ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ব করার কথা উঠেছে। সরকারের আইনমন্ত্রী এর উপর একটা আনুষ্ঠানিক ঘোষনাও দিয়ে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। স্বভাবতই ধরে নিতে পারি সরকার এ রকম একটা সিদ্বান্ত বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সংসদে সরকারী দলের যে সংখ্যাগরিষ্টতা আছে তা দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ব সংক্রান্ত আইন পাশ করায় তেমন কোন অসূবিধা হওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগ তার কথায় ঠিক থাকলে আমরা ধরে নিতে পারি নিকট ভবিষতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়েত-ই-ইসলামীর মত ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী দলগুলোর পদাচারনা বিলীন হতে যাচ্ছে।
রাজনীতিতে ধর্মের হস্তক্ষেপ কতটা আত্মঘাতী হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরন আজকের পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। দেশ দুটির রাজনৈতিক কাঠামোতে ধর্মীয় প্রভাব এখন প্রশ্নাতীত। আফগানিস্তানে এ প্রভাব দূর করে বস্তূবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে দেশটার এককালের প্রতিবেশী সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূঁজিবাদী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সমসাময়িক মার্কিন প্রচেষ্টাও খুব একটা সূবিধা করতে পারছে বলে মনে হয়না। প্রতিবেশী পাকিস্তানে আত্মঘাতী শিয়া সুন্নী লড়াই এবং সাথে তালেবান আল-কায়েদার ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে দিতে ক্যাটালিষ্ট হিসাবে কাজ করছে এর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও সমরিক শাষন। বাংলাদেশ এ ধরনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব হতে এখনও অনেকটা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছে। যদিও মূল ধারার চরিত্রহীন রাজনীতিকে পূঁজি করে এ দেশে মৌলবাদী রাজনীতি ধীরে ধীরে নিজের গোড়া শক্ত করছে তা বিশ্বাষ করার যথেষ্ট কারণ রয়ে গেছে। স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সমসাময়িক শক্তি গড়ে উঠছে মূলত এর ধর্মীয় আবেদনের উপর, দেশকে অখন্ড পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়ার ৭১’এর চেতানার উপর নয়। একসাথে ৬০ জেলায় বোমা ফাটিয়ে নিজদের শক্তি কিছুটা হলেও প্রকাশ করতে পেরেছে জেএমবির মত জংগী গুষ্টি। যদিও দেশের চলমান রাজনীতিতে জেএমবির প্রাতিষ্ঠানিক কোন অবকাঠামো নেই, কিন্তূ একথা কারও অজানা নয় কোন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছে এই বিষাক্ত সাপ।
প্রাসংগিক ভাবে একটা প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, খুব আগ বাড়িয়ে আমরা কি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ব করতে যাচ্ছি? বাংলাদেশের মৌলবাদী দলগুলোর জংগীবাদি কানেকশন জনগণের সামনে তেমন জোড়ালোভাবে তুলে ধরা হয়নি। পাশাপাশি জামাতীদের মত রাজনৈতিক দল এখনও মূল ধারার একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের নিয়ামক শক্তি হিসাবে কাজ করছে। এ মুহুর্তে এমন একটা সিদ্বান্ত অনেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সরকারী কৌঁশল হিসাবেই দেখবে। বাংলায় একটা কথা আছে, বিষাক্ত সাপকে চোখের আড়াল করতে নেই। জামাতীরা বিষাক্ত সাপ, তাদের এ মুহুর্তে রাজনীতি হতে বিদায় দিলে তারা আশ্রয় নিতে পারে বনে জংগলে। জনগণের চোখ হতে এদের অর্ন্তধান দলটিকে জেএমবির মত জংগী সংগঠনের সাথে হাত মেলাতে উৎসাহিত করবে। আমাদের চরিত্রহীন প্রশাষন দিয়ে এ ধরনের এম্পিফ্লাইড জংগীবাদ দমন কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।
আমার মতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ব করার আগে সরকারকে প্রয়োজনীয় কতগুলো কাজ করতে হবেঃ
- ’৭১এর অপরাধের সাথে ধর্মীয় দলগুলোর সম্পৃক্ততা জাতির সামনে প্রমান সহ তুলে ধরা
- যুদ্বাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে দলগুলোকে যতটা সম্ভব নেত্রীত্বহীন করা (কাজটা সহজ হবেনা)
- মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধীরে ধীরে মূল শিক্ষার সাথে একাত্মীকরন করা
- জেএমবির মত আত্মস্বীকৃত দলগুলোকে র্নিমূল করা
- মূলধারার রাজনীতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
সরকারের সামনে আরও ৪ বছর সময় আছে, এ সময়ের মধ্যে উল্লখিত কাজগুলো সমাধা করা অসম্ভব কিছু নয়। তবে সরকারের এ কাজে বিএনপির মত পপুলার একটা দলকে বাইরে রাখলে কিছুতেই তা সফলতার মুখ দেখবেনা। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ব করার কাজে দেশের মূল ধারার সব রাজনৈতিক শক্তিকে এক করতে হবে, শুধু সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোড়ে এমনটা করতে গেলে আওয়ামী লীগের জন্যে তা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে।