২০৫৯ সাল! জ্ঞান না হারালেও সালটা ভো ভো করতে থাকল গোলান্দাজের মগজে। এমনটা কি করে সম্ভব কিছুতেই মেলাতে পারলনা সে। গতকালই অনেক নেতার মাসিক মাসোহারা বাসায় পৌঁছে দিয়ে এল, অথচ এক রাতের মধ্যেই ৫০ বছর হাওয়া! কোথাও কোন ঘাপলা হচ্ছে, হয়ত বিএনপির ষড়যন্ত্র, ভাবল গোলান্দাজ। টাকার কথাটা মনে হতে ভেতরটা হায় হায় করে উঠল তার, দেশী বিদেশী ব্যাংক মিলিয়ে ৩২০ কোটি! এত বছর পর ব্যাংক কি ফিরিয়ে দেবে তার যক্ষের ধন? ভাবতেই ঘামতে শুরু করল সে। স্ত্রী জেরিন আর তার আগের স্বামীর দুই সন্তান আবুল হাবুলদের কথা মনে করে কেন জানি এতটুকু দুঃখ বোধ হলনা গোলান্দাজের, টাকা পাগল এই তিন আদম তার জীবনে বিভীষিকা বৈ অন্য কিছু আনতে পারেনি। মনে মনে হিসাব কষতে শুরু করল গোলান্দাজ, নতুন করে জীবন শুরু করবে সে।
রত্মাবাঈ ভিল্লাপাল্লাইকে দেখে রক্তের দাপাদাপিটা আরও বেড়ে গেল। এত সংক্ষিপ্ত পোশাক আর এতটা হাই হীলের জুতা পরা মহিলা আগে কখনো দেখেছে বলে মনে করতে পারলনা সে। থ হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে।
- ভদ্রমহোদয়গন, এ যাত্রায় কনফারেনস্ রুমে যেতে হবে আমাদের, ডক্টর রামগোপাল ভিল্লাপাল্লাই অপেক্ষা করছেন সেখানটায়। আওয়াজ তো নয় যেন সেতারের মূর্ছনা, গোলান্দাজের কাছে এমনটাই মনে হল রত্মাবাঈয়ের গলা। একে অপরের দিকে তাকাল সবাই, একটা শব্দও বের হলনা কারও গলা দিয়ে। বোবার মত রত্মাবাঈয়ের পিছু নিল সবাই।
৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতাওয়ালা টেকো মাথার ডঃ রামগোপালকে দেখে এতটুকু ইমপ্রেশড্ হলনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বাঘা নেতাদের কেউ। গোলান্দাজের বুঝতে অসূবিধা হলনা এ নিশ্চয় আর্ন্তজাতিক স্ক্যাম। মৃদু হেসে সবাইকে বসার আমন্ত্রন জানাল ডঃ রামগোপাল।
- জেন্টেলম্যান, আমি রামগোপাল ভিল্লাপাল্লাই, ভিল্লাপাল্লাই রিসার্চ & প্রটেকশন সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের প্রতিষ্ঠানে। আমি জানি আপনাদের সবার মনে হাজারও প্রশ্ন, কিন্তূ সবগুলোর উত্তরের জন্যে আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় নেই, তাই সবার জন্যে জেনারেল ব্রীফিং দিচ্ছি। আশাকরি মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। একটু বিরতি নিয়ে যেই শুরু করতে যাবেন অমনি চীৎকার করে উঠলেন চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন।
- ’কোন অধিকার বলে স্বাধীনতার সূর্য্য সেনাদের এভাবে আটকে রেখেছেন জনাব বিল্লাপ্লিলাই না শুয়রপিল্লাই’? রাগে কথা বলতে অসূবিধা হল মেয়রের। ‘তত্ত্বাবধায়ক নামক ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি আমাদের আটকে রাখার, বিদেশী হয়ে আপনারা এমন সাহষ কোত্থেকে পেলেন’? ক্ষোভে ফেটে পরলেন মহিউদ্দিন।
