় প্রেসিডেন্ট রিগ্যানকে, কিন্তূ জন হিংকলের প্রেম নিবেদন জায়গামত পৌঁছে যায় বিদ্যুৎ গতিতে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মালিক হাসানের ঘটনা নিয়মিত ঘটনা হিসাবে নিলে হয়ত কোন কথা ছিলনা। কিন্তূ তার নামটাই হয়েছে যত সমস্যা, মালিক হাসান! প্যালেষ্টাইনী অভিবাসীদের গর্ভে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম এবং উচ্চতর শিক্ষা শেষে যোগ দিয়েছিল সেনাবাহিনীতে। নিকট ভবিষতে ইরাক যাওয়ার প্রস্তূতি নিচ্ছিল এই মনো চিকিৎসক। খবর বেরুচ্ছে ইরাক যাওয়ায় সায় ছিলনা তার এবং আগাগোড়া বিরোধীতা করে আসছিল মার্কিনীদের ইরাক এবং আফগান অভিযানের। ফোর্ট হুড হত্যাকান্ডকে রাজনৈতিক এবং মানবিক কারণ দেখিয়ে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা হবে মুসলিম বিশ্বে, অনেকে বাহাবা দিবে মালিক হাসানের সাহসিকতায়, সন্ত্রাষবাদী দলগুলো তাকে বেহেস্তের চাবি ধরিয়ে দিতেও পিছুপা হবেনা হয়ত। কিন্তূ এ ধরনের হত্যাকান্ড কতটা সহায়তা করল মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের? তার এই বিনা উস্কানীর আক্রমনেই কি মার্কিন সরকার পূনঃবিবেচনা করবে তাদের ইরাক-আফগান পলিসি? এর কোনটাই হবেনা, বরং তা এ দেশের সরকার এবং সাধারণ মানুষের মনে মুসলমানদের নিয়ে নতুন করে বপন করবে অবিশ্বাষের বীজ। ফলাও করে ঘোষনা না আসলেও হাসান মালিকের কারণে মার্কিন সেনাবাহিনীতে মুসলমান নিয়োগ অলিখিতভাবে বন্ধ হয়ে যাবে, চাক্রীর বাজারে মুসলমানদের ঠেলে দেয়া হবে অন্ধকারে। এ হত্যাকান্ড প্যালেষ্টাইনীদের স্বাধীনতা লাভে কতটা ভূমিকা রাখল সময়ই তা প্রমান করবে, কিন্তূ প্যালেষ্টাইনীদের ন্যায্য দাবীর প্রতি এ দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থনে যে ধ্বস নামবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন জনগণের মনোভাবে আদৌ কি কিছু আসে যায় বিশ্ব রাজনীতির? আমরা পছন্দ করি আর না করি, মার্কিনীরা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক এবং আমাদের মত মুসলিম দেশগুলোর ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে হাসান মালিকের মত মুসলমানদের আচরনে।