’দুনিয়া কাপানো’ খবরগুলো পড়ে মাতৃভূমির জন্যে ইদানিং বেশ গর্ববোধ করছি। তবে যে গতিতে খবরগুলো বেরুচ্ছে তার সাথে তাল মেলাতে অনেকের মত আমারও বেশ কষ্ট হচ্ছে তা অকপটে স্বীকার করছি। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আমাদের মুক্তিযুদ্বের ’মহান’ রাজাকার মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সাংগ পাংগরা সদম্ভে ঘোষনা দিলেন, ‘আমরা যাখন স্বাধীনতা এনেছি তা রক্ষা করব এই আমরাই‘। প্রথমে ভেবেছিলাম মাওলানা বোধহয় পাকিস্তানের কথা বলছেন, পাকিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষার মহান দায়িত্ব উনাদের এ ব্যাপারে কারও কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে পাকিস্তান রক্ষার এই সুলাইমানী হুমকি শুনে প্রথমে শিউড়ে উঠেছিলাম, ভাবলাম শেখ রহমান আর বাংলা ভাইদের প্রেত্মতারা কি একহয়ে জেহাদ ঘোষনা দিল বাংলাদেশী নাখোদাদের বিরুদ্বে! কিন্তূ আসল খবর শুনে ভড়কে গেলাম, মাওলানা সাহেব বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছেন! উনারা স্বাধীনতা এনেছেন এবং তা রক্ষাও করবেন উনারাই! হাতের কাছে ঈদুর মারার বিষ থাকলে তা পান করেই হয়ত সাংগ করতাম ভবলীলা! ভাগ্যিস ছিলনা!
উপরের খবরটা হজম হওয়ার আগেই আরও দু’টি খবর আমরা যারা বিদেশে বাসকরি তাদের জন্যে দেশ নিয়ে গর্ব করার উপকরন দিয়ে গেল; এক, শেখ হাসিনা তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্বে কে বা কারা বেনামে অভিযোগ করেছে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার হাতরিয়ে নেয়ার। আর যায় কোথা! অভিযুক্তদের মুখ হতে কিছু বের হওয়ার আগেই রাস্তায় নেমে পরল বিপ্লবী জনতা, তাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রীর তনয় ঘুষ নেবে এ যে রাক্ষস রাজ্যের খোক্কস্দের গল্প! এ গল্প শুধু বাংলাদেশের অপর দুই ফুলকুমার তারেক আর কুকুদের, ডালিমকুমার জয়কে এসব হতে মুক্ত রাখতে একদিকে কাজ করছে তার মুসলমানী ঈমান, পাশাপাশি পাহাড়া দিচ্ছে বিবির ইহুদী বেদবাক্য। এই দুইয়ের সমন্নয়ে জাতীর দৌহিত্র জনাব জয় ঈমান আকিদায় ভর করে যাপন করছেন সাচ্চা জীবন, হোক তা মার্কিন মুলুকে। ৫ মিলিয়ন কেন ৫ ডলার হাতড়াতেও ঈমান আকিদায় আঘাত পান আমাদের ডালিমকুমার। সন্দেহ নেই এ ছিল শুধুই প্রচারনা! এ প্রচারনার ফলোআপ যা আশাকরা গিয়েছিল তাই হল, প্রথমে উচ্চ পর্য্যায় হতে হুমকি, তারপর এ্যকশান। তারেক-মামুন-ফালু গংগদের ঔরশে জন্ম নেয়া আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিককে ডিজিটাল কায়দায় স্টোন ওয়াশ করা হল বেশ ঘটা করে। এ্যকশানে যারা অংশ নিয়েছিল তাদের ছবি দেখা গেল পত্রিকার প্রথম পাতায়। সন্দেহ নেই দলীয় পদ ভাগ বটোয়ারার সময় এই ছবিগুলো কাজ দেবে ডেডিকেশনের ক্রেডেনশিয়াল হিসাবে, যেমনটা দিয়েছিল আউলা ঝাউলা বাউলাদের তত্ত্বাবধায়ক আমলে নেত্রীর উকিল এবং চিকিৎসকদের বেলায়। একজনকে ডিফেন্ড করতে ১০০ উকিল, কে সামনে থাকবে আর কে আদালতে জ্বালাময়ী ভাষন দেবে এ নিয়ে হাতাহাতি। যাদেরই নিবেদনের