- ’মহাশয়গন, আপনাদের রাগ আমরা বুঝতে পারি, নিজ নিজ ভাগ্যলিপির সবটুকু জানতে পারলে হয়ত কমে আসবে আপনাদের ক্ষোভ। আমি যা বলতে যাচ্ছি তা হজম করার শক্তি কার কতটুকু অবিশিষ্ট থাকবে তার উপর নির্ভর করবে আপনাদের ভবিষৎ। সুতরাং উচ্চবাচ্য না করে ধৈর্য্য ধরে শুনে যান আমার কথা।’ নড়েচড়ে বসলেন ডঃ রামগোপাল। ‘যে রাজনীতি নিয়ে আপনাদের এত হম্ভিতম্ভি তা আজ হতে ৪৬ বছর আগেই কবর রচিত হয়েছে। ২০১৩ সালে আপনাদের দল এবং নেত্রী ক্ষমতা হারায় এএনপির কাছে। কিন্তূ আপনারা কেউ মেনে নিতে পারেন্নি এ পরাজয়, ফলশ্রুতিতে দেশে শুরু হয় সীমাহীন নৈরাজ্য। আপনাদের প্রতিপক্ষও ছেড়ে কথা বলার দল ছিলনা, বস্তূত ক্ষমতা দখলের জন্যে বাংলাদেশে শুরু হয় গৃহযুদ্ব। এ যুদ্ব চলে ৫ বছর। এ ফাঁকে পৃথিবীতে ঘটে যায় অনেক ঘটনা যা বাংলাদেশের জন্যে বয়ে আনে সীমাহীন ধ্বংস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেলের ভান্ডার ফুরিয়ে যায় বিনা নোটিশে, এবং সে সব দেশ হতে বাংলাদেশীদের ঝেটিয়ে বিদায় করা হয় অনেকটা পশুর মত। শিল্পোন্নত দেশগুলো ইসলামী জঙ্গীবাদের সাথে যুদ্বে জড়িয়ে যায় পৃথিবীর দেশে দেশে। দলীয় স্বার্থে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে জংগীদের অভয়ারন্যে পরিনত করে, যার ফলশ্রুতিতে ইউরোপ আমেরিকা সহ পৃথিবীর সব দেশ হতে বাংলাদেশীদের ফেরৎ পাঠানো হয় স্বল্প নোটিশে। দেশটাকে একঘরে বানিয়ে পরিত্যাক্ত রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা দিতে বাধ্যহয় জাতিসংঘ। বন্ধ হয়ে যায় বহিঃবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সব ধরনের যোগাযোগ। প্রথম ধাক্কাটা আসে জ্বালানি এবং খাদ্য ভান্ডারে। ইতিমধ্যে ফুরিয়া আসে দেশটার মজুদকৃত প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। জ্বালানীর জন্যে নির্বিচারে ব্যবহার শুরু হয় গাছপালার, মানুষ হুমড়ি খেয়ে নিধন শুরু করে দেয় বন জংগল। দেশে এ মুহুর্তে গাছপালা বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই, আপনাদের সুন্দর বন এখন ইতিহাস মাত্র। ভদ্রমহোদয়গন, আপনাদের সদয় অবগতির জন্যে জানাচ্ছি এ মুহুর্তে রাস্তার তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা এ দেশের গড় তাপমাত্রার চাইতে ৫ ডিগ্রী বেশী। হয়ত শুনে হতাশ হবেন বাংলাদেশের লোক সংখা এখন ৩৩ কোটি। ভৌগলিক অর্থে বাংলাদেশ একটা দেশ হলেও রাজনৈতিক ভাবে দেশটা এখন একাধিক অঞ্চলে