মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বে বন্ধু খুঁজছে তার আফগান মিশনের সহযাত্রী হওয়ার জন্যে। প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষনা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আমাগী বছরের শুরুতে আফগানিস্থানে আরও ৪০ হাজার সৈন্য পাঠাবে এবং মিশন সম্পূর্ণ করে ২০১১ সালের মধ্যে সে দেশ হতে সব সৈন্য ফিরিয়ে আনবে। বাংলাদেশ এ যাত্রায় মার্কিনীদের আফগান মিশনে যোগ দিলে কতটা লাভবান হতে পারে এ দিকটা মূল্যায়নের দাবী রাখে। ইরাকের কুয়েত আগ্রাসনের সময় মার্কিনী নেত্রীত্বে যৌথ বাহিনীতে বাংলাদেশ সৈন্য পাঠিয়েছিল প্রতিকী অংশ হিসাবে, যার ফসল বাংলাদেশ এখনও ঘরে তুলছে কুয়েত হতে হ্রাসকৃত এবং ডেফার্ড পেমেন্টে ক্রুড ওয়েল আমদানীর মাধ্যমে। মার্কিনীদের সমসাময়িক ইরাক আগ্রাসন পৃথিবীতে যতটা নিন্দা কুড়িয়েছে একই কথা বলা যাবেনা তাদের আফগান অভিযান নিয়ে। পৃথিবীর অনেক দেশ বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়ায় আফগানী তালেবান এবং দেশটার গলার কাটা আল-কায়েদা গেরিলাদের উৎখাতে মার্কিন অভিযানে রয়েছে ব্যাপক সরকারী এবং জনসমর্থন। বিশ্ব এখন নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দায় ডুবে আছে, যার ছোয়া আমাদের মত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দেশেও লাগছে ব্যাপক ভাবে। মন্দার কারণে আমাদের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ পোশাক শিল্পে বিরাজ করছে চরম অনিশ্চয়তা, একের পর এক বন্ধ হচ্ছে কারখানা, চাকরী হারাচ্ছে শত শত শ্রমিক যার ফলশ্রুতিতে এ খাতে জন্ম নিচ্ছে অরাজকতা এবং নৈরাজ্য। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে আশংকাজনক ভাবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এ ভাবে আরও ক’বছর দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের মত সল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেকটাই নির্ভর করবে পশ্চিমা দুনিয়ার দয়া দাক্ষিনার উপর। প্রতিদ্বন্দিতামূলক বাজার অর্থনীতিতে টিকে থাকতে চাই শক্তিশালী রাজনৈতিক কমিটমেন্ট, যা বাংলাদেশে একেবারেই অনুপূস্থিত। এমন একটা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের বন্ধু সন্ধানে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আফগান মিশনে প্রতিকী অংশগ্রহন। এ ধরনের অংশগ্রহন আফগানিস্থানে মার্কিনীদের সামরিক শক্তি কতটা বৃদ্বি করবে তা বলাই বাহুল্য, কিন্তূ তাতে এ যুদ্বে মুসলিম দুনিয়ায় মার্কিনীদের ইমেজ সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব করবে তাতে সন্দেহ নেই। অংশগ্রহন হতে হবে কেবলই প্রতীকি এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার ঘোষিত টাইমফ্রেমের জন্যে। এ মিশনে অংশগ্রহনের ফলে বাংলাদেশ কিভাবে লাভবান হতে পারবে তা নির্নয় করতে আশাকরি পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পরবেনা।
ইসলামী ভাতৃত্ব, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, বিশ্ব আগ্রাসনবাদ, নির্যাতিত মানুষের জয় ... এ ধরনের বড় বড় বুলি আওড়িয়ে আমার এ প্রস্তাবকে ধরাশায়ী করা খুব সহজ হবে, এবং তা শুনতেও বেশ মানবীয় শুনাবে। বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবীর দেশসমূহ এখন বিভিন্ন শিবিরে বিভক্ত হয়ে নিজদের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই করছে, তাতে অনেক সময় ঝলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে মানবতা এবং ভাল-মন্দ নিয়ে আমাদের ট্রাডিশনাল বুঝাপড়া। হয়ত মার্কিনীদের সাথে আফগান যুদ্বে যোগ দিলে কিছুদিনের জন্যে হলেও আমাদের সড়ে আসতে হবে পুরাতন মূল্যবোধ হতে, কিন্তূ তাতে আমাদের লাভ বৈ ক্ষতির কিছু দেখছিনা। বাংলায় একটা কথা আছে, ‘আপনি বাচলে বাপের নাম‘!