মাত্রাটা বেশী ছিল তারাই পেল এমপিত্ব, মন্ত্রীত্ব, উপদেষ্টাত্ব। ডালিমকুমার জয় যেদিন এদেশের ভাগ্যদেবতা হয়ে জন্মভূমিকে উদ্বার করতে এগিয়ে আসবেন সেদিন অনেকেই আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক পেটানোতে নিজ নিজ ছবি নিয়ে হাজির হবেন মন্ত্রীত্ব আর এমপিত্বের আশায়। এ প্রসংগে ভাবতে গেলে কেন জানিনা বিখ্যাত গলফার টাইগার উডের চেহারাটা সামনে চলে আসে। মধ্যরাতে কি কারণে নিজ আংগিনায় গাড়িতে হাংগামা করলেন কেউ জানলনা। অথচ প্রতিবেশীর একটা ৯১১ কলে তাসের ঘরের মত ধসে গেল এই ’মহান’ খেলোয়াড়ের সাম্রাজ্য। চরিত্রের এমন সব দিক উন্মোচিত হল যার মধ্যে রয়েছে দেহপশারীনির সাথে যৌনাচার, তাও আবার একাধিক! ভাবছি আমাদের ’প্রবাদ’ পুরুষ জয় ওয়াজেদের জন্যে ৫ মিলিয়নের অভিযোগ না আবার ৯১১ কলে পরিনত হয়। কথায় বলে ভ্রমরে ভ্রমর চেনে! এককালের জ্বালানী উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান সাহেবের ভাল করে জানা থাকার কথা এ খাতের ঝিগঝাগ। নিশ্চয় তিনি এবং তেনার গুরু তারেক গং একই পন্থায় কামিয়ে নিয়েছেন মিলিয়ন। কষ্ট লাগে নিজের হক অন্যকে মারতে দেখলে। রহমান সাহেবের জন্যে একটা উপদেশ থাকবে, সবুরে মেওয়া ফলে! ধৈর্য্য ধরুন জনাব, আপনাদেরও সময় আসবে, এবং আল্লাহ সবুরকারীদের পছন্দ করেন।
সর্বশেষ যে খবরটা আমাদের আন্দেলিত করছে তা হল দেশীয় ইতিহাসের ’সর্বশ্রেষ্ঠ’ সরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব বাবর আলীকে নিয়ে। আলী বাবা ৪০ চোরের দল বিএনপি সব দুঃখ কষ্ট, মান অভিমান দূরে ঠেলে বুকে তুলে নিয়েছে জাতীয়তাবাদের এই সূর্য্য সন্তানকে। ২৫শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানী, ২৫ কোটি ঘুষ নিয়ে খুনীকে বিদেশে পাচার সহ যাবতীয় ’পবিত্র’ কাজের পুরস্কার হিসাবে বিএনপি তুলে নিয়েছে তার বহিস্কারাদেশ। রাশিয়ায় থাকতে একটা জোক শুনেছিলাম; দুই রাশান, একজন ধার্মিক এবং অন্যজন বদ। একজন সারাক্ষন ধর্মকর্ম করে সময় কাটায় আর বাকি জন ব্যস্ত থাকে ভদকা, মেয়ে মানুষ নিয়ে। তো কেয়ামতের পর দুই জনই অপেক্ষা করছে শেষ বিচারের। ধার্মিক ব্যক্তি হাটছে ঈশ্বরের রাজত্বে। হঠাৎ এক জায়গায় দেখা পেল সেই বদ রাশানটার, তার সামনে বিশাল এক পিপা ভদকা এবং অনিত্য সুন্দরী উলংগ এক মহিলা। সে দৌড়ে গেল ঈশ্বরের কাছে, ‘এ কেমন বিচার প্রভূ, ইহকালেও লোকটা মদ মেয়ে মানুষ উপভোগ করল, আর এ জগতেও তুমি তাকে পুরস্কৃত করলে এ গুলো দিয়ে?’। ঈশ্বর মুচকি হেসে বল্লেন, ‘হে বাচা, ঐ যে ভদকা ভর্তি পিপাটা দেখছ তা হতে উঠিয়ে খাওয়ার পাত্রটার তলা আমি কেড়ে নিয়েছি, আর ঐ সুন্দরীর যত ফাক ফোকর তাও সীল করে রেখেছি‘। তো আমাদের রাজনীতিতে বাবর আলীর পুনঃবাসনের আগে তার বিভিন্ন ফাক ফোকর সীল করা হবে কিনা আশাকরি মর্জিনা বিবিরা তা নিশ্চিত করবেন!
না, আপাতত আর কোন উপলক্ষ নেই বিদেশে বসে দেশ নিয়ে গর্ব করার। তবে প্রতিদিনই অপেক্ষায় থাকি। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে কখন কি ঘটে বলা তো যায়না! ভাল থাকবেন সবাই।