সূত্র খবরঃ গোপালগঞ্জে আজ বৃহস্পতিবার লাশ দাফন নিয়ে সংঘর্ষে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ৩০ জন আহত হয়েছে। সকালে সদর উপজেলার বনগ্রামে এ সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত ১০ জনকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাবাসী ও আহত ব্যক্তিরা জানান, গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক এনজাল হক ৫ জানুয়ারি মারা যান। ওই দিন দুপুরে লাশ দাফন করার সময় করপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বরকত জাহান সিকদার দাবি করেন, মৃত ব্যক্তির কাছে ৭০ হাজার টাকা পান। ইউপি চেয়ারম্যান এ সময় কবর ভেঙে ফেলতে চাইলে উপস্থিত লোকজন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এ সময় ওই চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনার জের ধরে চেয়ারম্যানের ছেলে ইনাম সিকদার আজ সকালে মৃতের ভাই জাহিদ মজুমদারকে মারধর করেন। মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যানের লোকজন ও জাহিদ মজুমদারের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়।
সূত্রঃ http://prothom-alo.com/detail/news/33206
তথ্য প্রবাহের মহাসমুদ্রে এ ধরনের খবর কোথাও কোন ঢেউ তুলে না আজকাল। কোথাকার কোন চেয়ারম্যান টাকার জন্যে মৃত দেনাদারের কবর ভাংগতে চাইছে, এ আর এমন কি খবর! গোটা দেশজুড়েই তো এ সব চলছে! অষ্টম শ্রেনীতে পড়ি তখন। কে একজন খবরটা দিয়ে গেল, রেললাইনের পাশে মস্তকবিহীন একটা লাশ পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পরল খবরটা। যে যেখানে ছিল সবকিছু ফেলে পাগলের মত ছুটে গেল রেললাইনের দিকে। স্কুল হতে আমরাও পালালাম। দূর দূরান্তের গ্রাম হতে পায়ে হেটে, নৌকায় চড়ে, এমনকি পাল্কী করে পিপিলিকার মত ছুটে এল হাজার হাজার মানুষ। এ এলাকায় এমন লৌমহর্ষক ঘটনা শেষ কবে ঘটেছে কেউ তা মনে করতে পারলনা। এক কথায় গঞ্জের স্বাভাবিক জীবন স্তব্দ হয়ে গেল ঘটনার আকস্মীকতায়। কেউ বল্ল জমিজমা নিয়ে গোলমালের ফসল, কেউ বল্ল প্রেমের পরিনতি, কেউ কেউ খুঁজে পেল পুলিশের হাত। জল্পনা কল্পনার ঝড় বয়ে গেল চায়ের দোকানে, হাট-বাজারে, স্কুল কলেজে, এমনকি কৃষক কৃষানীর কৃষিকাজে। সহমর্মিতার তুফান বয়ে গেল লাশের জন্যে, রাজ্যের ঘৃনা প্রকাশ পেল অদেখা খুনীর জন্যে। বলতে গেলে বছর জুড়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে মুখে ফিরেছিল ঘটনার বর্ননা।
সময়ের চাকায় চড়ে সে একই গঞ্জ এখন শিল্প আর বানিজ্যে টাইটম্বুর একটা জেলা শহর। ১৯৯৭ সালের কোন এক বসন্তের সন্ধ্যা। কাজের ঝামেলা শেষে বাসায় বসে টিভি দেখছি। কবির নামের ছেলেটা অনেকদিন ধরে আমাদের বাসায় কাজ করছে, সেই দিয়ে গেল খবরটা। আমাদের বাসার মূল ফটকের সামনে স্থানীয় কমিশনারের ক্যাডার বাহিনী প্রতিপক্ষের একজনকে জবাই করে মস্তক আলাদা করে রেখে গেছে। চারদিকের সবাই আতংকিত হয়ে গেল আরও সংঘর্ষের ভয়ে। কিছুই হলনা, একটা ভ্যানে করে লাশটাকে থানায় নিয়ে গেল পুলিশ। কারও মুখ হতে সহমর্মিতার কোন শব্দ বের হলনা, এ নিয়ে খুব একটা জল্পনা কল্পনাও হলনা। শহরের মানুষ ডাল-ভাতের মত খুব সহজ ভাবে মেনে নিল এই নির্মম হত্যাকান্ড। অনেকে আবার জানতেই পারলনা কি ঘটেছিল আমাদের বাসার সামনে।
আমার এ লেখাটার কোন উপলক্ষ নেই, কারন আমিও অনেকের মত একজন। একটা কেন, ১০টা খুনের খবর পড়তেও অন্যদের মত দুই মিনিটের বেশী সময় ব্যায় করিনা আমি। একজ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ৭০ হাজার টাকা দেনা রেখে পরলোকগমন করেছেন, সে টাকার দাবিতে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মৃতের কবর ভাংগতে গেছনে! আমি মানুষ হলে এ খবর আমাকে আন্দেলিত করতে বাধ্য করত, যেমনটা করেছিল সেই স্কুল জীবনে। কিন্তূ আমি বোধহয় আর মানুষ নেই। বেচে থাকার লড়াই করতে গিয়ে নিজের মনুষত্ব্যকে কবে যে নির্বাসিত করেছি আসলেই তা টের পাইনি। ধিক আমাকে!!