আসুন এমন একটা আবস্থার কথা কল্পনা করি; সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় নিম্নে বর্ণিত মানুষগুলোকে দুনিয়া হতে তুলে নেয়া হলঃ
১) শেখ পরিবারঃ জনাবা শেখ হাসিনা, জনাবা শেখ রেহানা, জনাব জয় ওয়াজেদ
২) রহমান পরিবারঃ জনাবা খালেদা জিয়া, জনাব তারেক জিয়া, জনাব কুকু জিয়া
৩) এরশাদ পরিবারঃ জনাব হু মো ইরশাদ এবং তার দুই বিবি
৪) জামায়েত পরিবারঃ জনাব গোলাম আজম, মাওলানা নিজামী, জনাব মুজাহেদী, দেলোয়ার হোসেন সাইয়েদী
এমন একটা বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে দল হিসাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষৎ কি হতে পারে আসুন তার একটা অবৈজ্ঞানিক ছবি আঁকি।
শেখ পরিবার ছাড়া আওয়ামী লীগ তার বর্তমান শক্তি হতে ছিটকে পরতে হয়ত একটু সময় নেবে। দলটির উত্থান বাংলাদেশের কাদামাটি হতে, সূবিধাবাদী চক্রের বাইরেও এর আছে সাধারণ মানুষের পপুলার সাপোর্ট। হয়ত জনসমর্থের কারণে দলটি শেখ পরিবার বিহীন ২/১ বছর টিকে থাকবে বড় ধরনের ভাংগন ছাড়াই। কিন্তূ আলটিমেটলি দলে ভাংগন আসবে। ক্ষমতার দ্বন্ধে আমু, তোয়াফেল, রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সহ পুরানো যোদ্বাদের সাথে নতুন প্রজন্মের নানক, উকিলদের শুরু হবে অস্থিত্বের যুদ্ব। সাথে যোগ হবে আর্ন্ত পুরানো এবং আর্ন্ত নতুনদের স্ব স্ব অবস্থান ধরে রাখার কৌশলগত লড়াই। তবে সবকিছুই শেষ হবে ব্রাকেট বন্দী নতুন নতুন আওয়ামী লীগ উত্থানের মাধ্যমে। বিএনপি এ বিচারে অনেকটা সূবিধাজনক অবস্থানে থাকবে নিজদের কাঠামোগত বৈচিত্রতার কারণে। দলটির জন্ম উর্দিওয়ালাদের ঔরশে এবং এর রাজনীতির মূখ্য উদ্দেশ্যই জাতীয় সম্পদ লুটপাট। মওদুদ এবং হুদাদের মত মেগালুটেরা ব্যক্তিত্বরা এক ঘাটে বেশীদিন জল খাবে এমনটা আশাকরা হবে দূরাশা মাত্র। স্বভাবতই বিএনপি ভাংগবে এবং এ ভাংগন হবে খুবই দ্রুত এবং জনসাধারণও তা নেমে নেবে বিনা প্রশ্নে। এ ক্ষেত্রে হোসেন মোহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির অবস্থান সবার উপরে। এরশাদ হোসেন এবং তার বিবিদের তিরোধানের পর জাতীয় পার্টি রাতারাতি পরিনত হবে যাত্রা পার্টিতে। দলটির অস্থিত্ব খুঁজতে আমাদের সহায়তা নিতে হবে গুগলের মত সার্চ এঞ্জিনের। এবার আসা যাক জাতীয়ভাবে ঘৃনিত জামায়েতই ইসলামের দিকে। ত্বাত্তিক ভাবে দলটির সাথে এর অন্যতম প্রধান নেতা গোলাম আজমের এখন কোন সম্পর্ক নেই। এই নেতার প্রস্থানে সাংগঠনিকভাবে দলটার কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা বিবেচনার দাবী রাখে। একই কথা বলা যাবে নিজামী, মুজাহেদী ও সায়েদীদের বেলায়। এই নেতাদের বিদায় জামায়েতই ইসলামের সাংগঠনিক ভিত্তিতে আদৌ কোন ছাপ পরবে কিনা তা যাচাই করতে গেলেই বেরিয়ে আসবে বাকী দলগুলো হতে এই দলটির সাংগঠনিক পার্থক্য।
প্রসংগটা টানলাম অন্য একটা কারণে। এবারের বিজয় দিবস পালনের মূল থীম ছিল যুদ্বাপরাধীদের বিচার। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও তাদের ক্ষমতাকালীন সময়ে এ বিচার সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ যাত্রায় বহুল প্রতীক্ষিত এবং আলোচিত এ বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। নির্বাচনী ওয়াদা পূরেনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তার ভাবমূর্তি উজ্বল করতে পারবে সন্দেহ নেই। কিন্তূ এই ভাবমূর্তিকে পূঁজি করে আওয়ামী লীগ কি পারবে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে? আমাদের