বিভক্ত। এই যেমন আমারা এখন বসে আছি ‘এস‘ অঞ্চলে যার হেড কোয়ার্টার অতীতের ধানমন্ডি। গোটা গুলসান এলাকা এখন ‘জেড‘ অঞ্চলের আওতাধীন যার বর্তমান নাম ককোসান। এবার আসি আপনাদের ভাগ্য নিয়ে। আপনাদের নেত্রীই আপনাদের পূনঃজন্মের ব্যবস্থা করে গেছেন। এন্টি এইজং সিরোম এবং ডিএনএ ক্লোনিং প্রযুক্তির সহায়তায় আপনাদের ফ্রোজেন করে রাখা হয়েছে গত তিন দশক ধরে। এ মুহুর্তে কিছু রক্ষনাবেক্ষন প্রয়োজন, তাই এন্টিডোট দিয়ে জীবন্ত করা হয়েছে আপনাদের। দু’টো পছন্দ আছে আপনাদের সামনে; হয় আজ হতে মৃত্যু পর্য্যন্ত বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন ৩৩ কোটি মানুষের সাথে, অথবা নতুন করে হীমাগারে চলে যাবেন নেত্রীর সাথে পূনঃজন্মের সম্ভাবনা নিয়ে। বলে রাখা ভাল, আপনাদের নেত্রীকেও একই কায়দায় রাজস্থানে মরুভূমির নীচে কোন এক ল্যাবে লালন পালন করা হচ্ছে। নেত্রী বাংলাদেশকে বিশ্বাষ করতে পারেন্নি তাই এই বিদেশী ব্যবস্থা। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন এত নেতা থাকতে নেত্রী আপনাদের কেন পছন্দ করলেন? এর উত্তর খুবই সহজ, নেত্রীর দৃষ্টিতে আপনারাই ছিলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ লুটেরা। আপনাদের ব্যাংক ব্যালেন্স যা ছিল তা সবই এখন নেত্রীর দখলে যা ভোগ করছে তার বংশধরেরা। হয়ত শুনে আনন্দিত হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সব চাইতে উচু সিয়ার্স দালানের নাম এখন অভেয়মায়ের দালান, যা আপনার নেত্রীর পুত্রবধূর নামে নামকরন করা হয়েছে। এর মালিকও আপনার নেত্রী। আগামী ৩০ বছর পর বাংলাদেশে ফিরে আসার খায়েশ প্রকাশ করে উইল করে গেছেন আপনাদের মহান নেত্রী। সে উইলে আপনাদের কথাও উল্লেখ আছে, কারণ আরেক জনমে লুটপাটের জন্যে আপনাদের মত বিশ্বস্ত লুটেরাদের প্রয়োজন হবে নেত্রীর।’ একসাথে এতগুলো কথা বলে হাপিয়ে উঠলেন ডঃ ভিল্লাপাল্লাই। সবশেষে একটা খবর জানিয়ে বিদায় নিতে চাই; শুধু আপনাদের নেত্রীই নন, আপনাদের প্রতিপক্ষ নেত্রীকেও একই কায়দায় লালন করা হচ্ছে করাচীর কোন এক ল্যাবে। ও হ্যা, মালয়েশিয়ার টুইন টাওয়ারের নাম এখন রহমান টাওয়ার, এবং এই নামকরন হয়েছে নেত্রীর স্বামী এবং সন্তানদের শেষ নামে।
গোলান্দাজের মনে হল এ মুহুর্তে মহাশুন্যের কোন এক কক্ষপথে ভাসছে সে। ৩২০ কোটির সবটাই নেত্রীর পকেটে, চুরির সূযোগ করে দিয়ে তাকে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র! স্তব্দ হয়ে হিসাব কসতে শুরু করল সে। আগামীতে নেত্রীর সাথেই ফিরে আসার সিদ্বান্ত নিল মনে মনে, সাথে বেশ কিছু হিসাব ফয়সালা করার তাগাদা আনুভব করল গোলান্দাজ।