মৃত্যু পরোয়ানা জারী হওয়ায় শেখ মুজিব হত্যাকান্ডে দন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামীর ফাঁসি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাদের শেষ এবং একমাত্র ভরসা রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা। এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের সিদ্বান্ত কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। আইনী এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিজস্ব গতিতে এগুলে আমরা ধরে নিতে পারি এ মাসের মধ্যেই ফাঁসি পর্বের বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
ক্যাপিটেল পানিশমেন্ট অনেক দেশেই নিষিদ্ব এবং এ ধরনের শাস্তির বিরুদ্বে বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থাও বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ফোরামে সক্রিয়। অবশ্য এদের কাউকেই উল্লেখিত ৫ আসামীর ফাঁসি দন্ডাদেশের বিরুদ্বে কিছু বলতে শোনা যায়নি। হয়ত সময় ঘনিয়ে এলে এ নিয়ে কথা উঠবে। বয়সের ভারে নূয্য, রোগাক্রান্ত, মৃত্যু পথযাত্রী এই ৫ খুনীকে ক্লিমেনসী দিয়ে জীবনের শেষদিন পর্য্যন্ত জেলখানায় বাচিয়ে রাখলে বিচারপ্রার্থীরা সূবিচার হতে কতটা বঞ্চিত হবে এ নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে। তবে আমার কাছে এ মামলার আসামীদের ফাঁসি কার্য্যকর জরুরী অন্য কতগুলো কারণে। আসছি সে প্রসংগে।
ধরে নিলাম রাষ্ট্রের দয়া এবং রাজনৈতিক সিদ্বান্তে আসামীদের মৃত্যুদন্ড রহিত করে যাবতজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হল। একটা কথা মানতে হবে, শেখ মুজিব হত্যার বিচার প্রক্রিয়া দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে অংগাঙ্গিভাবে জড়িত। বিচার প্রক্রিয়া এ পর্য্যায়ে আসতে দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও সদিচ্ছার চাইতে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই কাজ করেছে বেশী। আজকের আওয়ামী সরকার চার বছর পর অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে সরকার গঠন করবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একমাত্র বিকল্প ৪ দলীয় জোট, এবং এ জোট ’৭৫এর হত্যাকান্ডকে কোন দৃষ্টিতে বিচার করে তা জাতির কাছে গোপনীয় কিছু নয়। যে হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টের রায়ে আসামীরা ফাঁসিতে ঝুলাতে যাচ্ছে, ৪ দলীয় সরকার ক্ষমতায় এলে একই কোর্ট একই কলমে ভিন্ন রায় লিখবেনা তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? আমাদের বিচার ব্যবস্থা সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতই রাজনৈতিক দলসমূহের সেবাদাস, সরকার বদলের সাথে বদলায় দলীয় বিচারকদের আধিপত্য এবং স্বভাবতই বদলায় বিচারের রায়। রাষ্ট্রপতির অনুকম্পায় বেচে যাওয়া মৃত্যু পথযাত্রী আসামীরা অলৌকিক গতিতে সূস্থ হয়ে রাজনীতির গুটি হিসাবে ব্যবহ্রত হবেনা এরও কোন নিশ্চয়তা নেই। তত্ত্বাবধায়ক আমলে দুটি শীর্ষ রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা একই কায়দায় কথিত অসূখের কারণে মৃত্যুকে প্রায় ছুই ছুই করছিলেন। সরকার বদলের সাথে এই নেতারা সুপারম্যান কায়দায় রাজনীতিতে ফিরে এসে নতুন করে প্রমান করেছেন রাজনীতিতে সততা বলতে কোন কিছু অবশিষ্ট নেই। সংগত কারণে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের শারীরিক অবস্থাও বিশ্বাষ করার কোন ভিত্তি দেখছিনা।
দ্বিতীয়ত, আমাদের চলমান রাজনীতিতে কতগুলো অধ্যায়ের সমাপ্তি হওয়া একান্ত জরুরী। যুদ্বাপরাধী বিচার সহ শেখ মুজিব হত্যা বিচার এরমধ্যে অন্যতম। একটা দলের রাজনৈতিক কর্মসূচী বিশেষ কতগুলো বিচারকে ঘিরে আবর্তিত হতে পারেনা। রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য হওয়া চাই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা সহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরনের কর্মসূচী। কিন্তূ দুখঃজনক হলেও সত্য, আমাদের রাজনীতিতে বিশেষ একটা দল টিকে আছে বিচার কর্মসূচীর মূলা ঝুলিয়ে। দলটির বিচার সংক্রান্ত মানবিক আবেদন নতুন প্রজন্মকে চুম্বকের মত কাছে টানছে, যা অত্যন্ত কৌশলে আড়াল করছে তার অর্থনৈতিক কর্মসূচীর অসাড়তা। শেখ মুজিব হত্যার কাংখিত বিচার দলটিকে তার হিডেন কর্মসূচী জনগণের সামনে উন্মোচিত করতে বাধ্য করবে। আমাদের জানা একান্ত জরুরী রাজনীতিবিদ্রা আমাদের জন্যে এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে কি কর্মসূচী নিয়ে এগুচ্ছেন। বিচার বিচার মাতম আর যাই হোক দেশের র্দুনীতি, বেকারত্ব এবং শিক্ষার মত সমস্যাগুলোর সমাধান দেবেনা।
তৃতীয়ত, ৫ আসামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জিয়া এবং এরশাদের মত সেনাছাউনির ভন্ড জেনারেলদের জন্যে পরিস্কার ম্যসাজে পাঠানো যাবে, রক্তের নদীতে সাঁতার আর ইয়েস নো মার্কা ভন্ডামী করে লুটপাটের দুয়ার উন্মোচন করলে শাস্তি একটাই, মৃত্যু!
অপরাধ এবং শাস্তি, একটা সূস্থ গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সূস্থতার মাপকাঠি। এই সূস্থতাকে রাজনীতিবিদরা বিকৃত করে থাকেন নিজদের রাজনেতিক ও আর্থিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে, এ জন্যে সাধারণ জনগণকে দায়ী করার কোন হেতু নেই। আশাকরি শেখ মুজিব হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসি এ সূস্থতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি হিসাবে কাজ করবে।