নষ্ট রাজনীতিতে আওয়ামী বিএনপি হচ্ছে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ, সোজা বাংলায় লুটপাট নিয়ে যুদ্বরত দুই বৈরী প্রতিপক্ষ। এই বৈরীতায় আওয়ামী লীগের আন্যতম প্রধান অস্ত্র তার মুক্তিযুদ্বের সংশ্লিষ্টতা এবং যুদ্বাপরাধী বিচারের নির্বাচনী ওয়াদা। গেল নির্বাচনে এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগ নতুন প্রজন্মের অনেক ভোটারদের নিজদের শিবিরে টেনে নিশ্চিত করেছে তাদের ল্যান্ডশ্লাইড বিজয়। যুদ্বাপরাধী ও রাজাকার ইস্যুবিহীন ২০১৩ সালের নির্বাচনে কোন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে ভোট চাইবে তা নিয়ে দলটির উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। জামাতে ইসলামীর সবাই যুদ্বাপরাধী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে সর্বক্ষন ষড়যন্ত্র করছে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। দেশের মেইনষ্ট্রীম পলিটিক্সে জামায়েত বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও দলটির বিরুদ্বে অন্য দুটি মেগা দলের মত পরিবারতন্ত্র অথবা One Man Show জাতীয় কোন অভিযোগ নেই। দলগুলির সাম্প্রতিক কাউনসিল এবং তাতে নেতা/নেত্রী নির্বাচন প্রক্রিয়াই তার ভাল প্রমান। আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী দলগুলো যদি জামায়েত ইসলামকে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুদ্বাপরাধী মুক্ত করতে সক্ষম হয়, তাতে ক্ষতির বদলে বরং লাভবান হবে এ দলটি। দলটি মুক্ত হবে নিজামী, মুজাহীদি এবং সায়েদীদের মত ঘৃনিত যুদ্বাপরাধী হতে, তাতে দলটির সাংগঠনিক শক্তির খুব একটা হেরফের হবে মনে হয়না, সাথে বাড়বে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের সমান অধিকার এবং গ্রহনযোগ্যতার দাবি। বিচারত্তোর নির্বাচনী মাঠে জামায়েতকে ঘায়েল করতে চাইলে প্রয়োজন হবে ইস্যুর, এ ইস্যু হতে পারে সততা, সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা এবং আন্তদলীয় গণতন্ত্র। এ বিচারে জামায়েতই ইসলামের অবস্থান অন্য দলগুলোর চাইতে অনেক স্বচ্ছ। তাই আমার দৃষ্টিতে যুদ্বাপরাধী বিচার হবে আওয়ামী রাজনীতির কবর খোড়ার শামিল। মূলার মত যুদ্বাপরাধী বিচারকে জাতির সামনে ঝুলিয়ে আওয়ামী লীগ সামনের নির্বাচনেও সক্ষম হত নির্বাচনী দৌড়ে জয়ী হতে। একটা জিনিস আমাদের ভূলে গেলে চলবেনা রাজনীতিতে ক্ষমতাই দলগুলির চালিকাশক্তি। রাজনীতিতে মৌলবাদী দলগুলোর অবস্থান পরিস্কার না করে জামায়েতই ইসলামকে যুদ্বাপরাধী মুক্ত করা হবে আত্মহত্যার শামিল, কারণ এর মাধ্যমে রাজনীতিতে সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে একটি ধর্মীয় উন্মাদ দলকে। আবার গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে চাইলে রাজনীতি হতে মৌলবাদ নিষিদ্ব করা হবে অবৈধ। প্রশ্ন উঠতে পারে তা হলে নিজামী মুজাহেদীদের যুদ্বাপরাধের কি হবে? আমার দৃষ্টিতে এর সহজ সমাধান হতে পারে ভাড়াটে খুনী দিয়ে এদের কপালে একটা করে বুলেট ঢুকিয়ে দেয়া। তাতে সাপও মরবে আর লাঠিও থাকবে অক্ষত। পাশাপাশি অন্যকোন গ্রহনযোগ্য ইস্যু আবিস্কার পর্য্যন্ত আওয়ামী লীগও পারবে যুদ্বাপরাধী বিচার সংক্রান্ত মূলা ঝুলিয়ে অনন্তকাল ধরে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে। অনৈতিক? হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন, বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে কোন জিনিষটা নৈতিক?